সরকারি দিবাযত্ন কেন্দ্র বেহাল, শিশুরা অযত্নে
যে উদ্দেশ্য নিয়ে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, তা পূরণ হচ্ছে না। মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের অধীনে দিবাযত্ন কেন্দ্র রয়েছে ১১৯টি।
ভেতরে ঢুকতেই বোটকা গন্ধ। বিছানার চাদর, কম্বল, ঘরের পর্দাসহ সব কাপড়ই ময়লা। বালিশগুলো তেল চটচটে। করোনাকালে আগতদের জন্য হাত ধোয়া বা জীবাণুনাশকের কোনো ব্যবস্থা নেই।
ঢাকায় সচিবালয়ের ভেতরে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে গিয়ে ১০ জানুয়ারি দেখা গেল এই চিত্র। সেখানে কর্মরত ব্যক্তিরা জানান, মাসে একবার বিছানার চাদর ও বালিশের কভার ধোয়া হয়। এই একবার ধোয়ার জন্যই অর্থ বরাদ্দ রয়েছে।
সচিবালয়ের এই শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র পরিচালনা করছে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর। আরও কয়েকটি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র ঘুরে এবং দায়িত্বরত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে নানান ঘাটতির কথা। কোথাও শিশুরা দুর্ব্যবহারের শিকার হয়, কোথাও শিক্ষিকা ও স্বাস্থ্যশিক্ষিকা নেই। শিশুদের বয়স আলাদা হলেও সবার জন্য খাবার একই।
অথচ দিবাযত্ন কেন্দ্রগুলোতে শিশুদের সম্পূর্ণ মাতৃস্নেহে লালন–পালন করার কথা। তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য শিক্ষা, খেলাধুলা, বিনোদন, সুষম খাবার ও প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা থাকার কথা। কাগজে-কলমে দিবাযত্ন কেন্দ্র পরিষ্কার রাখা, শিশুদের পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস গড়ে তোলাসহ আরও বিভিন্ন দায়দায়িত্বের কথা বলা আছে। তবে বাস্তবতা ভিন্ন।
সমীক্ষা প্রতিবেদন বলছে, তখন সেবাগ্রহণকারী ২২০ জন কর্মজীবী নারী এবং অতীতে সেবা নেওয়া ৫৫ জন নারী উত্তরদাতার মধ্যে ৫৬ শতাংশ শিক্ষার মান এবং ৫৫ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছিলেন। শিশুরা জানিয়েছিল, ঘরে বন্দী থাকা, বয়সে একটু বড় শিশুদের হাতে মারধরের শিকার হওয়া, টেলিভিশন নষ্ট থাকা, কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও শিক্ষকদের হাতে মার খাওয়া এবং একই ধরনের খাবারের কারণে তাদের খারাপ লাগে। ১১টি কেন্দ্রের অধিকাংশ শিশুর প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতি দুর্বল ছিল।
নিম্ন ও মধ্যম আয়ের কর্মজীবী নারীদের আর্থিক ক্ষমতায়নের জন্য ১৯৯১ সাল থেকে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর দিবাযত্ন কেন্দ্র পরিচালনা করছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, রাজস্ব খাত ও প্রকল্প থেকে অর্থায়নের মাধ্যমে মোট ১১৯টি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে। রাজস্ব খাতে থাকা ৪৩টি দিবাযত্ন কেন্দ্রের আসনসংখ্যা ২ হাজার ৮৩০।
শিশু একাডেমির মাধ্যমে জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) অর্থায়নে বেসরকারি সংগঠন ফুলকি ৪০টি কেন্দ্র পরিচালনা করে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর মধ্যে ১৫টি কেন্দ্র চা–বাগানমালিকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকিগুলো বন্ধ হয়ে গেছে।
চারপাশ স্যাঁতসেঁতে
সচিবালয়ের শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রটি চালু হয় ১৯৯৭ সালে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সচিবালয়ের ১০ নম্বর দোতলা ভবনে কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন। সেখানে শিশু ভর্তি ও মাসিক ফি ৫০০ টাকা করে। কর্মদিবসে সকাল সাড়ে আটটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত শিশুরা এই কেন্দ্রে থাকতে পারে। ছয় মাস থেকে ছয় বছর বয়সী শিশুদের সেখানে রাখা যায়। এতে আসনসংখ্যা ৫০। নতুন করে কাউকে ভর্তি করাতে আসন খালি পাওয়া কঠিন। তবে অনেকে ভর্তি করাতে দ্বিধা বোধ করেন।
শিশুটিকে কেন এভাবে ধমক দেওয়া হলো জানতে চাইলে আবদুর রহিম বলেন, ‘এখানে এক দিন থাকলে বুঝতে পারবেন, কেমন লাগে।’
আইন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত এক নারী কর্মকর্তা প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, তাঁর আড়াই বছর বয়সী মেয়েকে দিবাযত্ন কেন্দ্রে রাখার জন্য কয়েক দফা গিয়েছিলেন। তবে ভরসা পাননি। তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রটিতে দিনের বেলায়ই মশা ঘোরে। বিছানার চাদর ময়লা, চারপাশ স্যাঁতসেঁতে। খেলনা তেমন কিছু নেই। শিশুর মানসিক বিকাশেরও কোনো ব্যবস্থা নেই।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এই দিবাযত্ন কেন্দ্রে দুপুরের খাবার এবং সকাল ও বিকেলের নাশতায় প্রতি শিশুর জন্য প্রতিদিন বরাদ্দ পড়ছে ৮০ টাকার মতো। বয়স অনুযায়ী ভাগ না করে সব শিশুর জন্য অধিদপ্তর থেকে একই খাবারের পদ ঠিক করে দেওয়া আছে। সকালে দেওয়া হয় দুধ-সুজি, দুধ-সেমাই অথবা দুধ-পাউরুটি। দুপুরে ভাতের সঙ্গে তিন দিন মাছ অথবা মাংসের তরকারি থাকে। এক দিন ডিম। এ চার দিন আরও থাকে ডাল ও শাকসবজি। এক দিন থাকে সবজি–খিচুড়ি। প্রতিদিনই লেবু থাকে।
এই কেন্দ্রে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক প্রতিদিন দুই ঘণ্টার জন্য দায়িত্ব পালন করেন। একজন স্বাস্থ্যশিক্ষিকা রয়েছেন। কেন্দ্রটির কিছু কিছু জায়গায় টাইলস লাগিয়ে, নতুন দেয়াল করে ভবনটিকে উপযোগী করার চেষ্টা করা হয়েছে। এর দিবাযত্ন কর্মকর্তা আসলাম জমাদার প্রথম আলোকে বলেন, কেন্দ্রটিতে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা আছে। এর মধ্যে যতটুকু সম্ভব শিশুদের ভালো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
শিক্ষিকা ছাড়াই চলছে কেন্দ্র
মহিলা অধিদপ্তরের প্রকল্পের অধীনে প্রতিষ্ঠিত শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রগুলোর একটি রয়েছে কুষ্টিয়ায়। প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, কুষ্টিয়া তৌহিদী হাসান ১২ জানুয়ারি শহরের মজমপুর এলাকায় একটি চারতলা ভবনের তিনতলায় প্রতিষ্ঠিত শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রটিতে নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে যখন কথা বলছিলেন, তখন ভেতরে একটি শিশু দৌড়াদৌড়ি করে চিৎকার করতে থাকে। নিরাপত্তাকর্মী আবদুর রহিম তখন ওই শিশুকে ধমক দিয়ে থামানোর চেষ্টা করেন। শিশুটিকে কেন এভাবে ধমক দেওয়া হলো জানতে চাইলে আবদুর রহিম বলেন, ‘এখানে এক দিন থাকলে বুঝতে পারবেন, কেমন লাগে।’
আইন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত এক নারী কর্মকর্তা প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, তাঁর আড়াই বছর বয়সী মেয়েকে দিবাযত্ন কেন্দ্রে রাখার জন্য কয়েক দফা গিয়েছিলেন। তবে ভরসা পাননি। তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রটিতে দিনের বেলায়ই মশা ঘোরে। বিছানার চাদর ময়লা, চারপাশ স্যাঁতসেঁতে। খেলনা তেমন কিছু নেই। শিশুর মানসিক বিকাশেরও কোনো ব্যবস্থা নেই।
কুষ্টিয়ার দিবাযত্ন কেন্দ্রটি যাত্রা শুরু করে ২০০৪ সালে। এটি রাজস্ব খাতে যায় ২০১১ সালে। এখানে ভর্তি ও মাসিক ফি ১০০ টাকা করে। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের কর্মজীবী মায়েরা সেখানে সন্তান রাখেন। আসনসংখ্যা ৫০। তবে ২০ জনের মতো শিশু ভর্তি থাকে। এতে প্লাস্টিকের ঘোড়া, দোলনাসহ বিভিন্ন খেলনা আছে। শিশুদের ঘুমানোর জন্য চৌকির ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরোনো টেলিভিশনটি নানান কসরত করে চালু করতে হয়। সিসিটিভি ক্যামেরা নেই।
কেন্দ্রটিতে কর্মরত ব্যক্তিরা জানান, কেন্দ্রে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষিকা প্রেষণে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় রয়েছেন। স্বাস্থ্যশিক্ষিকার পদটি বহুদিন ধরে খালি। পাচক ও নিরাপত্তাকর্মীর দুটি করে পদের বিপরীতে রয়েছেন একজন করে। শুরু থেকেই পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেই। আয়া আছেন মাত্র একজন।
১৫ বছর ধরে এই দিবাযত্ন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মীনা রানী সাহা বলেন, ‘সময় পেলে আমি নিজেই শিশুদের নিয়ে বসি। বিভিন্ন বিষয় শেখাই। গল্প করি।’ তিনি দাবি করেন, জনবল সমস্যার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানো হয়েছে।
ঢাকার আদাবরে মহিলা অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালিত একটি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে গিয়ে ঢোকা যায়নি। দায়িত্বরত ব্যক্তিরা সেখানে ঢুকতে লিখিত অনুমতি লাগবে বলে জানান। যদিও সচিবালয় ও কুষ্টিয়ার কেন্দ্রে লিখিত অনুমতি লাগেনি।
ঢাকার ধানমন্ডির একটি দিবাযত্ন কেন্দ্রের দিবাযত্ন কর্মকর্তা আলেয়া সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, করোনাকালের আগে যখন শিশুরা কেন্দ্রে ছিল, তখন তাদের প্রতিদিন গোসল করানো হতো। সপ্তাহে একবার বিছানার চাদর পাল্টানো হতো। সেখানে শিশুদের খাবার ও খেলনা বয়স অনুযায়ী আলাদা। তিনি বলেন, বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে চার হাজার বর্গফুটের এই কেন্দ্রে শিশুদের মানসিক বিকাশের দিকটি বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এই কেন্দ্র প্রকল্পের অধীনে পরিচালিত হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দাবি করছেন, রাজস্ব খাতের তুলনায় প্রকল্পের অধীনে পরিচালিত কেন্দ্রগুলো একটু ভালো অবস্থায় ছিল। তবে করোনা শুরুর পর কেন্দ্রগুলোতে শিশুদের রাখা হচ্ছে না, তবে অন্য কার্যক্রম চলছে।
অবশ্য প্রকল্প শেষ হলে দিবাযত্ন কেন্দ্রগুলো বেহাল হয়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের প্রকল্পের অধীনে প্রতিষ্ঠিত ১১টি কেন্দ্রের চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা প্রকল্প শেষ হয়ে যাওয়ার পর বেতন না পাওয়ায় ২০১৮ সালে আন্দোলনে গিয়েছিলেন। বর্তমানে রাজস্ব খাতে পরিচালিত ৪৩টি কেন্দ্রের মধ্যে এই ১১টি কেন্দ্রও আছে। এসব কেন্দ্রে শিশুদের খাবার ও অন্যান্য ব্যয়ের অর্থ রাজস্ব খাত থেকে জোগান দেওয়া হয়। তবে দিবাযত্ন কর্মকর্তা, শিক্ষিকা ও স্বাস্থ্যশিক্ষিকার পদগুলো এখনো রাজস্ব খাতে যায়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি কেন্দ্রের দিবাযত্ন কর্মকর্তা (ডে-কেয়ার অফিসার) প্রথম আলোকে জানান, তাঁদের বেতন বকেয়া সাত মাস ধরে। এর আগে এক দফায় দুই বছর বেতন বকেয়া ছিল। এই কর্মকর্তা বলেন, তাঁদের চাকরি স্থায়ী হবে কি না, সেই অনিশ্চয়তা রয়েছে। এর সঙ্গে বেতনও পাচ্ছেন না। সব মিলিয়ে নিজেরাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।
সমীক্ষায় উঠে এসেছে অসন্তুষ্টি
শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের সেবা নিয়ে মায়েরা সন্তুষ্ট কি না, তা উঠে এসেছিল পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) ২০১৮ সালের এক সমীক্ষায়। মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের ‘নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির কর্মজীবী মহিলাদের শিশুদের জন্য দিবাযত্ন কেন্দ্র কর্মসূচি’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে যে ১১টি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়, তার উদ্দেশ্য কতটুকু অর্জিত হয়েছে, জানতে সমীক্ষাটি করা হয়েছিল।
সমীক্ষা প্রতিবেদন বলছে, তখন সেবাগ্রহণকারী ২২০ জন কর্মজীবী নারী এবং অতীতে সেবা নেওয়া ৫৫ জন নারী উত্তরদাতার মধ্যে ৫৬ শতাংশ শিক্ষার মান এবং ৫৫ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছিলেন। শিশুরা জানিয়েছিল, ঘরে বন্দী থাকা, বয়সে একটু বড় শিশুদের হাতে মারধরের শিকার হওয়া, টেলিভিশন নষ্ট থাকা, কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও শিক্ষকদের হাতে মার খাওয়া এবং একই ধরনের খাবারের কারণে তাদের খারাপ লাগে। ১১টি কেন্দ্রের অধিকাংশ শিশুর প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতি দুর্বল ছিল।
সমীক্ষায় শিশুদের বাজার থেকে কেনা প্রক্রিয়াজাত জুস (ফলের রস) না দেওয়া, জরুরি ভিত্তিতে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো, সুষ্ঠু কর্মী ব্যবস্থাপনা, কেন্দ্রগুলোর জন্য নগদ অর্থের ব্যবস্থা রাখা, কর্মীদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। যদিও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফরিদা পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, পরিচালনাসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে সরকার আইন করেছে। আগামী মাসের মধ্যে এ আইনের বিধিমালা চূড়ান্ত হবে। বিধিমালা ধরে কেন্দ্রগুলোর কী অবস্থা, তা যাচাই করার কাজটি সহজ হবে। তিনি বলেন, সরকারও চায় কেন্দ্র ও কেন্দ্রের শিশুরা ভালো থাকুক।
উল্লেখ্য, সরকার শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র আইন করেছে ২০২১ সালে।
বেসরকারিতে চড়া ব্যয়
রাজধানীতে বেসরকারিভাবে অনেক দিবাযত্ন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। তবে সেগুলোতে ব্যয় অনেক বেশি। মধ্যম মানের বেসরকারি কেন্দ্রে ভর্তিতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা এবং মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। কর্মজীবী মায়েরা বাধ্য হয়েই সেখানে সন্তানদের ভর্তি করান।
কোথাও কোথাও ভালো মানের শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র নেই। এ কারণে মায়েরা সমস্যায় পড়ছেন। যেমন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা বিবি করিমুন্নেছা যখন ঢাকার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) কর্মরত ছিলেন, তখন তাঁর দুই সন্তানকে পরিকল্পনা কমিশনের ভেতরে মহিলা অধিদপ্তর পরিচালিত দিবাযত্ন কেন্দ্রে রাখতেন। তাঁকে চট্টগ্রামে বদলি করার পর কোনো দিবাযত্ন কেন্দ্রে বাচ্চাদের রাখার সুযোগ পাননি। নতুন করে তাঁর বদলি হয়েছে খুলনা বিভাগে।
বিবি করিমুন্নেছা প্রথম আলোকে বলেন, সরকারিভাবে এ ধরনের কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো ও কেন্দ্রের পরিবেশের দিকে নজর দেওয়া দরকার।
নেতিবাচক অভিজ্ঞতা বিকাশে ‘বাধা দেবে’
শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের শিশু সুরক্ষা ও শিশু অধিকারবিষয়ক কার্যক্রমের পরিচালক আবদুল্লা আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, শিশুর ছয় বছর বয়স পর্যন্ত সময়টি গুরুত্বপূর্ণ। আনুষ্ঠানিকভাবে শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষায় প্রস্তুত করা, শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ, যোগাযোগ দক্ষতা, মানুষকে চেনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো বিষয়গুলোতে ভিতটা তৈরি হয় এ বয়সে। অভিভাবক বা শিশুদের কেউ বিকল্প সেবা দিলে ওই সেবাদানকারীদেরও এই দক্ষতাগুলো থাকতে হবে। তিনি বলেন, এই বয়সে শিশুর নেতিবাচক অভিজ্ঞতা হলে তা মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করবে। সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু, দরিদ্র শিশু, পিছিয়ে পড়া শিশু অর্থাৎ সব ধরনের শিশুদের মাথায় রাখতে হবে।