সম্প্রসারিত টিকাদান চলবে ৬ দিন
দেশব্যাপী করোনার টিকাদান সম্প্রসারিত আকারে শুরু হচ্ছে আজ শনিবার। ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডগুলোতে প্রথমবারের মতো এই টিকা দেওয়া হবে। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে টিকা দেওয়ার মধ্য দিয়ে ছয় দিনের বিশেষ কর্মসূচি শেষ হবে বৃহস্পতিবার। পাশাপাশি করোনা টিকার অন্য কেন্দ্রগুলোতে আগের মতোই টিকাদান চলতে থাকবে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মহাখালীর বিসিপিএস মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এই কর্মসূচির বিস্তারিত তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, দেশের ৪ হাজার ৬০০ ইউনিয়ন, পৌরসভাগুলোর ১ হাজার ৫৪টি ওয়ার্ড এবং ১২টি সিটি করপোরেশনের ৪৩৩টি ওয়ার্ডে এই টিকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া আলাদা ব্যবস্থাপনায় রোহিঙ্গা শিবিরে টিকা দেওয়া হবে। ৬ দিনে ৩২ লাখের মতো মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, এই বিশেষ কর্মসূচিতে ২৫ বছর বা এর বেশি বয়সীদের টিকা দেওয়া হবে। তবে পঞ্চাশোর্ধ্ব বেশি বয়সী মানুষ, নারী ও শারীরিক প্রতিবন্ধীরা অগ্রাধিকারভিত্তিতে টিকা পাবেন। দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে এই সময় টিকা দেওয়া হবে। দুর্গম এলাকার উদাহরণ হিসেবে ভোলা জেলার মনপুরার কথা বলা হয়।
কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসচিব ডা. শামসুল হক বলেন, টিকাদান শুরু হবে সকাল ৯টায়, চলবে বেলা ৩টা পর্যন্ত। জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে এনে এই টিকা নেওয়া যাবে।
কোন তারিখে কোথায় টিকা
নিয়মিত সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) সঙ্গে সমন্বয় করে গ্রামপর্যায়ে করোনার টিকা দেওয়া হবে। এর বিস্তারিত বর্ণনা করার সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, আজ সারা দেশের সব ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন এলাকায় টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে। আজ নিয়মিত ইপিআইয়ের কারণে ইউনিয়নের যেসব কেন্দ্রে করোনার টিকা দেওয়া সম্ভব হবে না, সেসব কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে ৮ ও ৯ আগস্ট। একইভাবে পৌরসভার যেসব ওয়ার্ডে আজ টিকা দেওয়া সম্ভব হবে না, সেখানে ৮ ও ৯ আগস্ট টিকা দেওয়া হবে। এই দুই দিন দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে টিকাদান অব্যাহত থাকবে।
১২টি সিটি করপোরেশনের কেন্দ্রগুলোতে টিকা দেওয়া হবে আজ, আগামীকাল ও আগামী পরশু। কোনো কেন্দ্রে বাড়তি টিকা থাকলে তা পরের দিনও দেওয়া হবে।
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে টিকা দেওয়া হবে ১০, ১১ ও ১২ আগস্ট। ৫৫ বছর বা তার বেশি বয়সী রোহিঙ্গারাই এই টিকা পাবেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, ৫০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে এবার টিকা দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমানে দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সম্প্রসারিত আকারে করোনা টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সম্প্রসারিত আকারে করোনার টিকা দেওয়া নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন রকম তথ্য দেওয়া হয়েছিল। ১ আগস্ট মহাখালীর বিসিপিএস মিলনায়তনে ২০২০-২১ সালের ১ম বর্ষ এমবিবিএস ক্লাস শুরুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন, ৭ থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত এই ৭ দিনে উৎসবমুখর পরিবেশে দেশের মানুষকে অন্তত ১ কোটি টিকা দেওয়া হবে। এর দুই দিন পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, শনিবার এক দিনে ৩২ লাখের মতো টিকা দেওয়া হবে।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া তথ্যের সঙ্গে আগের তথ্যের কোনো মিল ছিল না। এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে একাধিক সাংবাদিক অভিযোগ করেন, একই বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দেওয়ায় মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। এ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, তথ্য দেওয়ার ব্যাপারে ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করার আন্তরিক চেষ্টা চালানো হবে।
দেশে গণটিকাদান শুরু হয় ৭ ফেব্রুয়ারি। দেশে এখন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার, মডার্না ও সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে সরকারি উপজেলা হাসপাতাল, জেলা বা সদর হাসপাতাল, সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কিছু বিশেষায়িত হাসপাতালে করোনার টিকা দেওয়া চলছে। এর সঙ্গে আজ থেকে যুক্ত হচ্ছে সম্প্রসারিত টিকাদান কার্যক্রম।
টিকাদান পরিস্থিতি
দেশে এ পর্যন্ত করোনার টিকা এসেছে ২ কোটি ৫৬ লাখ ৪৪ হাজার। এর মধ্যে কিছু টিকা উপহার হিসেবে, কিছু টিকা পেয়েছে করোনা টিকা সংগ্রহ ও বিতরণের বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স থেকে। বাকি টিকা সরকার কিনেছে।
ইতিমধ্যে ১ কোটি ৪৭ লাখ ৩৩ হাজার ৩১৪ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুই ডোজ পেয়েছেন ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫১৭ জন। জনসংখ্যার শতকরা হিসাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০টি দেশের মধ্যে করোনা টিকাদানে বাংলাদেশের অবস্থান সবচেয়ে নিচে। গতকাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দিল্লি আঞ্চলিক কার্যালয়ের তথ্যে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে এই হার ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ভুটানের। ইতিমধ্যে দেশটির ৬২ দশমিক ৬২ শতাংশ মানুষ করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন।
সম্প্রসারিত আকারে টিকাদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ অল্প সময়ে বেশি মানুষকে টিকা দিতে চাইছে। এ ব্যাপারে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরামর্শক জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব হলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরও গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি কমবে। এতে হাসপাতালের ওপর চাপ কমবে, মৃত্যুঝুঁকিও কমবে।