সফল ১০ নারীর হাতে উঠল ‘অনন্যা সম্মাননা’
কৃষি, বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় ১০ জন নারীকে দেওয়া হলো ‘অনন্যা শীর্ষ দশ সম্মাননা ২০২০’। সম্মাননাপ্রাপ্ত এই নারীরা বললেন, সাহস, মনোবল থাকলে ও পরিবার থেকে সহায়তা পেলে নারীর প্রতিভাকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে পাক্ষিক অনন্যা আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই নারীদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়। সম্মাননাপ্রাপ্ত নারীরা শুধু নিজেরাই সফল হননি, অন্যদের বিশেষ করে নারীর কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করেছেন। ১৯৯৩ সাল থেকে নারীবিষয়ক সাময়িকী পাক্ষিক অনন্যা এ সম্মাননা দিয়ে আসছে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি তিন দশক ধরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল ১০ নারীকে খুঁজে বের করে সম্মাননা দেওয়ার জন্য অনন্যা কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ক্রিকেট, ফুটবলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছেন, এটা হচ্ছে দেশের এগিয়ে যাওয়ার চিত্র। নারীর অগ্রগতি না হলে সমাজ এগোতে পারে না। নারীদের এগিয়ে যাওয়ার পথে অনেক বাধাবিপত্তি আসবে। তবে বঙ্গবন্ধুর ভাষায় বলতে হবে, ‘আমাদের কেউ দাবায় রাখতে পারবে না।’
অনন্যার সম্পাদক ও প্রকাশক তাসমিমা হোসেন বলেন, ‘অনন্যার মূল কথা হচ্ছে, আমরাও পারি, অর্থাৎ নারীরাও পারে।’ তিনি বলেন, শীর্ষ দশ সম্মাননার শুরুর দিকে ১০ জন সফল নারীকে খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হতো। আর এখন তালিকায় থাকে ৫০ জনের বেশি নারীর নাম। সেখান থেকে ১০ জনকে বাছাই করাটাই এখন কঠিন হয়ে গেছে। অনেকে আবার এ সম্মাননা পেতে তদবিরও করেন। তবে নিরপেক্ষভাবেই সফল নারীদের এ সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে।
রাজনীতিতে সম্মাননা পেয়েছেন কামরুন নাহার জাফর। ১৯৮০–এর দশকে তিনি সরকারের স্বাস্থ্য, জন্মনিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকার সময় ‘ছেলে হোক মেয়ে হোক দুটি সন্তানই যথেষ্ট’ স্লোগান চালু করেন। তিনি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
৩২ বছর ধরে কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত ফরিদপুরের শাহীদা বেগম উদ্যোক্তা হিসেবে সম্মাননা পেয়েছেন। গত বছর তিনি পেঁয়াজের বীজ বিক্রি করেছেন চার কোটি টাকার।
প্রযুক্তিতে সম্মাননা পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক লাফিফা জামাল। তাঁরই নেতৃত্বে ২০১৮ সালে ফিলিপাইনে আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো যোগ দিয়ে স্বর্ণপদক জয় করে।
সাতক্ষীরার অল্পনা রানী মিস্ত্রী দেশি বীজ সংগ্রহ করে চাষবাদ করার জন্য কৃষিতে এ সম্মাননা পেয়েছেন। অন্যদের দেশীয় বীজে চাষাবাদে উৎসাহিত করা ছাড়াও বিনা মূল্যে বীজ বিতরণ করেন তিনি।
নাট্যনির্মাণে বিশেষ অবদান রাখায় চলচ্চিত্র পরিচালক, শিল্প নির্দেশক, নাট্যনির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী পেয়েছেন এ সম্মাননা। তিনি ২০ বছরের বেশি সময় ধরে যুক্ত আছেন নাট্যনির্মাণে।
করপোরেট পেশায় সম্মাননা পেয়েছেন বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড মার্কস অ্যান্ড স্পেনসারের (এমঅ্যান্ডএস) কান্ট্রি ডিরেক্টর স্বপ্না ভৌমিক। তাঁর নেতৃত্বে মার্কস অ্যান্ড স্পেনসারের বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানির পরিমাণ শত কোটি ডলার ছাড়িয়েছে।
বিজ্ঞানে সম্মাননা পেয়েছেন সেঁজুতি সাহা, যিনি জিনবিন্যাসের মাধ্যমে শিশুদের মেনিনজাইটিস সংক্রমণের রহস্য উন্মোচন করেছেন। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম জিনবিন্যাসও হয়েছে তাঁর নেতৃত্বে।
অধিকারকর্মী হিসেবে ট্রান্সজেন্ডার তাসনুভা আনান পেয়েছেন এ সম্মাননা। তিনি ট্রান্সজেন্ডারদের মধ্যে প্রথম টেলিভিশন সংবাদ পাঠক হয়েছেন।
ক্রীড়ায় বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের ‘অটোমেটিক চয়েজ’ জাহানারা আলম পেয়েছেন এ সম্মাননা। তাঁর হাত ধরেই বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডে খেলার মর্যাদা পেয়েছে।
লোক-ঐতিহ্যে সম্মাননা পেয়েছেন কুষ্টিয়ার লাঠিয়াল রূপন্তী চৌধুরী। দাদা, ফুফুর দেখানো পথেই তিনি লাঠি খেলার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।
পেশাগত কারণে সম্মাননাপ্রাপ্ত তাসনুভা আনান, জাহানারা আলম ও স্বপ্না ভৌমিক সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি।