বিভিন্ন স্থানে যানবাহন ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ, সংঘর্ষ ও পুলিশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার মধ্য দিয়ে গতকাল বুধবার বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের ডাকা অবরোধের পঞ্চম দিন পার হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের বরাত দিয়ে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক কার্যালয় ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
যশোর: ছাত্রদলের উদ্যোগে গায়ে কাফনের কাপড় জড়িয়ে যশোর শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। যশোর শহরে অবরোধের তেমন প্রভাব না পড়লেও শহরতলি ও কয়েকটি উপজেলায় যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া হয়নি। বিশেষ করে যশোর-খুলনা, যশোর-সাতক্ষীরা ও যশোর-মাগুরা আঞ্চলিক মহাসড়কের কয়েকটি স্থানে অবরোধকারীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নেন। এসব সড়কে হালকা যানবাহনও চলাচল করতে দেওয়া হয়নি।
বেনাপোল বন্দরের অভ্যন্তরে পণ্য ওঠানো-নামানোর কাজ চললেও পণ্য নিয়ে ট্রাক বাইরে যেতে পারেনি। বন্দরে হাজার খানেক ট্রাক পণ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। অবরোধে সবজিচাষিদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে।
ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বিএনপি একটি মিছিল বের করে। মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা সভাপতি মসিউর রহমান।
মিছিলটি সৃজনী পাম্পের কাছে পৌঁছালে পেছন থেকে পুলিশ ধাওয়া করে। এ সময় পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শটগানের ১৫টি গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের ১৫টি সেল নিক্ষেপ করে।
সংঘর্ষের সময় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ৭১ টিভির জেলা প্রতিনিধি রাজিব হাসান ও মাছরাঙা টিভির শাহারিয়ার রহমান আহত হন। বিএনপির নেতা মসিউর রহমান দাবি করেন, পুলিশের হামলায় তাঁদের ১৫ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।
খুলনা: সকালে নগরের সোনাডাঙ্গা এলাকার মজিদ সরণির গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ছাত্রশিবির কর্মীরা গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় তাঁরা তিনটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান এবং তিনটি ইজিবাইক ভাঙচুর ও একটিতে অগ্নিসংযোগ করেন। পুলিশ অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ছয়টি রাবার বুলেট ছোড়ে।
অন্যদিকে টুটপাড়া এলাকায় অবরোধকারীরা সড়কে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় ও দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এ ছাড়া পিটিআই মোড়ে অবরোধকারীরা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে।
সাতক্ষীরা: অবরোধকারীরা কদমতলা বাজারে বাঁশের বেড়া দিয়ে, বিনেরপোতায় বালুর ঢিবি করে, আশাশুনি সড়কে বড় বড় মাটির ঢিবি করে ও সড়ক কেটে জেলা শহর থেকে অন্যান্য এলাকা বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
জেলার সব সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সদর উপজেলার আলীপুর চেকপোস্ট এলাকায় অবরোধকারীরা আবদুস সাত্তার (৩৫) নামে যুবলীগের এক নেতাকে পিটিয়ে জখম করেছেন।
শহরের অদূরে বাঁকাল এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন জামায়াত-শিবির কর্মীরা। তাঁরা এখানে কমপক্ষে ২০টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান এবং ইঞ্জিনচালিত কয়েকটি ভ্যান ভাঙচুর করেন। জেলা শহর থেকে কোথাও কোনো যানবাহন ছেড়ে যায়নি।
বরিশাল: বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের সাতমাইল নামক স্থানে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১৮টি রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় একজন পুলিশ সদস্যসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন।
অন্যদিকে সকাল আটটার দিকে নগরের নবগ্রাম রোড পশু হাসপাতাল এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে জেলা ও মহানগর বিএনপি। এ সময় টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করা হয়। সকাল নয়টার দিকে নগরের ঝাউতলা এলাকায় অবরোধের সমর্থনে ঝটিকা মিছিল করেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। এ সময় তাঁরা একটি ইজিবাইকে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করেন। পরে পুলিশ তাঁদের ধাওয়া করে একজনকে আটক করে।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন জানান, ঝাউতলা এলাকায় যানবাহনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টার সময় ঝুনু নামে ছাত্রদলের এক কর্মীকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার রাত সোয়া নয়টার দিকে নগরের সিঅ্যান্ডবি সড়কের সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান অবরোধকারীরা। রাত নয়টায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু এলাকায় রোগী নিয়ে যাওয়ার সময় একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করেন দুর্বৃত্তরা।
এ সময় অ্যাম্বুলেন্সের চালক দীপক আহত হন। বেসরকারি ওই অ্যাম্বুলেন্সটি বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রোগী নিয়ে উজিরপুর উপজেলার হাবিবপুরে যাচ্ছিল।
অবরোধের কারণে মহাসড়কে জরুরি সার্ভিস এবং হালকা যানবাহন ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। নগরের নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এবং রূপাতলী বাস টার্মিনাল থেকে অভ্যন্তরীণ এবং দূরপাল্লার কোনো বাস চলাচল করেনি।
তবে নগরের অভ্যন্তরে যানবাহন চালাচল ছিল অনেকটা স্বাভাবিক। ঢাকা-বরিশাল নৌপথসহ অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন পথে লঞ্চ চলাচল করলেও যাত্রী ছিল কম।