সংঘর্ষ-ভাঙচুর, আহত ২০
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের অবরোধের পঞ্চম দিনে গতকাল বুধবার নাটোর ও রংপুরে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় বিএনপির কমপক্ষে ২০ নেতা-কর্মী আহত হন। এ ছাড়া রাজশাহী ও রংপুরে সাতজনকে আটক করা হয়েছে।
এ ছাড়া লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় পুলিশের একটি গাড়ি ও সিরাজগঞ্জে তিনটি যানবাহন ভাঙচুর করেন অবরোধকারীরা।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
নাটোর: সদরে বেলা ১১টার দিকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে আলাইপুর মসজিদের সামনে পৌঁছালে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় দুই পক্ষের সংঘর্ষে বিএনপির ১০ নেতা-কর্মী আহত হন। আহত ব্যক্তিদের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক বলেন, ‘আমরা ছাত্রদলের নেতা সাইফুজ্জামানের হত্যার প্রতিবাদে হরতালের সমর্থনে শান্তিপূর্ণ মিছিল করছিলাম। হঠাৎ পুলিশ আমাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে।’
তবে সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) তোরিকুল ইসলাম গুলিবর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা আক্রান্ত হওয়ার পর কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপে বাধ্য হয়েছি।’
পীরগঞ্জ (রংপুর): দুপুর ১২টার দিকে পীরগঞ্জ বাজারে বিএনপি ও ছাত্রদল যৌথভাবে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশের লাঠিপেটায় ১০ বিএনপির কর্মী আহত হন। পরে ছাত্রদলের ছয় কর্মীকে আটক করা হয়। আহত ব্যক্তিদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল ইসলাম ছয়জনকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পাটগ্রাম (লালমনিরহাট): লালমনিরহাটের পাটগ্রাম-সরকারেরহাট আঞ্চলিক সড়কের কাফিরবাজার মোড়ে জামায়াত-শিবিরের নারী কর্মীসহ অবরোধকারীরা অবস্থান নেন। দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ তিনটি গাড়িতে করে টহল দিতে আসে। এ সময় অরোধকারীরা হামলা চালিয়ে পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ২৪টি রাবার বুলেট ছোড়ে।
সিরাজগঞ্জ: ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে সিরাজগঞ্জ-কাজীপুর আঞ্চলিক সড়কের সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার সমাজকল্যাণ মোড়ে একটি মিছিল বের করেন জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। টায়ারে অগ্নিসংযোগ করে সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে।
এ ছাড়া ভোরে শহরের এস এস ও এস বি ফজলুল হক রোডে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। পাশাপাশি সিরাজগঞ্জ-রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ-কাজীপুর ও সিরাজগঞ্জ-নলকা আঞ্চলিক সড়কের বিভিন্ন স্থানে পিকেটিং করেন অবরোধকারীরা।
এদিকে শাহজাদপুর উপজেলা বিএনপির স্থানীয় কার্যালয় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে তা নগরবাড়ী-বগুড়া মহাসড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পৌর শহরে সমাবেশ হয়। পরে দিলরুবা ও বিসিক বাসস্ট্যান্ডে তিনটি ট্রাক ও একটি নছিমন ভাঙচুর করেন বিক্ষোভকারীরা। সকালে এনায়েতপুর-সিরাজগঞ্জ সড়কের তামাই এলাকায়ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা সড়ক অবরোধ করেন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
রাজশাহী: দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) প্রশাসনিক ভবনে ককটেল বিস্ফোরণ,
পেট্রলবোমা নিক্ষেপ ও ভাঙচুর করেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন জানান, ছাত্রদলের কর্মীরা ভবনের নিচতলার চার্জার বুথ ভাঙচুর এবং দ্বিতীয় তলার বারান্দা লক্ষ্য করে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ছাত্রদলের এক কর্মীকে আটক করে।
এদিকে ওই হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে। মতিহার থানার ওসি আবদুল মজিদ জানান, হামলার ঘটনায় আটক ছাত্রদলের কর্মীকে থানা হাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ: সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে শহরের চাষাঢ়া রেলক্রসিংয়ের আগে পিকেটাররা ঢাকাগামী চলন্ত ট্রেনে ৮-১০টি ককটেল ছোড়ে। একটি বাদে বাকি ককটেলগুলো ট্রেনের গায়ে লেগে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয় ও একটি ককটেল ট্রেনের বগির ভেতরে গিয়ে বিস্ফোরিত হয়। কিন্তু বগিতে লোকজন কম থাকায় কেউ হতাহত হয়নি।
সকাল পৌনে সাতটার দিকে রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল এলাকায় মদনপুর-ভুলতা-জয়দেবপুর সড়কে বিএনপির সমর্থকেরা একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন দেন। ভাঙচুর করেন সাত-আটটি যানবাহন।
সকাল সাতটার দিকে শহরের ইসদাইর এলাকায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেললাইনে টায়ারে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পুলিশ ও এলাকার লোকজন ধাওয়া দিলে অবরোধকারীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বেলা তিনটার দিকে শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের নূর মসজিদের সামনে মহানগর ছাত্রদলের কর্মীরা পাঁচ-ছয়টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান। একপর্যায়ে তাঁরা সড়কে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। র্যাব ও পুলিশ ঘটনাস্থলে আসার আগেই ছাত্রদলের কর্মীরা পালিয়ে যান।
মানিকগঞ্জ: মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে হরিরামপুর উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের পেছনে পেট্রল ছিটিয়ে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করে কয়েকজন দুর্বৃত্ত। এ সময় উপজেলা পরিষদের পাশে দায়িত্বরত পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তারা পালিয়ে যায়। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে হরিরামপুর থানার ওসি শওকত আলী বলেন, ঘটনাস্থল থেকে পেট্রলের কয়েকটি খালি বোতল উদ্ধার করা হয়েছে।