পুরোদস্তুর মাঘের চরিত্র নিয়ে বিকেল থেকে হু হু করে ঠান্ডা বাতাস বইতে লাগল। শীত বাড়ে, বইমেলার প্রকাশকদের আশঙ্কাও বাড়ে। হঠাৎ নেমে আসা শীতের কারণে মানুষ আসবে তো মেলায়? কিন্তু সব আশঙ্কা দূর করে সন্ধ্যা নাগাদ জমে উঠল মেলা। গতকাল মঙ্গলবারই প্রথম দেখা গেল বিশাল সারি ধরে মেলায় ঢুকছে গ্রন্থানুরাগীরা। শীত আর মেলা—দুটোই হয়ে উঠল জমজমাট।
গতকাল রাজধানীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ছিল সরস্বতী পূজার কারণে। তাই বইপ্রেমীদের বেশি ভিড় দেখা গেল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মোড় থেকে থেকে শুরু করে দোয়েল চত্বরের শিশু একাডেমী পর্যন্ত গোটা এলাকা ছিল মেলামুখী মানুষের উপস্থিতি। বইপ্রেমীদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল বাণী অর্চনার প্রভাব। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিদ্যার দেবী সরস্বতীর অর্চনা শেষে ভিড় জমায় মেলায়। কেনাকাটাও বেড়েছে গতকাল।
মেলার পরিবেশও যথেষ্ট ভালো ছিল গতকাল। মেলার মাঠের কাছাকাছি শৌচাগার স্থাপন ও আবর্জনা জঞ্জাল সরানোর বিষয়ে একাডেমি কর্তৃপক্ষ তাদের কথা রেখেছে। নির্মাণসামগ্রীর জঞ্জাল সরানো হয়েছে। অপ্রতুল হলেও কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ শৌচাগার দেখা গেছে উদ্যানের পাশে। দুপুরেই পানি ছিটিয়ে ভেজানো হয়েছিল মাঠ। ফলে, বিকেলে যখন দলে দলে নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর মেলার মাঠে ঘুরেছিল, ধুলো তাদের পীড়িত করেনি। নতুন বই আসা এবং মোড়ক উন্মোচনের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। একাডেমির সমন্বয় ও জনসংযোগ উপবিভাগ সূত্র অনুযায়ী মেলার চতুর্থ দিনে প্রকাশিত হয়েছে ৫৭টি নতুন বই। এর মধ্যে গল্প ১০, উপন্যাস ১২, প্রবন্ধ ৩, গবেষণা ১, ছড়া ২, শিশুসাহিত্য ২, জীবনী ২, মুক্তিযুদ্ধ ২, নাটক ২, ইতিহাস ১, রম্য/ধাঁধা ২, ধর্মীয় ১ ও অন্যান্য বিষয়ের ওপর রয়েছে চারটি বই।
গতকাল নজরুল মঞ্চে উন্মোচিত হয়েছে পাঁচটি নতুন বইয়ের মোড়ক। এর মধ্যে সাংবাদিক রকিবুল ইসলামের গল্পগ্রন্থ পরীর মোড়ক উন্মোচন করেন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক।
নতুন বইয়ের মধ্যে প্রথমা প্রকাশন এনেছে উৎপল শুভ্রর লেখা শচীন রূপকথা, বেঙ্গল পাবলিকেশনস লিমিটেড এনেছে দ্বিজেন শর্মার নির্বাচিত প্রবন্ধ, মোহাম্মদ রফিকের কালের মান্দাস, আগামী এনেছে মোশাহিদা সুলতানার লবণ পানি, উৎস প্রকাশ এনেছে সুমনকুমার দাশের দুর্বিন শাহ সমগ্র, আপেল আকবের কে হাঁটে অহোরাত্র, রব্বানী চৌধুরীর মানবতার মিষ্টিমন্ত্র, অ্যাডর্ন পাবলিকেশন থেকে এসেছে সিরাজ উদ্দিনের দাস বিদ্রোহের কথা, আমির হোসেনের বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ, অন্যপ্রকাশ এনেছে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে লেখা সালেহ চৌধুরীর শৌখিনদার হুমায়ূন, অনুপম এনেছে মুহম্মদ জাফর ইকবালের মিথ্যা বলার অধিকার ও অন্যান্য, পার্ল এনেছে আনিসুল হকের হাসতে হাসতে খুন, জিম করবেটের লেখা থেকে খসরু চৌধুরীর রূপান্তর শিকার-কাহিনি কুমায়ুনের মানুষখেকো ইত্যাদি।
মেলা মঞ্চের আয়োজন
বিকেলে গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় মমতাজুর রহমান তরফদারের ‘ইতিহাস চর্চায় একাল ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পারভীন হাসান। আলোচনায় নেন সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, সাইফুদ্দীন চৌধুরী, এ কে এম শাহনাওয়াজ ও মোহাম্মদ সেলিম। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক অজয় রায়। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল প্রকাশ সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শ্রুতিঘরের সদস্যদের আবৃত্তি পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী লিলি ইসলাম, তপন মাহমুদ, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, নীলোৎপল সাধ্য, রোকাইয়া হাসিনা, বদরুন্নেসা ডালিয়া প্রমুখ।