শিশুর চোখে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
আলোকচিত্র ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ক্যামেরা ও ক্যানভাসে জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক ভাবনা তুলে ধরেছে শিশুরা।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রকৃতির অস্বাভাবিকতা দেখা যাচ্ছে পৃথিবীর নানা প্রান্তে। জলবায়ু পরিবর্তনের পেছনে উন্নত বিশ্ব ও বড়দের হাত রয়েছে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা। সারা দেশের শিশুরা ছবি এঁকে ও ছবি তুলে দেখিয়ে দিয়েছে, বড়রা শিশুদের জন্য কেমন পৃথিবী রেখে যাচ্ছে এবং তারা কেমন পৃথিবী চায়।
‘আর্টিভিজম: আমার চোখে জলবায়ু পরিবর্তন’ শীর্ষক আলোকচিত্র ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ক্যামেরা ও ক্যানভাসে জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক ভাবনা তুলে ধরেছে শিশুরা। দেশের পাঁচ শতাধিক শিশু এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। প্রথমে ৪০ জন এবং তারপর আরও যাচাই–বাছাই শেষে চার শিশু এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছে। প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল বেসরকারি সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ এবং মাসিক ম্যাগাজিন কিশোর আলো। গতকাল রোববার ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। জানানো হয়, বিজয়ীদের ঠিকানায় পুরস্কার পাঠিয়ে দেওয়া হবে। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সেরা ৪০ জন পাবে সনদ।
ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে আয়োজকেরা জানান, এ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল গত ২ আগস্ট। শিশুদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরার জন্য শিশুদের একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার লক্ষ্যে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। ভবিষ্যতেও এ ধরনের আয়োজন করা হবে।
চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় ‘ক’ বিভাগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া গ্যাস ফিল্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মোস্তফা নূরুল আবসার বিজয়ী হয়েছে। ‘খ’ বিভাগে ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী যাহ্রা তাসফিয়া রেজা বিজয়ী হয়েছে। ফটোগ্রাফি ‘ক’ বিভাগে টাঙ্গাইলের বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান তানজীম এবং ‘খ’ বিভাগে ঢাকার ম্যানগ্রোভ স্কুলের এ লেভেলের শিক্ষার্থী উষসী মোমেন বিজয়ী হয়েছে। ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন নুসরাত সায়েম।
আঁকা ও ফটোগ্রাফির মাধ্যমে শিশুরা সততার সঙ্গে জলবাযু পরিবর্তনের বিষয়টি তুলে এনেছে, এটাই প্রতিযোগিতার শক্তির জায়গা।অনো ভ্যান ম্যানেন, কান্ট্রি ডিরেক্টর, সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ
অনুষ্ঠানে সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর অনো ভ্যান ম্যানেন বলেন, আঁকা ও ফটোগ্রাফির মাধ্যমে শিশুরা সততার সঙ্গে জলবাযু পরিবর্তনের বিষয়টি তুলে এনেছে, এটাই প্রতিযোগিতার শক্তির জায়গা। এর মধ্য দিয়ে একদিন শিশুরাই সমস্যা সমাধানের পথ দেখাবে।
প্রতিযোগিতার বিচারক লেখক ও রম্য পত্রিকা উন্মাদ-এর সম্পাদক আহসান হাবীব বলেন, শিশুদের আঁকা সব ছবিই পুরস্কার পাওয়ার মতো। কেননা, তারা যা বিশ্বাস করে, তাই আঁকে। তাই বিজয়ী হিসেবে দুটো ছবি বাছাই করা খুব কঠিন কাজ ছিল। ছবিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ভবিষ্যতে আরও জটিল হবে, সেই চিত্রও শিশুরা ফুটিয়ে তুলেছে। এ ধরনের আয়োজনে শিশুদের কাছ থেকেই কোনো জুতসই সমাধান পাওয়া যেতে পারে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি কার্টুন ও কমিকস ফরম্যাটেও এ ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য আয়োজকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
কিশোর আলোর সম্পাদক কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, এ আয়োজনে শিশুদের কাছ থেকে নতুন চিন্তা পাওয়া গেছে। একইভাবে শিশুদের জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়ে চিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করাও সম্ভব হয়েছে। শিশুদের এই চিন্তাভাবনা বিশ্বনেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের ডিরেক্টর (প্রোগ্রাম ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কোয়ালিটি) রিফাত বিন সাত্তারও প্রতিযোগিতার একজন বিচারক ছিলেন। তিনি বলেন, শিশুদের চোখে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দেখার জন্যই এ আয়োজন। জলবায়ু পরিবর্তনের দায় উন্নত বিশ্বের। বড়রাই এ নিয়ে কথা বলছেন, সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন। অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের খেসারত দিতে হচ্ছে শিশুদের।
সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক (রিজিওনাল অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড ক্যাম্পেইন, এশিয়া) তাসকিন রহমানও প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জানান, বাংলাদেশসহ এশিয়ার নয়টি দেশে শিশুদের নিয়ে এ ধরনের প্রতিযোগিতা হচ্ছে। বিজয়ী চারটি ছবি ২৮ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ইতালিতে অনুষ্ঠেয় ‘ইয়ুথ ফর ক্লাইমেট: ড্রাইভিং অ্যাম্বিশন’ শীর্ষক আয়োজনে প্রদর্শিত হবে। ম্যাপ ফটো এজেন্সির আলোকচিত্রী মাহমুদ রহমান বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন, শিশুদের মধ্যে সাফা জেরিন ও মোহাইমিন সুলতানা ছিল এই দায়িত্বে।