শিক্ষা খাতে দুর্নীতি কমেছে: টিআইবি
শিক্ষা খাতে বাংলাদেশে দুর্নীতি কমেছে। বৈশ্বিক দুর্নীতি প্রতিবেদনে সারা পৃথিবীতে যেখানে গড়ে ১৭ শতাংশ মানুষ শিক্ষা খাতে দুর্নীতির শিকার, সেখানে বাংলাদেশে এই হার ১২ শতাংশ।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) আজ মঙ্গলবার বিশ্বের ১০৭টি দেশে একযোগে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ঢাকায় ব্র্যাক সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বা শিক্ষা খাতে ঘুষ দেওয়ার অভিজ্ঞতা গড়ে ১৭ শতাংশ মানুষের। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই হার ১২ শতাংশ। বাংলাদেশের অবস্থা ভালো হলেও এতে সন্তুষ্ট না হয়ে আরও এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে আমাদের।’
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘শিক্ষা খাতে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে নেপাল ও মালদ্বীপ ছাড়া অন্য সবগুলো দেশেই বাংলাদেশের চেয়ে ঘুষ দেওয়ার অভিজ্ঞতা বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘুষ দিতে হয় ভারতে, শতকরা ৪৮ ভাগ।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) গ্লোবাল করাপশন ব্যারোমিটার ২০০৭-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩৯ শতাংশ মানুষকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খাতে ঘুষ দিতে হতো। ২০১০ সালে তা কমে দাঁড়ায় ১৫ শতাংশে। ২০১২ সালে তা কমে হয় ১৪.৮ শতাংশ এবং এ বছর তা কমে হয়েছে ১২ শতাংশ। আগের তুলনায় বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে দুর্নীতি কমেছে।
বর্তমান সরকারের নানা উদ্যোগের কারণেই শিক্ষা খাতে দুর্নীতি কমেছে কি না, জানতে চাইলে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী বেশ বেগবান। তাঁর চেষ্টায় দুর্নীতি অনেক কমেছে। এ ছাড়া বিনা মূল্যে বই বিতরণ ও নকল প্রতিরোধ বেশ কার্যকর হয়েছে।’
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, শিক্ষা খাতে দুর্নীতির প্রভাব কেবল আর্থিক মূল্যে নির্ধারণ করা কঠিন। এর সামাজিক মূল্যও অনেক। কারণ, তরুণেরাই হলো শিক্ষা খাতের দুর্নীতির প্রথম শিকার। শিক্ষা খাতে দুর্নীতি দূর করতে রাজনৈতিক প্রতিজ্ঞা, সদিচ্ছা এবং এ খাতে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, উপনির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া খায়ের এবং ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি) মোহাম্মদ হোসেন।
বৈশ্বিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বজুড়ে ২০১২ সালে শিক্ষাসেবা গ্রহণকালে প্রতি পাঁচজনের একজন ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছিলেন এবং গরিবদের ক্ষেত্রে এই হার প্রতি তিনজনে একজন। প্রতিবেদনে বলা হয়, শিক্ষা খাতে সাধারণ নির্মাণকাজ, ক্রয়, বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ঘুষের লেনদেন, অর্থের বিনিময়ে নম্বর পাওয়া, শিক্ষক নিয়োগে স্বজনপ্রীতি, জাল সনদ, বিদ্যালয়ের অনুদানের অপব্যবহার, অনুপস্থিতি এসব খাতে অনিয়ম হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, টিআইবি শিক্ষা খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে কিছু কার্যক্রম চালিয়েছে। টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার আলোকদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বলা হয়, শিক্ষাসেবায় সততা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার ফলে এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেড়েছে। ঝরে পড়ার হার কমেছে। স্কুলটি ‘বি’ গ্রেড থেকে ‘এ’ গ্রেডে উন্নীত হয়েছে।