মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে সোমবার চার জেলায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কোনোটি ঘটেছে ভিন্ন দুই দলের মধ্যে; কোনোটিতে আবার নিজ দলের কর্মীরাই পাল্টাপাল্টি হামলায় জড়িয়েছেন। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত উপজেলা পরিষদের সড়কের ডাকবাংলোর সামনে, প্রধান সড়ক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায় এ সংঘর্ষে দুই পক্ষের অন্তত ১৫ নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হন।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সকালে উপজেলা পরিষদসংলগ্ন শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে উপজেলা বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে ফিরছিলেন।
মিছিলটি সিনেমা হল এলাকায় পৌঁছালে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। সংঘর্ষের সময় পৌর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমানের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বাসস্ট্যান্ড এলাকার ক্যাপ্টেন ফুড ও একটি ব্যায়ামাগার এবং ব্যায়ামাগারের সামনে থাকা দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।
সংঘর্ষে সুজন পাটোয়ারী, মো. সুমন হোসেন, মো. মাসুদ, রিয়াজ হোসেন, মো. শান্ত, মো. সোহেল, কাউছার হোসেন আহত হয়েছেন। তাঁরা ছাত্রদলের নেতা-কর্মী। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খোকন বলেন, বিএনপির মিছিল থেকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অশালীন স্লোগান দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ঘটনায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জুম্মন সুলতান, ছাত্রলীগের সদস্য সাইফুল ইসলাম ও জাকির হোসেন আহত হয়েছেন।
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় সংঘর্ষে জড়িয়েছে আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষ। কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের সাংসদ নূর মোহাম্মদ ও সাবেক সাংসদ মো. সোহরাব উদ্দিনের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। এ সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আহত হন অন্তত সাতজন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল সাড়ে আটটার দিকে সাংসদ নূর মোহাম্মদের অনুসারী নেতা-কর্মীদের নিয়ে পাকুন্দিয়া সরকারি ডিগ্রি কলেজ মাঠের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে যান পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম।
পৌনে ১০টার দিকে সাবেক সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মো. সোহরাব উদ্দিন নেতা-কর্মীদের নিয়ে শোভাযাত্রাসহকারে ওই শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে রওনা দেন। পথে থানার মোড়ে পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। বাধা উপেক্ষা করে শ্রদ্ধা জানাতে যান তাঁরা। সোহরাব উদ্দিন শহীদ মিনারে উঠলে তাঁদের লক্ষ্য করে বিরোধী পক্ষ ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় দুই পক্ষের ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ।
নেত্রকোনায় একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাওয়ার সময় দলীয় প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়েছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম মনিরুজ্জামান। তাঁকে উদ্ধার করে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মনিরুজ্জামান আগে জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন।
হাসপাতালে ভর্তি এস এম মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় কার্যালয় থেকে শহীদ মিনারের উদ্দেশে বের হওয়ার সময় জেলা যুবদলের কয়েকজন নেতা তাঁর ওপর হামলা চালান।
ছাত্রলীগের দুপক্ষের হাতাহাতি, আহত ৮
শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া নিয়ে চট্টগ্রামের হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে। এতে আটজন আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বেলা ১১টার দিকে কলেজ প্রাঙ্গণের শহীদ মিনারে প্রথমে ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানায় কলেজ কর্তৃপক্ষ। এরপর বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকেরা শ্রদ্ধা জানান। পরে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা ফুল দিতে যান। এ সময় সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী ছাত্রলীগের দুই কর্মীর সঙ্গে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী কর্মীদের কথা-কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে ক্যাম্পাসে দুই পক্ষ হাতাহাতিতে জড়ায়। একপর্যায়ে উভয় পক্ষে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
জানতে চাইলে মহিবুলপন্থী কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাইমুন উদ্দিন বলেন, তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে প্রথমে কথা-কাটাকাটি হয়। জুনিয়র দুটি ছেলে বড়দের সঙ্গে বেয়াদবি করলে ঘটনার সূত্রপাত। এরপর হাতাহাতি হয়। কেউ গুরুতর আহত হননি। পুলিশ ও সিনিয়রদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
নাছিরপন্থী কমিটির সভাপতি বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের দুই জুনিয়র ছেলের গায়ে হাত তোলা নিয়ে দুই পক্ষে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে আমিসহ চারজন আহত হই। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে সবাই বাসায় আছে। ওই পক্ষেরও তিন–চারজন আহত হয়েছে।’
উল্লেখ্য, মহসিন কলেজে নগর ছাত্রলীগের অনুমোদিত একটি কমিটি রয়েছে। এ কমিটির বেশির ভাগ সদস্য নিজেদের মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী বলে পরিচয় দেন। কমিটির বিপক্ষে গিয়ে আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীরা পাল্টা একটি কমিটি করেন।
চকবাজার থানার ওসি মো. ফেরদৌস জাহান প্রথম আলোকে বলেন, মূলত ফুল দেওয়া নিয়ে সিনিয়র ও জুনিয়রদের মধ্যে সামান্য হাতাহাতি এবং পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।