শত বছরের সমাধিক্ষেত্র এখন ঢাকার ইতিহাস
বিশাল একটি ফটকের পাশেই পুরোনো একটি দুর্গ। ঢাকার পুরোনো ছবির সবচেয়ে সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা ব্রিটিশ লাইব্রেরির ওয়েবসাইটে ১৮৭০ সালে তোলা এমন একটি ছবি পাওয়া গেল। এটি নারিন্দার খ্রিষ্টান কবরস্থান। ইতিহাস খুঁজতে দ্বারস্থ হওয়া ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুনের ঢাকা: স্মৃতিবিস্মৃতিরনগরী গ্রন্থে। সেখানে বলা হয়েছে, মোগল যুগের আগেই নারিন্দার পত্তন হয়েছিল। আর ঢাকার খ্রিষ্টানদের সমাহিত করার স্থান ছিল নারিন্দার এই কবরস্থান। তবে কখন থেকে এখানে খ্রিষ্টানদের কবর দেওয়া হচ্ছে তার সঠিক সময় জানা নেই। ধারণা করা হয়, সতেরো শতকেই জায়গাটি বেছে নেওয়া হয়েছিল। এই কবরস্থানটি মূলত ইউরোপিয়ান বণিক ও তাদের পরিবারের জন্য তৈরি। বিশপ হেবার ১৮২৪ সালে ঢাকায় এসে এই গোরস্থানের পবিত্রকরণ করেছিলেন। আরও তথ্য খুঁজতে গিয়ে বাংলাদেশ ফোরাম ফর হেরিটেজ স্টাডিজের প্রতিষ্ঠাতা ও গবেষক ওয়াকার এ খানের ‘ঢাকায় পূর্বপুরুষের খোঁজে’ শিরোনামে একটি লেখা পাওয়া গেল। তাতে তিনি ইউরোপীয় চিত্রশিল্পী জোহান জোফানির ১৭৮৭ সালে তেলরঙে আঁকা ‘নাগাপন ঘাট’ নামে একটি চিত্রকর্মের কথা উল্লেখ করেছেন। ওই চিত্রকর্মে দেখা যায়, ছোট্ট একটি নদীর পাড়ে দুর্গের মতো দেখতে একটি স্থাপনা। ওয়াকার এ খান লিখেছেন, এটি নারিন্দা খ্রিষ্টান কবরস্থানের কলম্বো সাহেবের সমাধি। আর ইউরোপীয় কোনো শিল্পীর আঁকা এটিই ঢাকার প্রাচীনতম ছবি। ওয়াকার এ খান চিত্রসমালোচক চার্লস গ্রেগের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রে এই ছবিটি পেয়েছিলেন। চার্লস গ্রেগের পূর্বপুরুষ ক্যাপ্টেন টমাস বরথউইক পলাশীর যুদ্ধের ১২ বছর পর ঢাকায় মারা যান। তাঁর কবরও আছে নারিন্দার খ্রিষ্টান কবরস্থানে। কেউ যদি ইতিহাস পড়ে ওয়ারীর বলধা গার্ডেনের উল্টো দিকের এই কবরস্থানে যান তবে সেখানকার শান্ত পরিবেশ তাঁকে মুগ্ধ করবে। অবশ্য কবরস্থানের ভেতরে এক সাইনবোর্ডে এর প্রতিষ্ঠার সাল উল্লেখ করা হয়েছে ১৬০০ সাল। অর্থাৎ চার শ বছরের বেশি বয়স এই কবরস্থানের। অবশ্য কবরের ফলকগুলো দেখলে ১৭২৫ সালে মারা যাওয়া ইংরেজ কুঠির প্রধান ন্যাথানিয়েন হল, ওলন্দাজ কুঠির প্রধান ওয়ান্সি কোয়ান, ১৮৫৭ সালে লালবাগ কেল্লার লড়াইয়ে নিহত দুজন ব্রিটিশ সেনাসহ অনেকেরই কবরের নামফলক দেখা যাবে, যাতে ফুটে উঠবে ঢাকার শত বছরের ইতিহাস। কলকাতার মন্ত্রী রেভারেন্ড জোসেফ প্যাজেটের সমাধিও এখানে আছে, যিনি ১৭৪৪ সালে ২৬ বছর বয়সে মারা যান। এই কবরের সামনেই প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের একটি সাইনবোর্ড। তাতে এই কবরস্থানকে সংরক্ষিত প্রত্নসম্পদ বলে ঘোষণা দেওয়া।
লেখা: শরিফুলহাসান। ছবি: হাসানরাজা