রেলপথে জরুরি টহল
রেলপথে নাশকতা এড়াতে নিরাপত্তারক্ষীসহ ইঞ্জিন ও ট্রলি দিয়ে জরুরি টহল শুরু হয়েছে। সারা দেশে রেলপথের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া ট্রেনের গতিবেগ কমানো ও সময়সূচি বদল করা হয়েছে।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের দুই দফার অবরোধ কর্মসূচিতে রেললাইনের ফিশপ্লেট তুলে ফেলা, লাইন উপড়ে ফেলা, স্লিপার তুলে ফেলা, লাইনে অগ্নিসংযোগ, ট্রেনে অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক নাশকতার শিকার হয়েছে রেল। ফিশপ্লেট তুলে ফেলায় ইতিমধ্যে কুমিল্লায় মহানগর গোধূলী, গাজীপুরে অগ্নিবীণাসহ কয়েকটি ট্রেনের ইঞ্জিন ও বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। এসব ঘটনায় শতাধিক যাত্রী আহত হয়েছেন। কিন্তু সর্বশেষ গত মঙ্গলবার গভীর রাতে গাইবান্ধায় ফিশপ্লেট খুলে ফেলায় আন্তনগর পদ্মরাগ এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন ও তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন চারজন যাত্রী। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ট্রেনের সময়সূচি। ব্যাপক সম্পদহানি হয়েছে রেলের।
রেলপথে অব্যাহত নাশকতা এড়াতে বাংলাদেশ রেলওয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এ নিয়ে গতকাল বুধবার ঢাকায় রেল ভবনে এক বৈঠক হয়। রেলওয়ের সূত্র জানায়, বৈঠকে নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সারা দেশে রেলপথে ঝুঁকিপূর্ণ ৩১২টি স্থানে আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বৈঠকে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে সার্বক্ষণিক আনসার মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়। অবশ্য রেল কর্তৃপক্ষ ৫৮৮টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করে এসব স্থানে আনসার মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। প্রতি কিলোমিটার অন্তর চারজন করে আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করার কথা রয়েছে।
রেলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নাশকতা এড়াতে ট্রেনের সূচি বদল, গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনের সামনে নিরাপত্তারক্ষীসহ একটি ইঞ্জিন ও ট্রলি দিয়ে টহল শুরু হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ট্রেনের গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, তিন ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হলে নাশকতা বন্ধ করা সম্ভব। এগুলো হচ্ছে: জরুরি শাটল (যাত্রীবাহী ট্রেনের আগে একটি ইঞ্জিন চালানো), জরুরি ট্রলি (ট্রলি নিয়ে ট্রেনের আগে যাত্রা) ও জরুরি টহল (লাইন ঠিক আছে কি না, তা রেলওয়ে কর্মীর হেঁটে দেখা)। এ নিয়ে প্রথম আলোতে গত মঙ্গলবার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, লাকসাম, আখাউড়া, সিলেট, জয়দেবপুর, ময়মনসিংহ থেকে জরুরি শাটল শুরু হয়েছে। এর পর থেকে সংশ্লিষ্ট রেলপথে কোনো অঘটন ঘটেনি। মঙ্গলবার রাতে সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ডে রেললাইন উপড়ে ফেলার সময় তা জরুরি শাটলের নিরাপত্তারক্ষীদের নজরে পড়ে। কয়েকটি নাট-বল্টু খুলে নাশকতাকারীরা পালিয়ে যায়। বিষয়টি আগেভাগে সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেওয়ায় কোনো অঘটন ঘটেনি। লাকসাম-চাঁদপুর পথে জরুরি শাটল না থাকায় নাশকতার কারণে গতকাল মেঘনা এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন ও বগি লাইনচ্যুত হয়। তবে গতকালই লাকসাম থেকে চাঁদপুর এবং নোয়াখালীর জন্য আরেকটি ইঞ্জিন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যাতে জরুরি শাটল করা যায়।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, জরুরি শাটলের জন্য ব্যবহূত প্রতিটি ইঞ্জিনে পাঁচ-ছয়জন করে সশস্ত্র পুলিশ ছাড়াও রেলের নিরাপত্তারক্ষী এবং রেলকর্মী রাখা হয়। আশা করা যায়, এখন আর কেউ নাশকতা করতে পারবে না।
রেলের কর্মকর্তারা জানান, ফিশপ্লেট খুলে লাইন উপড়ে ফেলতে কমপক্ষে ৩০-৪০ মিনিট সময় লাগে। এই সময়টা যাতে নাশকতাকারীরা না পায় সে জন্য এক ট্রেনের সঙ্গে অন্য ট্রেনের সময়ের পার্থক্য কমিয়ে দেওয়া হয়েছে ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-ভৈরব বাজারসহ বেশ কিছু পথে। বড় স্টেশনগুলোতে একের অধিক ট্রেন আটকে রেখে এর আগে ট্রলি কিংবা ইঞ্জিন চালিয়ে নিরাপত্তা খতিয়ে দেখে পরপর দুটি ট্রেন চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে নাশকতা, গতি কমানো, ট্রেনের সূচি আগানো-পেছানোর কারণে কোনো ট্রেনই সময়মতো ছাড়তে এবং গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না। দুই থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত দেরি হচ্ছে। অতিরিক্ত বিলম্বের কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে চলাচলকারী দুটি মহানগর প্রভাতীর যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। চট্টগ্রাম ও সিলেট পথের আন্তনগর পাহাড়িকা এক্সপ্রেসের আসা-যাওয়াও বাতিল করা হয়। এ ছাড়া লোকাল ও তেলবাহী ট্রেনের যাত্রাও বাতিল করা হয়েছে। ডেমু ট্রেন চলছে না অবরোধের শুরু থেকেই।