রাউজানের সুলতানপুর এলাকার জগতমল্লপাড়া। ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল এখানে হত্যা করা হয়েছিল ৩৬ জনকে। ফণীন্দ্র চৌধুরী সেদিনের শহীদ। আজও সেই স্মৃতি নিয়ে আছেন তাঁর ছেলেরা। বাবাকে হত্যার বর্ণনা জানালেও নিজের নামটি বলতে ভয় পাচ্ছিলেন ফণীন্দ্রের ছেলে। ফণীন্দ্রের ছেলে বলেন, ‘আগামীকাল (আজ) রায় দেবে। আমরা কিছুটা আতঙ্কে আছি। কী হতে কী হয়। আপনাদের দেখে প্রথমে অন্য লোক মনে করেছিলাম। তাই অনেক ভেবেচিন্তে পরিচয় জানতে বের হয়েছি।’
গতকাল সোমবার জগতমল্লপাড়া ঘুরে বাসিন্দাদের মধ্যে এ রকম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কের ছাপ দেখা গেছে। জগতমল্লপাড়া, কুণ্ডেশ্বরী ও উনসত্তরপাড়া এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর বাড়ি পাশের গহিরা গ্রামে। তাই এত উৎকণ্ঠা। তবে পুলিশ প্রশাসনের দাবি, তেমন কোনো সমস্যা নেই। সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রায় ঘোষণার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর গতকাল দুপুরে মামলার অন্যতম সাক্ষী আশীষ চৌধুরীর বাড়িতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য গিয়ে অভয় দিয়ে এসেছেন। ওই সময় আশীষ চৌধুরী বাড়িতে ছিলেন না। ওই হত্যাযজ্ঞে আশীষ তাঁর বাবা ও ভাইকে হারিয়েছেন। বিকেল চারটার দিকে তাঁর ঘরে টোকা দিলে স্ত্রী বীণা চৌধুরী উৎকণ্ঠা নিয়ে প্রতিবেদকের পরিচয় জানতে চান। আশীষ চৌধুরীর ফোন নম্বরটিও তাঁর কাছে নেই বলে বীণা জানালেন।
বীণা জানান, আশীষ চাকরিতে রয়েছেন। সকালে পুলিশ এসে খোঁজখবর নিয়ে গেছে।
জগতমল্লপাড়া থেকে বের হয়ে কিছু দূর পেছনে এলে কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়। একাত্তরের ১৩ এপ্রিল কুণ্ডেশ্বরীতে সাকা চৌধুরীর নেতৃত্বে অধ্যক্ষ নূতনচন্দ্র সিংহকে গুলি করে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ। নূতনচন্দ্র সিংহের ছেলে প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ মামলার সাক্ষী। তিনি নিজ কার্যালয়ে বসে বললেন, ‘একসময় মনে করা হতো বিচার হবে না। এত দিন পর হত্যা মামলার রায় হচ্ছে, এটাই স্বস্তির কথা।’ এর বেশি মন্তব্য করতে তিনি অস্বীকৃতি জানালেন। নিরাপত্তা নিয়েও না। জগতমল্লপাড়ার আশীষ চৌধুরী কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ে চাকরি করেন। তাঁর দেখা মিলল এখানে। আশীষ বলেন, ‘আমি তো চাকরিতে আছি। জানিনা বাড়ির খবর। পুলিশ গেছে শুনেছি।’ আশীষের প্রতিবেশী শ্রীপল সরকার হারিয়েছেন তাঁর চাচাকে। তিনি উদ্বেগ নিয়ে বলেন, ‘আমার মতে, বিডিআর দরকার ছিল। কারণ, বাঁশখালী সাতকানিয়ায় রায়ের পর কী হয়েছে দেখেননি?’ বিকেলে উনসত্তরপাড়া, জগতমল্লপাড়া ও গহিরার সামনে দিয়ে চার-পাঁচটি পুলিশের গাড়ি টহল দিতে দেখা গেছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা নিয়ে একটি বৈঠকও করেছে। তবে প্রশাসন এতটা বিচলিত তা দেখাতে নারাজ। এতে লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে যায় বলে ভয় পাচ্ছে তারা।
রাউজান থানার ওসি এনামুল হক বলেন, ‘আমরা নিয়মিত টহলের অংশ হিসেবে ঘুরছি। কোনো সমস্যা নেই। আশা করি, হবেও না।’