আনন্দ উৎসবে'কিশোর আলো'র যাত্রা শুরু
নতুন এক অতিথি আসবে কাল। রঙিন ঝলমলে। তাকে সাদর সম্ভাষণ জানানোর আয়োজনটি কিন্তু সম্পন্ন হয়ে গেল আজ সোমবার বিকেলেই। এরই মধ্যে তার নাম সবারই জানা হয়ে গেছে—‘কিশোর আলো’। শিশু-কিশোরদের জন্য ‘প্রথম আলো’র সহযোগী এক মাসিক পত্রিকা।
যাদের জন্য এই প্রকাশনা, সেই শিশু-কিশোরদের জমজমাট উত্সবে পরিণত হয়েছিল ‘কিশোর আলো’র প্রকাশনা অনুষ্ঠানটি। আজ বিকেলে প্রথম আলো কার্যালয় সিএ ভবনের দশম তলার মিলনায়তনটি হয়ে উঠেছিল বাঁধভাঙা আনন্দে উচ্ছ্বসিত।
পরিকল্পনাটিই ছিল এমন। গুরুগম্ভীর ছকে বাঁধা কোনো কিছু থাকবে না। গলা ছেড়ে চেঁচানো, হর্ষধ্বনি আর করতালিতে পরিবেশ মুখর করে সবাই যেন অনাবিল আনন্দে নিজেদের সঁপে দিতে পারে অনায়াসে। শুরু হয়েছিল জাতীয় সংগীত গেয়ে। সুরের ধারার শিক্ষার্থীরা জাতীয় সংগীতের পর গেয়েছেন ‘আমরা সবাই রাজা’। মঞ্চে তামাম দুনিয়ার বিষয়বস্তু দুই হাতে করে চশমা চোখে এক কিশোরের ছবি আঁকা বিশাল ডিজিটাল পর্দা। তাতে আহ্বান—‘এসো, জন্ম দিই এক নতুন পৃথিবী’। তার সামনে দাঁড়িয়ে দুই কিশোর-কিশোরী সঞ্চালক আওয়াজ তুলল, ‘আমরা সবাই আছি ভালো’, দর্শকদের মধ্যে থেকে অজস্র কণ্ঠের জবাব এল, ‘আমরা পড়ি কিশোর আলো’।
এরপর মাহমুদুজ্জামান বাবু শোনালেন ‘সময়ের দীর্ঘ পথে’ ও ‘আমি বাংলার গান গাই’। এর পরই হলো এক আজব কাণ্ড। মঞ্চে এক কাগজের বাক্স নিয়ে হাজির ‘কিশোর আলো’র নির্বাহী সম্পাদক সিমু নাসের। আহ্বান জানালেন ‘উন্মাদ’ পত্রিকার সম্পাদক কার্টুনিস্ট আহসান হাবিবকে। দুজনে মিলে মোরগ উন্মোচন করবেন। দর্শকদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব হয়তো খানিকটা ছিল, মুখে বললে কী হবে, সত্যি কি আর তাই হয়! কবুতর ওড়ানোর চল না হয় আছে, তাই বলে মোরগ ছাড়া! সে যে রীতিমতো অভিনব। বাস্তবেও তা-ই ঘটল। বাক্স খুলে জ্যান্ত এক মোরগ ছেড়ে দিলেন তাঁরা। এরপর এলেন ‘কিশোর আলো’র সম্পাদক আনিসুল হক। তাঁর সঙ্গে আবার সবার গলা ছেড়ে হাঁক—‘কেমন আছি, বেশ ভালো/ জন্ম হলো কিশোর আলো’। অতএব, এবার তার মোড়ক খোলার পালা।
মোড়ক উন্মোচন পর্বে মঞ্চে আসেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, অভিনয়শিল্পী আফজাল হোসেন, জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন, কার্টুনিস্ট আহসান হাবিব, বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্টজয়ী মুসা ইব্রাহীম, জাতীয় দলের ক্রিকেটার নাসির হোসেন। তাঁদের সঙ্গে ছিল একদল কিশোর-কিশোরীও।
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ আরব্য উপন্যাসের আলাদিনের চেরাগের দৈত্যের গল্পটি শুনিয়ে শিশু-কিশোরদের বলেন, ‘তোমাদের ভেতরে ওই দৈত্যের চেয়েও বেশি শক্তি আছে। সেই শক্তি বের করে আনতে হলে সোনার আঙটি দিয়ে ঘষা দিতে হবে। “কিশোর আলো” সেই সোনার আঙটির মতো দেশের শিশু-কিশোরদের ভেতর থেকে তাদের শক্তি বের করে আনবে। সেই শক্তিতে তারা দেশকে বদলে দেবে।’ অতিথিরা ‘কিশোর আলো’র অগ্রযাত্রা কামনা করে শুভেচ্ছা জানান।
নাসির হোসেন তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা দিয়ে বলেন, ‘লক্ষ্য ঠিক রেখে দৃঢ় মনোবল নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলেই সাফল্য আসবে।’
এরপর সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরোটা সময় চলে গান আর অতিথিদের শুভেচ্ছা জানানোর পালা। জাদু দেখিয়ে তাক লাগিয়েছেন জুয়েল আইচ। বড় পর্দায় দেখানো হয়েছে মজার মজার কার্টুন আর চলচ্চিত্রের অংশবিশেষ। এর ফাঁকে তিন ‘ম’—মাদক, মিথ্যা ও মুখস্থকে ‘না’ বলার শপথ করিয়েছেন আনিসুল হক। সঞ্চালনা করেছে অঞ্জিষ্ণু নূর, ফারিহা চৌধুরৗ ও সাদাত হোসেন।
অনুষ্ঠানে গান শুনিয়েছেন শিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ, চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠজয়ী কোনাল, ক্লোজআপ তারকা শিল্পী আতিক, পুলক ও কিশোর। শেষটা ছিল আরও জমজমাট—প্রমিথিউসের বিপ্লবের গানে গানে।