ফরিদপুরে মৃত্যুর দেড় বছর পর ময়নাতদন্তের জন্য আদালতের নির্দেশে কবর খুঁড়ে লাশ না পাওয়ায় কবরের মাটি ও কাফনের কাপড়ের অংশ সংগ্রহ করা হয়েছিল। সে আলামত ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তা গ্রহণ করেনি ফরেনসিক বিভাগ।
এ অবস্থায় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার আদেশ কীভাবে প্রতিপালিত হবে, তা নিয়ে সংকটে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
২০১৫ সালের ৭ নভেম্বর ফরিদপুরের সালথা উপজেলার খোঁয়াড় গ্রামের অফাজদ্দিন মাতুব্বরকে (৬০) তাঁর নিজ বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ওই দিনই তাঁকে গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়। দাফনের পর অভিযোগ ওঠে, সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে অফাজদ্দিনকে।
গত ২৭ মার্চ মৃত অফাজদ্দিনের ভাতিজি মইফুল বেগম বাদী হয়ে ফরিদপুরের ৩ নম্বর আমলি আদালতে এ ব্যাপারে একটি হত্যা মামলা করেন। বাদীর আবেদনে আদালতের বিচারিক হাকিম মইনুল ইসলাম গত ২৬ এপ্রিল কবর থেকে অফাজদ্দিনের লাশ তুলে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে ময়নাতদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আদেশ দেন।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী গত সোমবার খোঁয়াড় গ্রামের কবরস্থান থেকে লাশ উত্তোলন করতে যান ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী হাকিম মো. মতিউর রহমান খান, সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আমিনুল হক, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সালথা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রুবেল মিয়াসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কিন্তু কবর খুঁড়ে মৃত ব্যক্তির লাশের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
নির্বাহী হাকিম মো. মতিউর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কবর খুঁড়ে আমরা লাশটি পাইনি। তবে কবর থেকে পাওয়া কাফনের কাপড়ের কিছু অংশ এবং ওই কবরের কিছু মাটি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়েছে।’
ময়নাতদন্তের জন্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো কবরের মাটি ও কাফনের কাপড়ের অংশবিশেষ গ্রহণ করেনি ফরেনসিক বিভাগ। গত মঙ্গলবার বিকেলে এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রুবেল ওই আলামত নিয়ে হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে গেলে তা ফিরিয়ে দেন ওই সময় ফরেনসিক বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক মাজহারুল ইসলাম।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা গেছে, আদালতের নির্দেশে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। লাশ না পাওয়ায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়নি। এ ছাড়া আলামত হিসেবে আনা কবরের মাটি ও কাফনের কাপড় তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ এস এম খবিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব ছিল লাশের ময়নাতদন্ত করা। যদি হাড়ও পাওয়া যেত, তা-ও আমরা গ্রহণ করতাম। কিন্তু আমরা মাটি ও কাপড়ের কী ময়নাতদন্ত করব? তা সম্ভব নয় বিধায় আমরা তা ফিরিয়ে দিয়েছি।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. রুবেল মিয়া বলেন, ‘আদালত আমাকে ময়নাতদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেছিল। কবরে লাশ না পাওয়া যাওয়ায় আমরা কবরের মাটি ও কাফনের কাপড় ময়নাতদন্তের জন্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তা তারা গ্রহণ করেনি। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে এ বিষয়টি আদালতে অবগত করে এ ব্যাপারে আমাদের কী করণীয় আদালতের কাছে তা জানতে চাইব।’
গতকাল বুধবার প্রথম আলোয় ‘কবর খুঁড়ে পাওয়া গেল না লাশ’ শিরোনামে এ-সংক্রান্ত একটি খবর প্রকাশিত হয়।