মুক্তিযোদ্ধার আকুতি
টাকার অভাবে ভাঙা পায়ের চিকিৎসা করাতে পারছেন না মুক্তিযোদ্ধা মো. খোরশেদ আলী। ৭৫ বছর বয়সে তিনি এখন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছেন আর ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের চন্দ্রপাড়া গ্রামের বাসিন্দা তিনি।
সোমবার খোরশেদ আলী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘মাসে দুই হাজার টাকা মুক্তিযোদ্ধা ভাতা এবং রাইতে উপজেলা পরিষদ এলাকা ও পৌর শহরে পাহারাদারের দায়িত্ব পালন কইরগ্যা যেইয়া পাইতাম, হেইয়্যা দিয়াই কোনো রহমে জীবনডারে চালাইতাম। অ্যাহন আয় নাই, চিকিৎসা করামু ক্যামনে?’
খোরশেদ আলী জানান, ২০১২ সালের অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ডান পায়ের হাঁটুর নিচের দুটি হাড় ভেঙে যায়। টাকার অভাবে প্রথমে কবিরাজি চিকিৎসা নেন। পরে ধারদেনা করে বরিশালের একটি ক্লিনিকে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত পা জোড়া লাগেনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মাসুদ হাসান জানান, তাঁর ডান পায়ের দুটি হাড় ভেঙে গেছে। এ-জাতীয় চিকিৎসা এখানে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ পেলে তিনি আবার স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারবেন।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সামসুল আলম মিয়া বলেন, ‘যুদ্ধের পর থেকে খোরশেদ নিজেকে জনসেবায় নিয়োজিত রেখেছেন। পরোপকারের জন্য তিনি এলাকায় সুপরিচিত। অথচ ভাঙা পা নিয়ে তিনি এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন।’
খোরশেদ আলী জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি দুধ বিক্রেতা সেজে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর খবরাখবর সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধাদের জানাতেন। এ খবর ফাঁস হওয়ার পর হানাদার বাহিনী তাঁদের গ্রামের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাঁর বড় ভাই সেকান্দার আলী, চাচা তাজেম আলী, কাঞ্চন আলী ও সোনে আলী, ভাগনিজামাই শাহাবুদ্দিনসহ পরিবারের আরও নয় সদস্যকে গুলি করে হত্যা করে। এ ছাড়া বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। ওই সময় একটি ভাঙা কবরের মধ্যে লুকিয়ে থেকে তিনি জীবন বাঁচিয়েছেন। প্রায় আট বছর আগে তাঁর স্ত্রী মারা গেছেন। নিজস্ব জমি কিংবা থাকার মতো ঘর নেই।