বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার রায় ১৮ ডিসেম্বর
পুরান ঢাকায় বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে ১৮ ডিসেম্বর। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গতকাল বুধবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪-এর বিচারক এ বি এম নিজামুল হক রায়ের এই দিন ধার্য করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের সরকারি কৌঁসুলি এস এম রফিকুল ইসলাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আসামিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করেছে। তিনি মনে করেন, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে সক্ষম হয়েছে। এ কারণে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির আরজি জানিয়েছে।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জানান, এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যার যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার প্রত্যক্ষ কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে উপস্থাপন করতে পারেনি। এ কারণে তারা মনে করে, আসামিরা খালাস পাবেন।
গত বছরের ৯ ডিসেম্বর বিরোধী দলের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে পথচারী বিশ্বজিৎ দাসকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মীরা নির্মমভাবে পেটায় ও কোপান। বাঁচার জন্য দৌঁড় দিলে তিনি শাঁখারীবাজারের রাস্তার মুখে পড়ে যান। রিকশাচালক রিপন তাঁকে রিকশায় তুলে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক বিশ্বজিৎকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার সময় বিশ্বজিৎ লক্ষ্মীবাজারের বাসা থেকে শাঁখারীবাজারে নিজের দর্জি দোকানে যাচ্ছিলেন। হত্যার ঘটনায় ওই রাতে সূত্রাপুর থানায় মামলা করে পুলিশ। পরদিন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। এরপর সাত আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে মামলাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) স্থানান্তর করা হয়।
তদন্ত শেষে চলতি বছরের ৫ মার্চ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ২১ জন কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় ডিবি পুলিশ। এই আসামিদের মধ্যে আটজন রফিকুল ইসলাম, মাহফুজুর রহমান, রাশেদুজ্জামান, কাইয়ুম মিয়া, এস এম কিবরিয়া, এমদাদুল হক, সাইফুল ইসলাম ও গোলাম মোস্তফা কারাগারে আটক আছেন। বাকি ১৩ আসামি—রাজন তালুকদার, ইউনুস আলী, আজিজুল হক, তারেক বিন জোহর, আলাউদ্দিন, ওবায়দুল কাদের, ইমরান হোসেন, আজিজুর রহমান, মীর মো. নূরে আলম, আল আমিন শেখ, মনিরুল হক, কামরুল হাসান ও মোশাররফ হোসেন পলাতক রয়েছেন।
এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ বিশ্বজিতের বাবাসহ ৩২ জনকে সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করে। উভয় পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে রাষ্ট্রপক্ষ গত ২৭ নভেম্বর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করে। এরপর কারাগারে আটক আট আসামির পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তাঁদের আইজীবীরা। পলাতক ১৩ আসামির পক্ষে গতকাল যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীরা। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ সব মিলিয়ে পাঁচ দিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে।