বিরোধপূর্ণ জমি দখল আনসারের লাঠিপেটা
ঢাকার আশুলিয়ার বেরন এলাকায় গতকাল সোমবার আনসার সদস্যরা দখলকারীদের ব্যাপক লাঠিপেটা করে বিরোধপূর্ণ একটি জমি পুনর্দখলে নিয়েছেন। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
আশুলিয়া থানার পুলিশ ও ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাজধানীর দারুস সালামের সুমিত কুমার সাহা ২০১২ সালে আশুলিয়ার বেরন এলাকার দিয়াখালী মৌজায় ফজলুল হকের কাছ থেকে বেসরকারি নারী ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্র-সংলগ্ন চার বিঘা জমি কেনেন। এর আগেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই জমি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়।
ওই ঘটনার পর ফজলুল হক ২০১০ সালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ঢাকার সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন। আদালত ২০১১ সালে বিরোধপূর্ণ ওই জমি দখলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, একটি আবাসনপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়কের পাশে ২০০২ সালে তারা প্রায় ১১ বিঘা জমি কেনে। এরপর তারা ছয় বিঘা জমির ওপর হাসপাতাল নির্মাণ করে। হাসপাতালের পূর্ব পাশে বাকি পাঁচ বিঘা জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে ২০১২ সালে। পরে আদালতের নিষেধাজ্ঞার কথা বলে পুলিশ বাধা দিলে কয়েক মাস আগে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হয়।
সুমিত কুমার সাহা জানান, জমি কেনার পর সমস্যায় পড়ে আদালতসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেন। এতে প্রতিকার না পেয়ে গত রোববার রাতে তিনি লোকজন নিয়ে ওই জমি দখলে নেন। এ সময় ওই জমিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিয়োগ করা আনসার সদস্যরা নিরাপদ স্থানে চলে যান। কিন্তু গতকাল বেলা ১১টার দিকে আনসারের ঢাকা জেলা অ্যাডজুট্যান্ট খলিলুর রহমান, উপজেলা আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে ৭০ থেকে ৮০ জন আনসার সদস্য তাঁদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। আনসার সদস্যদের লাঠির আঘাতে কামাল, সোহেলসহ তাঁদের অন্তত ২০ জন আহত হন। হামলার শিকার হয়ে তাঁরা সেখান থেকে চলে যেতে বাধ্য হন।
গতকাল বিরোধপূর্ণ ওই জমিতে আনসার কর্মকর্তা খলিলুর ও মোস্তাফিজুরসহ অন্য সদস্যদের দেখা যায়।
জানতে চাইলে খলিলুর রহমান বলেন, ‘২০১০ সালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার জন্য আবেদন করলে নিয়ম অনুযায়ী সেখানে ১৫ জন আনসার সদস্যকে মোতায়েন করা হয়। শনিবার রাতে একদল বহিরাগত লোক আনসার ক্যাম্পে অনুপ্রবেশ করে আনসারদের তাড়িয়ে দেয়। গতকাল আমাদের শক্তি বাড়িয়ে তাদের বিতাড়িত করা হয়। কারও ওপর হামলা করা হয়নি।’ তিনি নিরাপত্তার স্বার্থে আনসারের সংখ্যা ২০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ জন করার কথা জানান।
বিরোধপূর্ণ জমির ওপর আনসার ক্যাম্প স্থাপনের বিষয়ে খলিলুর বলেন, ‘হাসপাতালের পক্ষ থেকে করা আবেদনে জমি নিয়ে বিরোধ থাকার বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছিল। আজই (সোমবার) আমরা বিষয়টি নিশ্চিত হলাম।’ এর পরও ক্যাম্প প্রত্যাহার না করে জনবল বাড়ানোর কারণ জানতে চাইলে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি খলিলুর।
এ বিষয়ে নারী ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ক্রয়সূত্রে জমির মালিক হয়ে আমরা সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করছিলাম। কিন্তু সুমিত কুমার সাহা ওই জমির মধ্যে প্রায় চার বিঘা জমির মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করেন। এরপর ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখা হয়।’
আশুলিয়া থানার ওসি বলেন, ‘জমি দখলকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতির বিষয়ে আমাকে অবগত করেননি আনসার সদস্যরা। এরপর পুলিশের দায়িত্ব পালন করে তাঁরা অন্যায় করেছেন।’