কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার দামপাড়া ইউনিয়নের এবি নূরজাহান উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রীদের মধ্যে বাল্যবিবাহের প্রবণতা বেড়ে গেছে। গত দুই মাসে ওই বিদ্যালয়ের ১৮ ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে। গত তিন মাসে উপজেলার দামপাড়া কারার মাহতাব উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের ১৪ ছাত্রীর বাল্যবিবাহ হয়েছে। এতে ওই দুই বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
এবি নূরজাহান উচ্চবিদ্যালয় ও এলাকাবাসীর কাছে জানা গেছে, গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ওই বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণীর ওই ১৮ ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নথিপত্রে উল্লেখ করা জন্ম তারিখ অনুযায়ী ওই ছাত্রীদের বয়স ১২ থেকে ১৫ বছর।
ছাত্রীদের চারজনের বাড়ি সিংপুর ইউনিয়নের বাটিবরাইটিয়া, চারজনের বাড়ি একই ইউনিয়নের টেংগুরিয়া, একজনের বাড়ি একই ইউনিয়নের গুড়াদিঘা গ্রামে এবং চারজনের বাড়ি দামপাড়া ইউনিয়নের বড়কান্দা গ্রামে, দুজনের বাড়ি একই ইউনিয়নের আলিয়াপাড়া গ্রামে, দুজনের বাড়ি একই ইউনিয়নের কাঁঠালকান্দি গ্রামে ও একজনের বাড়ি আছানপুর গ্রামে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এবি নূরজাহান উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর এক ছাত্রী (১২) বলে, ‘এক মাস আগে হঠাৎ আমাদের বাড়িতে কয়েকজন লোক এসে বলেন মা তুমি একটু বাইরে এসো, আমরা তোমাকে দেখব। তাঁদের কথায় আমি কিছু না বুঝলে পরে আব্বা বললে আমি বাইরে আসি। এর কিছু সময় পর তাঁরা আব্বা ও আমঞ্চার সঙ্গে কী জানি আলাপ করে চলে যান। তাঁরা চলে যাওয়ার পর আমঞ্চা আমাকে বলে আগামী শুক্রবার তোমার বিয়ে। এরপর অনেক কান্নাকাটি করি, কিন্তু কোনো লাভ হয় না। তাঁদের কথামতোই আমার বিয়ে হয়ে যায়।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আলিয়াপাড়া গ্রামের কয়েকজন যুবক বলেন, ‘সম্প্রতি আলিয়াপাড়া গ্রামের ষষ্ঠ শ্রেণীপড়ুয়া মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার আগে আমরা তার বাবাকে অনেক বুঝিয়েছি। বাল্যবিবাহের কুফল তুলে ধরে সেটি বন্ধের জন্য অনুরোধ করি। একপর্যায়ে অভিভাবকেরা আশ্বাস দিলেও পরে গোপনে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেন।’
এবি নূরজাহান উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ্ মো. আহসান উল্লাহ বলেন, ‘হঠাৎ করে বাল্যবিবাহের ধুম পড়ে গেছে। এ নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত। অভিভাবক, এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের ডেকে এ ব্যাপারে একটি সচেতনতামূলক সভা করব বলে ভাবছি।’
দামপাড়া কারার মাহতাব উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, গত জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ওই বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর ১৪ ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে। বাধা দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। গোপনে অভিভাবকেরা বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন।
দামপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘মাঝেমধ্যে এলাকার কিছু লোক ইউপি কার্যালয়ে এসে মেয়ের বয়স বাড়িয়ে জন্মসনদ নিতে চান। আমি তাঁদের বুঝিয়ে ফিরিয়ে দিই। বাল্যবিবাহের খবর পেলে বিভিন্ন সময় বাধা দিই।’
নিকলী থানার ওসি মাহবুব আলম বলেন, ‘এ ব্যাপারে প্রতিটি এলাকায় অভিভাবকদের নিয়ে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে একটি করে সভা করার প্রয়োজন।’ ইউএনও হাবিবুর রহমান জানান, এতগুলো বাল্যবিবাহ হয়ে গেলেও কেউ লিখিত বা মৌখিকভাবে উপজেলা প্রশাসনকে জানাননি। বিদ্যালয়গুলোতে সভা ডাকলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।