বাবরের বিচার হলে খালেদার নয় কেন?
১০ ট্রাক অস্ত্র আটক মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিচার চাইলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ সেলিম। আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে তিনি এ দাবি করেন।
শেখ সেলিম বলেন, ‘অস্ত্র আটকের ঘটনায় তত্কালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরের সাজা হয়েছে। তা হলে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিচার হবে না কেন? সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইন সবার জন্য সমান। খালেদা জিয়ারও বিচার হতে হবে।’
শেখ সেলিম বলেন, খালেদা জিয়া যে অস্ত্র চোরাচালানের জন্য দায়ী, সে কথা স্পষ্ট। তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী পুরো বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন। তিনি জানতেন। তিনি কিছুতেই দায়-দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক সাদেক রুমি তাঁকে অস্ত্র আটকের খবর জানিয়েছিলেন। খালেদা জিয়া চুপ করে ছিলেন। এনএসআই তাঁর কথার বাইরে এক পা-ও এগুতে পারে না।
শেখ সেলিম বলেন, যারা “ক্রিমিনাল” তাদের বিএনপি ছেড়ে দিয়েছে।’ তিনি দাবি করেন, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কাছে অস্ত্র পৌঁছে দেওয়ার কাজে জামায়াত-বিএনপি সরকার সহযোগিতা করলে বাংলাদেশ সন্ত্রাসের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হতো। আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ টার্গেট হয়ে থাকত। এই অস্ত্র যে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার হতো না, এর নিশ্চয়তা কী—এ প্রশ্ন তোলেন তিনি। বগুড়ার কাহালু থেকে যে অস্ত্র ধরা পড়েছিল, সে অস্ত্র কোথায়? সে প্রশ্নও তোলেন তিনি। যারা অস্ত্র ধরেছিল, তাদের পুরস্কৃত করার দাবি তোলেন শেখ সেলিম।
আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। বিষয়টা খালেদা জানতেন, আমি এভাবে ভাবতে পারছি না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখাটি প্রধানমন্ত্রীর দ্বারা পরিচালিত। এটি একটি রাজনৈতিক ঘটনা। উলফা চীন বা যেকোনো দেশ থেকে অস্ত্র বাংলাদেশে আনবে, এটা অবশ্যই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানতেন।’
লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা সম্পর্কে জিয়াউর রহমান জানতেন। তিনি জানতেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলে তিনি প্রেসিডেন্ট হবেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার নায়ক ছিলেন জিয়াউর রহমান। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলার ঘটনা জানতেন খালেদা জিয়া। জানতেন হাওয়া ভবনের হাওয়ায় ভাসা যুবরাজ তারেক রহমান। আমি যে বিষয়টি গুরুত্ব দিতে চাই তা হলো, আদালত সাক্ষ্য গ্রহণ করেই রায় দেন। আদালতের ব্যবহারজীবীরা ওই রায়ের বিরুদ্ধে মিছিল করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এটা কি আদালত অবমাননা নয়? রাজনৈতিক দলের কোনো সংঘবদ্ধ অপরাধ কি অপরাধ নয়?
লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘যারা গণতন্ত্রের ঠিকাদারি নিয়েছেন, তাদের গণতন্ত্র বুঝিয়ে দেওয়া দরকার। কথায় কথায় অবৈধ। জন্ম যার অবৈধ, সে তো কথায় কথায় অবৈধ বলবেই। প্রধানমন্ত্রী যদি অবৈধ, সরকার যদি অবৈধ হবে, খালেদা জিয়া কার কাছে এ দাবি, সে দাবি তুলছেন। তিনি স্বীকৃতি দিচ্ছেন না। সারা বিশ্ব বৈধতা দিচ্ছে। নির্বাচনের পর সারা দেশের মানুষ হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে। অবশ্যই শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে। বার বার বলব, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কোনো কোনো সময় আইন প্রয়োগকে নিষ্ঠুরতা মনে হতে পারে। সেটা হলো দৃঢ়তা। সমগ্র দেশের স্বত্ত্বাকে সম্মান প্রদর্শন।’
লতিফ সিদ্দিকী বলেন, এই সংসদ সিদ্ধান্তে আসুক ১০ ট্রাক মামলায় খালেদা জিয়ার বিচার হবে কি না। কাজী ফিরোজ রশীদ বছেন, কোনো ঘটনার গভীরে যেতে হলে প্রথমে ঘটনা উদঘাটন করতে হয়। মূল ঘটনা উদঘাটিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে যখন জানানো হয় তখন তিনি নীরব ছিলেন। রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী এতটুকুও বিব্রত হবেন না, সন্ত্রস্ত হবেন না, সে হতে পারে না।
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে মইনুদ্দিন খান বাদল বলেন, খালেদা নিজেকে সুপার সিটিজেন বানিয়ে ফেলেছেন। আদালত সমন করলে যাবেন না। একদিন প্রশ্ন উঠতে পারে, যিনি আদেশ দিলেন তাঁর কিছু হলো না। যাঁরা আদেশ মানল, তাঁদের বিচারের আওতায় আনা হলো।’ ‘কলঙ্কের’ দাগ লাগায় এনএসআইয়ের নাম পরিবর্তনেরও দাবি জানান তিনি।
বিচার শেষের পর খালেদা জিয়াকে বিচারে আওতায় আনার দাবি কতটা যৌক্তিক, এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন জাতীয় পার্টির সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদ। তোষামোদকারী দিয়ে যেন সংসদ ভরে না যায়, সে বিষয়ে সচেতন থাকতে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আহ্বান জানান তিনি।
আলোচনায় আরও অংশ নেন বগুড়ার সাংসদ আবদুুল মান্নান খান, জাহাঙ্গীর কবীর নানক প্রমুখ।