বাঁধ ও স্পার হুমকিতে ফেলে বালু কাটার মহোৎসব
পশ্চিম পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ, উত্তর ও দক্ষিণে কংক্রিটের স্পার, পূর্ব পাশে যমুনা নদী। এর ঠিক মাঝে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার মেঘাইঘাট এলাকা। এখান থেকে অবৈধভাবে বালু কাটা হচ্ছে। বালু কাটার কারণে সেখানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন কয়েক শ ট্রাক বালু কেটে নেওয়া হলেও প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন।
বালু কাটার ফলে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাঁধ ও স্পার হুমকির মুখে পড়েছে। এ ছাড়া ওই এলাকায় ভাঙন দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, কাজীপুর সদরসহ আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা ভাঙনের হাত থেকে রক্ষার লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ১৯৯৯ ও ২০০১ সালে যমুনা নদীর মেঘাইঘাটের দুই পাশে মেঘাই-১, ২ ও ৩ নম্বর নামে তিনটি কংক্রিটের স্পার নির্মাণ করে। একই সঙ্গে পশ্চিম পাশে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করে। স্পার ও বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণের ফলে ওই এলাকার ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয়।
এলাকাবাসী জানান, মেঘাইঘাট এলাকা থেকে গত এক সপ্তাহ ধরে ট্রাকে করে বালু কেটে নেওয়া হচ্ছে। এলাকার কয়েকজন ব্যক্তি বালু কেটে বিক্রি করছেন। প্রতিদিন শতাধিক ট্রাকে করে বালু বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। এর ফলে কাজীপুর উপজেলা সদর, শত বছরের পুরোনো মেঘাই বাজার, আঞ্চলিক সড়ক ও আশপাশের মেঘাই খুদবান্দি, ঢেকুরিয়াসহ পাঁচটি গ্রাম নতুন করে ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মেঘাইঘাট এলাকার যমুনা নদীরতীর থেকে ১৫ ফুট, ২ ও ৩ নম্বর স্পার থেকে ৬০০ ফুট ও বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৪০০ ফুট দূরে বড় বড় গর্ত করে বেলচা দিয়ে বালু কেটে ট্রাকে তোলা হচ্ছে। সাত-আটজন শ্রমিক এই কাজ করছেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, ১০-১৫ ফুট গর্ত করে বালু কাটা হচ্ছে। সরাসরি রাস্তা তৈরি করে ট্রাক নিচে নামিয়ে অনায়াসেই শ্রমিকেরা বালু সেই ট্রাকে তুলছেন। এক ট্রাক বালুভর্তি করতে ১০-২০ মিনিট লাগে। সহজলভ্য এবং সময় কম লাগায় এখান থেকে স্থানীয় ছয়-সাতজন ব্যক্তি শ্রমিক নিয়োগ করে বালু তুলছেন।
বালু কাটার কাজে নিয়োজিত এক শ্রমিক বলেন, ‘আমরা মালিকের নির্দেশে চলি। কেউ বাধা দিতেও আসেনি। বালু কাটলে ক্ষতি তো হতেই পারে। এগুলো আমাদের দেখার বিষয় না।’
বালু কাটার সঙ্গে জড়িত আবদুর রশিদ ওরফে খোকা মিয়া দাবি করেন, ‘স্থানটিতে প্রায় ১২ বছর আগে মেঘাই উচ্চবিদ্যালয় ছিল। ভাঙনের কারণে বিদ্যালয়ের ঘরটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তিনি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জমি ইজারা নিয়ে বালু কাটছেন। এতে যে গর্ত হচ্ছে তা বর্ষা এলে পুনরায় ভরে যাবে। কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই। আমি একা নই; এখান থেকে লতা বেগম, শহিদুল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম বালু কাটছেন।’
পাউবোর সিরাজগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী বাবুল চন্দ্র শীল বলেন, ওই এলাকায় তৎকালীন সময়ে প্রতিটি স্পার নির্মাণ করতে প্রায় আট কোটি টাকা করে খরচ হয়েছিল। এ ছাড়া বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণেও কয়েক কোটি টাকা খরচ হয়েছে। দুটি স্পার এবং বাঁধের কাছ থেকে বালু তোলার বিষয়টি তিনি জানতে পেরেছেন। বালু কাটার কারণে স্পার ও বাঁধের মারাত্মক ক্ষতি হবে। একই সঙ্গে নতুন করে ভাঙন বাড়বে। বালু কাটা বন্ধ করার জন্য প্রশাসনকে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে জানানো হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাফিউল ইসলাম জানান, মেঘাই ঘাট এলাকার নদীতীরের জমি প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিমালিকানাধীন হলেও তা এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। তাই এখান থেকে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া বালু বা মাটি কাটা যাবে না। বালু কাটা বন্ধ করার জন্য ওই স্থানে অভিযান চালানো হবে।