বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, ‘জাতীয়তাবাদী শক্তি যদি ক্ষমতায় আসে, সত্যিকার অর্থে যারা যুদ্ধাপরাধী, তাদের বিচার হবে। প্রতিহিংসার জন্য যাদের বিচার করা হয়েছে, কাল্পনিক গল্প দিয়ে মামলা তৈরি করা হয়েছে, অবশ্যই সেটা চলে যাবে। আর যারা এই প্রহসনের বিচারে সম্পৃক্ত ছিল, ইনশা আল্লাহ বাংলার মাটিতে তাদেরও বিচার হবে।’
গতকাল মঙ্গলবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর এক সংবাদ সম্মেলনে মাহবুব হোসেন এসব কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ব্যানারে বেলা দুইটার দিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবন মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘বিএনপি যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে বারবার বলে এসেছি, আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রতিফলন হবে সেই বিচারে।’ তিনি আরও বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাবা ’৭২ সালে সেন্ট্রাল জেলে দালাল আইনে আটক ছিলেন। তখন তো তাঁর নাম ছিল না। দীর্ঘ ৪০ বছর পর তাঁকে এখন আসামি করা হয়। তাঁর পক্ষে একজন বিচারপতিকে সাফাই সাক্ষী দেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। তাঁরও আগ্রহ ছিল সত্য বলার যে সালাউদ্দিন কাদের যুদ্ধের সময় পশ্চিম পাকিস্তানে ছিলেন। কিন্তু তাঁকেও সাক্ষ্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, ‘এই মৃত্যুদণ্ডাদেশে আমরা মর্মাহত হয়েছি। আমরা মনে করি, এই ট্রাইব্যুনালে বিচারের প্রক্রিয়ায় প্রচলিত আইন ও আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। আমরা বিশ্বাস করি, দেশের উচ্চতম আদালত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে নির্দোষ ঘোষণা করে মুক্তি দেবেন।’
মওদুদ আহমদ আরও বলেন, ‘ঘোষণার আগেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে রায় সবাই পেয়ে গেছেন। আরও দুঃখের বিষয়, আইন মন্ত্রণালয়ে নাকি মে মাসে এ রায় লেখা শুরু হয়ে গেছে, যখন তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়নি। আশা করি, সরকার ও ট্রাইব্যুনাল তাঁদের অবস্থান পরিষ্কার করবেন। আর যদি না করতে পারেন, তাহলে মানুষের মনে বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে সন্দেহটা থেকে যাবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ফোরামের সভাপতি আইনজীবী রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, ‘আমরা ন্যায়বিচারের পক্ষে। কিন্তু বিচারের প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে। আমরা মনে করি, এ মামলার বিচারের প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক আইন ও ক্রিমিনাল বিধিবিধান যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি। এ রায়ের বিরুদ্ধে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে সাবেক স্পিকার জমির উদ্দিন সরকার, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী, সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন, ফোরামের মহাসচিব ও আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী এ সময় ওই মিলনায়তনে উপস্থিত ছিলেন।