পুলিশ সদস্যরা সামাজিকমাধ্যমে যা করতে পারবেন, আর যা পারবেন না
অতিগুরুত্বপূর্ণ এবং গোপনীয় কোনো দাপ্তরিক তথ্য ই-মেইলের মাধ্যমে আদান–প্রদান করতে সদস্যদের নিরুৎসাহিত করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। বিশেষ অনুমতি ছাড়া একই সময়ে একজন পুলিশ সদস্যকে মুঠোফোনের দুটির বেশি সিম ব্যবহারেও নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তর ১০ ফেব্রুয়ারি সদস্যদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারসংক্রান্ত একটি নির্দেশনা দেয়। সেখানে বলা হয়েছে, এই নির্দেশনা মেনে না চললে সেটি অসদাচরণ এবং অদক্ষতা হিসেবে গণ্য করা হবে।
নির্দেশনা অমান্য করলে সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় এবং প্রয়োজনে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পুলিশের সব ইউনিটে এই নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়, পুলিশ সদস্যদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইস পেশাদারিত্বের সঙ্গে ব্যবহার না করা হলে বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ সদস্যদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার সম্পর্কিত একটি সুস্পষ্ট নির্দেশনার প্রয়োজন রয়েছে।
মুঠোফোন ও ইমেইলের বিষয়ে নির্দেশনায় বলা হয়, একই সময়ে মুঠোফোনের দুটির বেশি সিম ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি সিম নিজ নামে নিবন্ধন করা থাকতে হবে। দেশের প্রচলিত আইন ও নির্দেশনা মেনে সিম কিনতে হবে। হারানো বা নষ্ট সিম চূড়ান্তভাবে অচল ও অকার্যকর করে একই নম্বরের বা ভিন্ন নম্বরের নতুন সিম কেনা যাবে। বাহিনীর জন্য বরাদ্দ করা সিম হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলে অবশ্যই একই নম্বরের নতুন সিম তুলতে হবে। ই–মেইল–সংক্রান্ত প্রাতিষ্ঠানিক তথ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে দাপ্তরিক ই–মেইল ব্যবহার করতে হবে। অতিগুরুত্বপূর্ণ এবং গোপনীয় কোনো দাপ্তরিক তথ্য ই-মেইলের মাধ্যমে আদান–প্রদান করা নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
ব্যক্তিগত ই-মেইল ব্যবহারের সময় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থাগুলো ভালোভাবে যাচাই–বাছাই করতে হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, একটি সুশৃঙ্খলবাহিনী হিসেবে সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং ডিজিটাল ডিভাইস কীভাবে ব্যবহার করবেন, সেগুলোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর উদ্দেশ্য, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ডিজিটাল ডিভাইসের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা।
পুলিশ সদস্যদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কনটেন্ট ও বন্ধু নির্বাচনে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে অপরাধী বা সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রকে এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে। ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও শেয়ার করার ক্ষেত্রে শালীনতা বজায় রাখতে হবে পুলিশ সদস্যদের। যেকোনো ধরনের গুজব, মিথ্যাচার বা উসকানিমূলক তথ্য প্রচারের বিরুদ্ধে প্রত্যেক পুলিশ সদস্যকে সচেতন থাকতে হবে।
ইন্টারনেটে সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করার সময় অপ্রীতিকর কোনো কিছু খোঁজ করা বা নিষিদ্ধ কোনো সাইটে প্রবেশ করা (বিশেষ করে অফিশিয়াল ডিজিটাল সরঞ্জাম ব্যবহারের মাধ্যমে) যাবে না।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন কিছু করা যাবে না, যাতে রাষ্ট্র, সরকার বা বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে। জাতীয় ঐক্য ও চেতনার পরিপন্থী কোনো পোস্ট দেওয়া যাবে না। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত বা ধর্মনিরপেক্ষতা পরিপন্থী কর্মকাণ্ড করা যাবে না। রাজনৈতিক মতাদর্শ, জঙ্গি কর্মকাণ্ড অথবা ধর্মীয় উগ্রবাদসংশ্লিষ্ট কোনো মন্তব্য বা কনটেন্ট আপলোড করা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের গুজব বা বিভ্রান্তিমূলক পোস্ট করা যাবে না। লিঙ্গবৈষম্য বা এ–সংক্রান্তে বিতর্কমূলক কোনো কনটেন্ট আপলোড করা যাবে না। জনমনে অসন্তোষ বা অপ্রীতিকর মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে, এমন কোনো বিষয় লেখা, অডিও বা ভিডিও প্রকাশ করা যাবে না। চিহ্নিত, অভ্যাসগত অপরাধী বা এরূপ কোনো বিতর্কিত কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তোলা ও পোস্ট করা যাবে না।