চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ঢোকার মুখে মেঝেতে শোয়া আমিনুল ইসলাম। শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে গেছে তাঁর। চোখের ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। পাশেই পাখা হাতে বসে বাতাস করছেন ভাই মনজুরুল ইসলাম। শরীরে জ্বালাপোড়ার কারণে এক মুহূর্তও স্বস্তি পাচ্ছিলেন না।
আমিনুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগুন দেখার পর বের হতে চাইছিলাম। কিন্তু দারোয়ান বের হতে দেয় নাই। পরে আগুন ধরে যায় গায়ে। যদি বের হতে পারতাম, তাইলে কিছুই হতো না।’
আমিনুল ইসলামের বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগের বিষ্ণুপুরে। বয়স তাঁর ২৫-এর কাছাকাছি। পাঁচ বছর ধরে তিনি কাজ করছেন সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে। জুট সাইডের রিসিভার হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।
সোমবার দুপুর ১২টার দিকে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগুন তখন মিটমিট করে জ্বলছিল। আমার সঙ্গে ছিলেন আরও একজন। আগুন দেখে আমরা পকেট গেটের দিকে রওনা দিই। পৌঁছে দেখি, গেটের দরজা বন্ধ, তালা দেওয়া। তারপর আর বের হতে পারিনি।’
আমিনুল বলেন, ‘দারোয়ান বের হতে দেননি। দারোয়ান বলেন, “কর্তৃপক্ষের নির্দেশ আছে। এখন কেউ বের হতে পারবেন না।” পরে ডিপোর ভেতরের দিকে আবার হাঁটা দিই। এর মধ্যে বিকট শব্দে রাসায়নিকের কনটেইনার বিস্ফোরিত হয়। গায়ে উড়ে এসে পড়ে রাসায়নিক ও আগুন।’
এসব কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন আমিনুল। বলেন, কনটেইনারের আরেকটু কাছাকাছি থাকলে তাঁর মৃত্যু হতো। গায়ে আগুন লাগার পর তিনি কোনো রকমে বের হয়ে আসেন। ডিপোর বাইরের একটা মসজিদের পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে আগুন নিভিয়েছেন। শরীরের কোনো পোশাক ছিল না। পরে স্থানীয় ব্যক্তিরা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
গত শনিবার রাতে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কেশবপুর এলাকায় বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগার পর বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হন ৪১ জন। তাঁদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের সদস্য রয়েছেন ৯ জন। আহত হন প্রায় ২৫০ জন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে ১০২ জন দগ্ধ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে চক্ষু বিভাগে ভর্তি রয়েছেন ১৫ জন। এ ছাড়া বার্ন ইউনিট, সার্জারি বিভাগ এবং অর্থোপেডিক বিভাগে চিকিৎসাধীন আরও অন্তত ৫০ রোগীর চোখের সমস্যা রয়েছে। তাঁদেরও চক্ষু বিভাগের অধীনে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আগুন লাগার পরপরই তা নেভাতে কাজ শুরু করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। একপর্যায়ে আগুন ছড়িয়ে রাসায়নিক থাকা কনটেইনারে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে মুহূর্তেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় ডিপো এলাকা।