ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার টাঙ্গন নদের সড়ক সেতুর সঙ্গে নির্মিত রাবার ড্যামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত পানির স্রোতের ধাক্কায় সাগুনী শালবনের বিস্তীর্ণ এলাকা নদে বিলীন হয়ে গেছে। রাবার ড্যামের ভাটিতে প্রয়োজনীয় এলাকাজুড়ে গাইড বাঁধ নির্মাণ না করায় এ অবস্থা হয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন ধারণা করছেন।
বাঁশগাড়া গ্রামের অজিত চন্দ্র রায় বলেন, ‘যেভাবে পানির ধাক্কা লেগে নদীর পাড় ভাঙতেছে, সিমেন্টের বাঁধ না দিলে সাগুনী শালবাগানটা রক্ষা করা মুশকিল হয়ে যাবে।’
একই ধরনের আশঙ্কার কথা জানালেন সাগুনী গ্রামের নাজমুল হক, অনিল কুমার রায়, জগদীশ চন্দ্র রায়সহ একাধিক ব্যক্তি। পীরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীর (এলজিইডি) দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি নদে রাবার ড্যাম নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে এলজিইডির মাধ্যমে ২০১০-১১ অর্থবছরে আট কোটি ১৮ লাখ ৬২ হাজার ৪০৯ টাকার চুক্তি মূল্যে সাগুনী সড়ক সেতুর পাশে টাঙ্গন নদের ওপর ৯০ মিটার দীর্ঘ রাবার ড্যামের অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে।
২০১১ সালের ৩০ জানুয়ারি এ ড্যামের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়। নদী শাসনের জন্য রাবার ড্যামের দুই পাশে ৫০ মিটার দীর্ঘ এবাটমেন্ট দেয়ালসংলগ্ন ১২ মিটার করে সিসি ব্লক বসানো হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ড্যাম এলাকায় গিয়ে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ড্যামের এবাটমেন্টের সঙ্গে বসানো সিসি ব্লকের মাধ্যমে ১২ মিটারজুড়ে নদী শাসন করা হয়েছে। কিন্তু এবারের বর্ষাকালে টাঙ্গনের উপচে পড়া পানির তোড়ে সিসি ব্লকের বাইরে সাগুনী শালবনের ব্যাপক এলাকা ভেঙে গেছে। ইতিমধ্যে সাগুনী শালবনের ব্যাপক এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
পীরগঞ্জ বন বিট কর্মকর্তা নিরঞ্জন রায় জানান, পীরগঞ্জ বন বিটের আওতায় বাঁশগাড়া ও সাগুনী মৌজার ১৪৯ একর এলাকাজুড়ে সাগুনী শালবন।
রাবার ড্যামের তদারকিতে নিয়োজিত পীরগঞ্জ এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী কাজী মিজানুর রহমান জানান, নদী শাসনের মাধ্যমে পানির জলাধার নির্মাণের জন্য রাবার ড্যামের ভাটিতে ১০০ মিটার ও উজানে ১৫০ মিটার গাইড বাঁধ নির্মাণের জন্য এলজিইডির প্রকল্প পরিচালক বরাবর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে একটি প্রকল্প প্রস্তাব (পিপি) পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো সাড়া মেলেনি। পীরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী তাজমিল খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দিনাজপুর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. আলী কবীর বলেন, সাগুনী শালবনটির ব্যাপক এলাকা ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন এবং যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন।