জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আনোয়ার হোসেনের পদত্যাগের দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার সর্বাত্মক কর্মবিরতির পাশাপাশি উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছে সাধারণ শিক্ষক ফোরাম। সন্ধ্যার পর উপাচার্য আনোয়ার হোসেনও স্ত্রীসহ বাসভবনের সামনে মাদুর পেতে পাল্টা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন। এদিকে চলমান আন্দোলনকে অন্যায় কর্মকাণ্ড অভিহিত করে ফোরামের কর্মসূচি প্রত্যাখ্যান করেছে শিক্ষক মঞ্চ।
গতকাল বিকেলে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে সাধারণ শিক্ষক ফোরাম সংবাদ সম্মেলন করে সর্বাত্মক কর্মসূচির পাশাপাশি সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কামরুল আহসান। তিনি বলেন, উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
ফোরামের আহ্বায়ক মুহম্মদ হানিফ আলী বলেন, ‘গত ২৫ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলনে আমরা জানিয়েছিলাম, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে উপাচার্য পদত্যাগ না করলে ১ অক্টোবর থেকে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সেই ঘোষণার অংশ হিসেবে আমরা আজ (মঙ্গলবার) উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বেলা দুইটা থেকে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছি।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন এবং তদন্ত কমিটির কাজ চলাকালে উপাচার্য সিনেট, সিন্ডিকেট, অর্থ কমিটি, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল ও ডিসিপ্লিনারি বোর্ডের সভা পরিচালনা করবেন না এবং নতুন কোনো নিয়োগ দেবেন না বলে শিক্ষামন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন। তাঁর আশ্বাসের ভিত্তিতে ২৪ আগস্ট থেকে ১৫ দিনের জন্য আন্দোলন স্থগিত করেছিল ফোরাম। কিন্তু গত সোমবার উপাচার্য তিনজন ডিন নিয়োগ দিয়েছেন। এই বিতর্কিত নিয়োগ বাতিল করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনের পর ফোরামের আন্দোলনরত শিক্ষকেরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। সন্ধ্যার পর উপাচার্য ঢাকা থেকে ফিরে এ অবস্থা দেখে আর বাসভবনে ঢোকেননি। তিনি মাদুর নিয়ে স্ত্রীসহ পাল্টা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। আন্দোলনরত শিক্ষকেরা বাসভবনের সামনে থেকে না যাওয়া পর্যন্ত তিনি অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। তবে শিক্ষকেরা বলছেন, উপাচার্য পদ থেকে আনোয়ার হোসেন পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তাঁরা বাসভবনের সামনে থেকে সরবেন না।
এদিকে গতকাল বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলাভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে শিক্ষক মঞ্চের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মানস কুমার চৌধুরী। উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনকে অন্যায় কর্মকাণ্ড ও দুর্বৃত্তায়ন বলে উল্লেখ করে বলা হয়, তদন্ত কমিটির কাজ চলাকালে নতুন কর্মসূচি কেবল অনৈতিক চাপ রাখার অপতৎপরতা। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষাকে জিম্মি করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রতিবাদ করে শিক্ষক মঞ্চ।
সংবাদ সম্মেলনে তিনজন ডিন নিয়োগের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও উপ-রেজিস্ট্রারকে অবরুদ্ধ করারও সমালোচনা করে বলা হয়, উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দিতে পারবেন কি পারবেন না—এমন বিষয় নিয়ে কোনো শিক্ষক কোনো মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কোনো চুক্তি করতে পারেন না।
রেজিস্ট্রার অবরুদ্ধ: তিনজন ডিন নিয়োগ বাতিলের দাবিতে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবু হাসানকে অবরুদ্ধ করে শিক্ষক ফোরাম। উপাচার্য নিয়োগ দিলেও রেজিস্ট্রারকে অবরুদ্ধ করছেন কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ফোরামের নেতা কামরুল বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা উপাচার্যের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। তিনি হস্তক্ষেপ না করা পর্যন্ত আমরা রেজিস্ট্রারকে অবরুদ্ধ রাখব।’