মার্কিন সাংবাদিক জুডিথ মিলারের সঙ্গে আমার একবারই দেখা হয়েছে, ইরাক যুদ্ধের বছর দুয়েক পর নিউইয়র্কের হার্ভার্ড ক্লাবে। জাতিসংঘের সাবেক উপমহাসচিব শশী থারুরের সঙ্গে যেতে হয়েছিল নোট নেওয়ার জন্য। জুডিথ নিউইয়র্ক টাইমস-এর বিখ্যাত সাংবাদিক, ইরাকের পারমাণবিক মারণাস্ত্র রয়েছে, তাঁর এই প্রতিবেদনকে সে দেশের বিরুদ্ধে সামরিক হামলার পক্ষে জোরালো যুক্তি হিসেবে ব্যবহার করেছিল মার্কিন সরকার। ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি জুডিথের প্রতিবেদনের তথ্য উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, মহাবিপর্যয় ঘটে যাওয়ার আগে ইরাকের পারমাণবিক কর্মসূচি খতম করতে হবে। যুদ্ধের পরে জানা গেল, ইরাকের কোনো মারণাস্ত্র নেই, পারমাণবিক বোমা বানানোর মতো ক্ষমতাই সাদ্দাম সরকারের ছিল না।
আমি যখনকার কথা বলছি, তত দিনে প্রমাণ হয়ে গেছে জুডিথ মিলার মিথ্যা বলেছেন। আত্মপক্ষ সমর্থন করে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি মিথ্যা বলিনি।’ অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে (অর্থাৎ পেন্টাগন ও হোয়াইট হাউস থেকে) তাঁকে এই তথ্য দেওয়া হয়েছিল। হার্ভার্ড ক্লাবের আলোচনাতেও জুডিথ একই কথা বললেন। যুক্তি দেখিয়ে প্রশ্ন রাখলেন, ‘রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যখন কোনো “গোপনীয়” তথ্য দেওয়া হয়, তা আমি অবিশ্বাস করি কীভাবে?’ তা ছাড়া জুডিথের যুক্তিতে দেশ যখন নিরাপত্তাহুমকির মুখে, তখন সাংবাদিক শুদ্ধতা নয়, দেশপ্রেম অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
একজন সাংবাদিক স্টেনোগ্রাফার নন, কারও কথা তোতাপাখির মতো বলা তাঁর পেশাদারি দায়িত্ব নয়।
আমার মনে আছে, সেই বৈঠকে দ্য নেশন পত্রিকার কলাম লেখক এরিক এলটারম্যান প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আপনি কি সাংবাদিক, না স্টেনোগ্রাফার (শ্রুতিলেখক)? কেউ একজন, তা সাধারণ কেউ-বা রাষ্ট্রপ্রধান, একটা কিছু বললেন, সে কথার সত্যতা যাচাই-বাছাইয়ের আগে শ্রুতলেখকের মতো তা ছেপে দেবেন? আপনি কি সরকার বা রাষ্ট্রের প্রচারযন্ত্রের অংশ?’
এই প্রশ্নের জবাবে জুডিথ ইনিয়ে-বিনিয়ে কী বলেছিলেন, তা আর মোটেই গুরুত্বপূর্ণ নয়। ইরাক যুদ্ধ মানবতার বিরুদ্ধে একটি অপরাধ, তিনি সেই অপরাধের অংশ। কারণ, তাঁর দেওয়া তথ্য ব্যবহার করে মার্কিন সরকার নিজেদের সিদ্ধান্তের সাফাই গেয়েছিল। এ কারণে জুডিথ পরে নিউইয়র্ক টাইমস থেকে সরে যেতে বাধ্য হন। তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের ব্যর্থতার দায়ভার নিউইয়র্ক টাইমস অবশ্য নিজের কাঁধে নেয়। পত্রিকার সম্পাদক বিল কেলার এক সম্পাদকীয় মন্তব্যে স্বীকার করেন, যে তথ্যসূত্র ব্যবহার করে পারমাণবিক মারণাস্ত্রের কথা বলা হয়েছিল, তা নির্ভরযোগ্য ছিল না। তিনি জানান, গোপন তথ্যের জন্য সাদ্দামের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আহমদ চালাবি ও অন্য বিরোধীদলীয় ইরাকিদের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার জন্যই এই বিপর্যয়।
সাংবাদিকতায় তথ্য যাচাই-বাছাই
‘ফ্যাক্ট চেক’ কথাটা এর আগে থেকেই প্রচলিত ছিল, কিন্তু এই জুডিথ মিলার কেলেঙ্কারির পর যুক্তরাষ্ট্রের অনেক পত্রপত্রিকায় তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের কড়া প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম চালু হয়েছে। পত্রিকা, বার্তা সংস্থা বা টিভি যে খবর পরিবেশন করবে, তার সত্যতা নির্ণয়ের দায়িত্ব তাদের, পাঠক বা বাইরের অন্য কারও নয়। সংবাদমাধ্যমের পরিবেশিত খবরের ভিত্তিতে যুদ্ধ বেধে যেতে পারে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হতে পারে, বর্ণবাদী লড়াই হতে পারে, সম্পূর্ণ নিরীহ মানুষের জীবন যেতে পারে। এমন ঘটনা একবার নয়, বহুবার ঘটেছে। তথ্য সরবরাহের দায়িত্ব সংবাদপত্রের, সে যখন সত্যের বদলে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে, তখন সে সংবাদের দায়দায়িত্ব সে এড়াতে পারে না।
আমাদের দেশে আগে যেমন, এখনো তেমনি তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের খুব একটা চর্চা নেই। কর্তাব্যক্তিরা জেনেবুঝে মিথ্যা বললেও তার সত্যতা চ্যালেঞ্জ করার কোনো রীতি আমাদের সংবাদপত্রের নেই। সে জন্য অনেক ক্ষেত্রেই সরকারি প্রেস বিবৃতি ও পত্রিকার প্রতিবেদনের মধ্যে কোনো প্রভেদ থাকে না। রাষ্ট্রব্যবস্থা কর্তৃত্ববাদী হওয়ায় নিজেদের নিরাপত্তার কারণে সরকারি বক্তব্যের বিরোধিতা করার কোনো চেষ্টাই হতো না। সমস্যা হলো, কর্তৃত্ববাদী বা আধা সামরিক শাসনের অবসান হলেও আমাদের সাংবাদিকেরা পুরোনো অভ্যাস পুরোপুরি ত্যাগ করতে পারেননি। অনুমান করি, নিরাপত্তার ভীতি এখনো একদম অমূলক নয়, এই সীমাবদ্ধতার হয়তো সেটাই আসল কারণ।
সত্য কোনটি?
তথ্য যাচাই-বাছাই নিয়ে এই সাতকাহনের একটি কারণ রয়েছে। সম্প্রতি দুর্গাপূজার সময় বাংলাদেশে অভাবিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ঘটে গেছে। দেশ-বিদেশের পত্রপত্রিকায় এসব ঘটনার প্রতিবেদন বেরিয়েছে, দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত ও নিহতদের পরিবারের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে সচিত্র প্রতিবেদনও বেরিয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, এটি ছিল বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ের সর্ববৃহৎ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা।
কিন্তু গত ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এক বিবৃতিতে বলেছেন, দাঙ্গার সব খবর বানোয়াট, তথ্যমাধ্যমের বানানো গল্প। তিনি স্বীকার করেন, মোট ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে, যার চারজন মুসলমান, আর ‘মাত্র’ দুজন হিন্দু। তিনি দাবি করেন, কোথাও কোনো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতিটি বাংলাদেশের কোনো কোনো পত্রপত্রিকায় দাঁড়ি-কমাসহ প্রায় একইভাবে ছাপা হয়েছে। কোনো কোনো পত্রিকায় একই দিন বা আগে-পরে মন্দিরে অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ করেছে, কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী যা বলেছেন, তা যে সত্য নয়, এ কথা কেউ বলেননি। অর্থাৎ তাঁর বক্তব্যকে কোনো প্রতিবেদক চ্যালেঞ্জ করেননি। প্রথমটি সত্য হলে দ্বিতীয়টি সত্য হওয়া সম্ভব নয়। কর্তৃপক্ষকে না চটিয়ে এই উভয় তথ্যই কীভাবে পরিবেশন করা যায়, তার একটি উদাহরণ দেখেছি বিবিসি বাংলা সার্ভিসের ওয়েবসাইটে, যেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতিটি অবিকৃত অবস্থায় প্রকাশ করলেও সে খবরের মাঝখানে আরও তিনটি খবরের সূত্র তুলে দিয়েছে, যার প্রতিটিতে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে সরেজমিনে কথা বলে সহিংসতার এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। যদি অতিরিক্ত তথ্যসমূহ পাঠ ছাড়া শুধু পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি কেউ পড়েন, তিনি হয়তো জানতেও পারবেন না একটি ভয়াবহ মানবিক দুর্যোগ ঘটে গেছে বাংলাদেশে।
প্রশ্ন হলো, সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে যখন কোনো দাবি করা হয়, যা সব মাপকাঠিতেই অসত্য বা বিভ্রান্তিকর—একজন দায়িত্বশীল সাংবাদিক কীভাবে তা পাঠকের কাছে তুলে ধরবেন?
ট্রাম্প যখন উদাহরণ
২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এই প্রশ্ন সাংবাদিকদের জন্য সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই ভদ্রলোক ক্ষমতা গ্রহণের দিন থেকে মিথ্যা বলা শুরু করেছেন। যেমন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অভিষেক অনুষ্ঠানের চেয়ে অনেক বেশি দর্শকের জনসমাগম হয়েছিল, এ কথা তিনি নিজ মুখপাত্রের মাধ্যমে দাবি করেন। সে দাবি সঙ্গে সঙ্গে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। কোনো কোনো পত্রিকায় ও টিভি নেটওয়ার্কে ওবামা ও ট্রাম্পের অভিষেকের ছবি পাশাপাশি ছাপিয়ে হাতেনাতে বুঝিয়ে দেওয়া হয়, ট্রাম্পের কথাটা মিথ্যা। প্রথম প্রথম প্রেসিডেন্টের প্রতি সম্মান দেখিয়ে কোনো কোনো পত্রিকা মিথ্যা না বলে অসত্য (‘আনট্রুথ’) বলা শুরু করে। পরে অবশ্য সেই কৃত্রিম সৌজন্য বাতিল করে অধিকাংশ পত্রপত্রিকাই মিথ্যাকে মিথ্যা হিসেবে অভিহিত করা শুরু করে। ট্রাম্পের ডজন ডজন মিথ্যার হিসাব রাখতে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা এক বিশেষ ‘ফ্যাক্ট চেকার’-এর ব্যবস্থা করে। এই ফ্যাক্ট চেকার অনুসারে, চার বছরের শাসনামলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মোট ৩০ হাজার ৫৭৩টি ‘মিথ্যা অথবা বিভ্রান্তকর’ কথা বলেছেন।
যে মানদণ্ডে ওয়াশিংটন পোস্ট ফ্যাক্ট চেক করে থাকে, তা প্রয়োগ করা হলে বাংলাদেশের মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবিকে মিথ্যা অথবা বিভ্রান্তিকর, পোস্ট-এর ভাষায় ‘ফলস অর মিসলিডিং’ বলতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশের কোনো পত্রিকা সে কথা বলেছে, তা আমার চোখে পড়েনি।
ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর পর ট্রাম্প অনবরত দাবি করে চলেছেন ভোটে কারচুপি হয়েছে। এই দাবিকে আমলে নিয়ে একটা ক্যু বা অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয় ৬ জানুয়ারি, তাতে বেশ জানমালের ক্ষতিও হয়। সে ঘটনার পর ট্রাম্প যতবার নিজের পক্ষে সাফাই গেয়ে কারচুপির অভিযোগ এনেছেন, প্রায় সব দায়িত্বসম্পন্ন তথ্যমাধ্যম তাৎক্ষণিক টিপ্পনী যোগ করে তাঁর এই দাবি অসত্য বলে পাঠককে জানিয়ে দিয়েছে। তাদের বলার ধরনটি খুবই স্পষ্ট। যেমন ‘ট্রাম্প কোনো প্রমাণ ছাড়া দাবি করেন ভোটে কারচুপি হয়েছে’ বা ‘ট্রাম্প দাবি করেন ৬ জানুয়ারি তাঁর সমর্থকেরা ক্যাপিটলে হামলা করেনি, যা ইতিমধ্যে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে’। (এই মডেল অনুসরণ করে বাংলাদেশের পত্রপত্রিকা অনায়াসে বলতেই পারত, কোনো প্রমাণ ছাড়াই পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন ইত্যাদি)।
যেহেতু ট্রাম্প অনবরত মিথ্যা বলেন, সেসবের হিসাব রাখার বদলে কোনো কোনো তথ্যমাধ্যম ইদানীং তাঁর বক্তব্য পরিবেশন বন্ধ করে দিয়েছে। কোনো কোনো টিভি চ্যানেল ট্রাম্প মিথ্যা বলা শুরু করলে তাঁর ভাষণের সরাসরি সম্প্রচার থামিয়ে দিচ্ছে। এই কৌশল সমর্থন করে খ্যাতনামা টিভি উপস্থাপক রেইচেল ম্যাডো বলেছেন, এই লোকটার কথা থেকে দাঙ্গা হতে পারে, মানুষের জান যেতে পারে। সে জন্য তাঁর কোনো কথা সম্প্রচার না করাই ঠিক।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট, সাবেক প্রেসিডেন্ট বা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কথা—তা সত্য, অসত্য বা বিভ্রান্তিকর যা-ই হোক, তা জানার অধিকার পাঠকের রয়েছে। আমেরিকার সোসাইটি অব প্রফেশনাল জার্নালিস্টস মনে করে, পাঠকের কাছ থেকে তথ্য গোপন রাখা সাংবাদিকতার নীতিবিরোধী। এই সংস্থার সাবেক সভাপতি ডেভিড কুইলিয়ার মনে করেন, নীতিনির্ধারকেরা যখন কিছু বলেন—তা সত্য হোক বা না হোক—প্রকাশ করতেই হবে। একজন প্রেসিডেন্ট বা ক্ষমতাধর ব্যক্তি তাঁর দায়িত্ব কীভাবে পালন করছেন, তা জানার জন্যই সে কথাগুলো জানাতে হবে।
দায়িত্ব কার
তথ্যের যাচাই-বাছাই সাংবাদিকের দায়িত্ব। এই দায়িত্ব তিনি কীভাবে পালন করবেন, তার একটি নীতিমালা বা কোড অব এথিকস প্রণয়ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সোসাইটি অব প্রফেশনাল জার্নালিস্টস। এই নীতিমালার মোদ্দা কথা চারটি:
১. সত্য অনুসন্ধান করো এবং তা অবিকৃতভাবে প্রকাশ করো,
২. যথাসম্ভব চেষ্টা করো যাতে কারও ক্ষতি বা অনিষ্ঠ না হয়,
৩. স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করো এবং
৪. সংবাদ পরিবেশনে স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ থাকো।
ইরাক যুদ্ধের বিপর্যয়ের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সংবাদ সংগ্রহ ও পরিবেশনের ক্ষেত্রে আরেকটি নতুন বিষয় যুক্ত হয়েছে। যে সংবাদ পরিবেশিত হলো, তা শুধু নির্ভুল হওয়াই যথেষ্ট নয়, সেই সংবাদের পূর্বাপর প্রসঙ্গ, তার ‘কনটেক্সট’ যেন পাঠকের কাছে অবিকৃতভাবে পৌঁছায়, এখন সেটিও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই উভয় দিকে শ্রেষ্ঠত্ব যারা অর্জন করেছে, তার একটি হলো এ দেশের ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও (এনপিআর)। এই সংস্থার সংবাদ নীতিমালায় বলা হয়েছে, সত্যে পৌঁছানো তাদের লক্ষ্য। এ জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলো তথ্যের প্রতিপাদন বা যাচাই-বাছাই, পাশাপাশি তার পরিপ্রেক্ষিত শ্রোতা-পাঠককে ধরিয়ে দেওয়া।
বাংলাদেশের সাংবাদিকেরা কে কীভাবে সংবাদ লিখবেন বা পরিবেশন করবেন, আমার পক্ষে তা বলা সাজে না। বাংলাদেশের বাস্তবতা ও আমেরিকার বাস্তবতা এক নয়। এ দেশে কোনো সাংবাদিক বা সংবাদ সংস্থা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বা বাইডেনের কথা চ্যালেঞ্জ করলে বা তাঁকে মিথ্যাবাদী বললে মাথা কাটা যাওয়ার আশঙ্কা নেই। অন্য দিকে বাংলাদেশে তেমন কিছু করলে কী কী হতে পারে, তা আমরা অনুমান করে নিতে পারি। তা ছাড়া স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণের যে পরামর্শ উভয় নীতিমালায় দেওয়া হলো, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা খুব বাস্তবসম্মত নয়। বাংলাদেশে তাঁদের কী বাস্তবতা মেনে কাজ করতে হয়, তা উল্লেখ করে একজন প্রবীণ সাংবাদিক লিখেছেন, তাঁকে নিত্য নিজের ছায়ার সঙ্গে লড়াই করে কাজ করতে হয়। অন্য কথায়, ঘাড়ের ওপর একজন দাঁড়িয়ে আছেন, ঠিক-বেঠিক দেখভাল করা তাঁর দায়িত্ব।
এই জটিলতা সত্ত্বেও একজন সাংবাদিক স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ থাকতে পারেন, প্রতিপদে সমঝোতা না করেও নিজের পেশাদারি দায়িত্ব পালন করতে পারেন, এ কথায় আমি বিশ্বাস করতে চাই। তিনি একজন শ্রুতিলেখক নন, কারও কথা তোতাপাখির মতো বলা তাঁর পেশাদারি দায়িত্ব নয়, অন্তত এ কথায় তো আমরা সম্মত হতেই পারি।
আবারও বলি, সত্য বলা কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়।