পরপর তিন নৌ দুর্ঘটনায় ১৩ সংগঠনের উদ্বেগ
স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনটি নৌ দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে ১৩টি নাগরিক সংগঠন। সোমবার নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে স্বাক্ষরিত এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনগুলোর নেতারা উদ্বেগের কথা জানান।
বিবৃতিতে নৌ দুর্ঘটনা প্রতিরোধে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং হতাহতদের পরিবারগুলোকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ২৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। পাশাপাশি অনেক যাত্রী নিখোঁজ রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা ও বরিশালের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রায় ৮০ জনের মধ্যে অন্তত ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ওই ঘটনার ১২ দিনের মাথায় ৫ জানুয়ারি সকালে নারায়ণগঞ্জের ধলেশ্বরী ও বুড়িগঙ্গার মোহনায় বরিশাল থেকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি ফারহান-৬-এর ধাক্কায় একটি যাত্রীবাহী ট্রলার ডুবে ১০ যাত্রী নিখোঁজ হন। দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশে কয়েক দিন অভিযান চালিয়ে নয়জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এর তিন দিন পর ৮ জানুয়ারি ঢাকা থেকে বরিশাল যাওয়ার পথে যাত্রীবাহী এমভি সুরভী-৯ লঞ্চের ইঞ্জিন কক্ষে আগুন লাগে। এতে কেউ হতাহত হননি। তবে এ ঘটনার তথ্যচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করায় লঞ্চের কর্মীরা বরিশাল নদীবন্দরে কয়েকজন যাত্রী ও গণমাধ্যমকর্মীকে মারধর করেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, পরপর তিনটি নৌযান দুর্ঘটনার কবলে পড়লেও নৌ মন্ত্রণালয় এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ওই কমিটি ৩ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দিলেও অভিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এখনো দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অন্য দুটি ঘটনায় নৌ মন্ত্রণালয় কিংবা নৌপরিবহন অধিদপ্তর তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কি না, তা এখনো অজ্ঞাত রয়েছে।
এসব ধারাবাহিক দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নাগরিক সংগঠনগুলোর নেতারা মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ও যথেষ্ট আন্তরিকতা সত্ত্বেও নৌপরিবহন ব্যবস্থায় অনেক ত্রুটিবিচ্যুতি ও সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষগুলোর কমবেশি গাফিলতি কিংবা উদাসীনতা রয়েছে। যে কারণে অভ্যন্তরীণ নৌ খাত এখনো জনবান্ধব হয়ে ওঠেনি।
বিবৃতি দেওয়া নাগরিক সংগঠনগুলো হচ্ছে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি, গ্রিন ক্লাব অব বাংলাদেশ (জিসিবি), বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক লীগ, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়ন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ, নিরাপদ নৌপথ বাস্তবায়ন আন্দোলন, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন, মিডিয়া ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডেভেলপমেন্ট (মেড), বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলন, যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, পিস, মানবাধিকার উন্নয়ন সংস্থা ও পুরান ঢাকা পরিবেশ উন্নয়ন ফোরাম।