পড়া, পরিবার, ব্যবসা চালাচ্ছে ছোট্ট পপি
‘বাবা প্রতিবন্ধী। আমরা তিন বোন। আমি সবার বড়। ছোট্ট একটা মুদির দোকান আছে আমাদের। সেখানে প্রতিদিনই আমাকে বিক্রি-বাট্টার কাজ করতে হয়। পড়াশুনার তেমন সময় পাই না। শুধু রাতে পড়েই পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছি। সময় পেলে আরও ভালো ফল করতে পারতাম।’ কথাগুলো নবম শ্রেণীর ছাত্রী পপি রানী মহন্তের। সে জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের জিয়াপুর গ্রামের অমল চন্দ্র মহন্তের মেয়ে। পাশের জিয়াপুর উচ্চবিদ্যালয়ে পড়ে পপি।
অমল ভূমিহীন। একসময় তিনি অন্যের দোকানের কর্মচারী ছিলেন। পপি পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তি পায়। বৃত্তির সেই টাকা জমিয়ে স্থানীয় আমিরের বাজারে একটি ছোট মুদির দোকান দেয়। ওই দোকানে বিদ্যালয়ের সময় ছাড়া দিনের বাকি সময়টুকু বেচা-বিক্রি করে সে।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, নিজেদের দোকানে দাঁড়িয়ে গ্রামের আবদুল হালিমকে সয়াবিনের তেল মেপে দিচ্ছে পপি। এ সময় তার বাবা বলেন, ‘হামার পাডা (পা) ছোট থাকেই খোঁড়া। শরীরও ভালো না। কাম-কাইজ করবার পারি না। হামার মেয়াটাই দোকান চালায়। সাথত ও পড়াশুনাও করেছে।’ তিনি হতাশার সুরে বলেন, ‘মেয়াটা এত খাটনি করে। কিন্তুক লাব কী? হামরা গরিব মানুষ। চেয়ারম্যান-মেম্বারের কাছত কতবার গেছি। হামি একডা প্রতিবন্ধী কাডও পাই নাই। তা ছাড়া পড়াশুনা কইরে ওকে চাকরিই কে দিবেক? তার চেয়া হামি কই বিয়া দিমু। কিন্তুক ওই খালি পড়বারই চায়।’
পপি নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলে, ‘এখন না হয় কম খরচে গ্রামে পড়তে পারছি। এক বছর পর যখন কলেজে যাব, তখন খরচ চালাব কীভাবে জানি না!’
জিয়াপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুহুল আনোয়ার বলেন, ‘পপি নাচে, গানে, অভিনয়ে এমনকি বক্তৃতায়ও অসাধারণ। বিদ্যালয় থেকে আমরা তাকে সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করছি।’ মামুদপুর ইউপির চেয়ারম্যান শারফুল ইসলাম তালুকদার জানান, চাহিদা অনেক। তবে অমলের নাম তালিকায় আছে। সামনে বরাদ্দ এলে তাঁকে দেওয়া হবে।