সুন্দরবন ও সংলগ্ন বিভিন্ন খাল ও নদ-নদীতে কীটনাশক প্রয়োগ করে অবৈধ মাছ শিকার চলছেই। জেলে নামধারী দুষ্কৃতকারীদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে বনের মৎস্যসম্পদ ও জলজ প্রাণীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে। কতিপয় মৎস্য আড়তদার, দাদনদাতা এবং ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু নেতার মদদ ও বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার কারণে তা রোধ করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সাল থেকে এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত কীটনাশক প্রয়োগে মাছ ধরার বিভিন্ন ঘটনায় ১১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসব ঘটনায় ৫৪টি মামলা হয়। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বনজীবী অভিযোগ করেন, প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের ঘটনা অনেক বেশি এবং প্রতিদিনই জেলে নামধারী দুর্বৃত্তরা কীটনাশক প্রয়োগ করে মাছ ধরছে।
জেলে ও বন বিভাগের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ, নলিয়ান রেঞ্জ, শরণখোলা রেঞ্জের বিভিন্ন খাল ও নদী এলাকায় কীটনাশক প্রয়োগ করে মাছ ধরা হচ্ছে। দুর্বৃত্তরা বনে প্রবেশের সময় তাদের নৌকায় লুকিয়ে রোটেনন, পেসকিল, ডায়াজিনন, রিপকর্ড, ফাইটার, মার্শাল, ওস্তাদ ও ক্যারাটে-জাতীয় কীটনাশক নিয়ে যায়। পরে জোয়ারের আগে ওই কীটনাশক চিড়া, ভাত বা অন্য কিছুর সঙ্গে মিশিয়ে নদী ও খালের পানির মধ্যে ছিটিয়ে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পানিতে ভেসে ওঠে। পরে এসব মাছ আড়তে আনা হয়।
মংলা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, এ ধরনের কীটনাশক মূলত ধানসহ বিভিন্ন শাকসবজির ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ মারার কাজে ব্যবহার করা হয়। এগুলো খুবই বিষাক্ত।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, কীটনাশক প্রয়োগ করা হলে ছোট-বড় সব ধরনের মাছ মারা যায়। তবে দুষ্কৃতকারীরা সেখান থেকে শুধু বড় মাছগুলো সংগ্রহ করে। কিন্তু এই ছোট মাছগুলো তো বড় মাছের খাবার। ফলে ওই এলাকার খাদ্যচক্রে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। কীটনাশকের বিষক্রিয়া সংশ্লিষ্ট এলাকায় চার মাস থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত থাকতে পারে।
শরণখোলার বিভিন্ন মৎস্য ব্যবসায়ী ও আড়দতার সূত্রে জানা গেছে, জেলে নামধারী এসব দুর্বৃত্তের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রয়েছেন স্থানীয় কতিপয় মৎস্য আড়তদার, দাদনদাতা ও ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতা। এ ছাড়া একশ্রেণীর অসাধু কীটনাশক বিক্রেতারাও এর সঙ্গে জড়িত।
স্থানীয় একাধিক বনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মাঝেমধ্যে কীটনাশক ব্যবহারকারী জেলেদের পুলিশ ও বন বিভাগ গ্রেপ্তার করে। তবে তাদের পৃষ্ঠপোষকেরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়। এ ছাড়া বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা উৎকোচ নিয়ে কীটনাশক ব্যবহারকারী জেলেদের বনে প্রবেশের অনুমতি দেন বলেও তাঁরা জানান।
তবে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা খলিলুর রহমান ও শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা কাশ্যপি বিকাশ চন্দ্র বলেন, বনকর্মীরা কোনোভাবেই এর সঙ্গে জড়িত নন।
সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, বন বিভাগের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।