সুনামগঞ্জের সুরমা নদীতে যাত্রীবাহী ট্রলারে আগুন লাগার ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১ জনে পৌঁছেছে। গতকাল সোমবার রাত থেকে আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত আরও আটজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে গতকাল অগ্নিদগ্ধ তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল।
নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারে গতকাল রাত থেকে আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত নদীতে তল্লাশি চলে। সকাল ১০টার পর থেকে তল্লাশি সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। পুলিশের দাবি, নদীতে আর কোনো নিখোঁজ লাশ নেই। স্থানীয় লোকজন বলছে, এ ঘটনায় আরও সাতজন এখনো নিখোঁজ রয়েছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার হারুনুর রশিদ প্রথম আলোকে জানান, আজ বিকেলে ঢাকা থেকে একটি ডুবুরি দল সুনামগঞ্জ পৌঁছাবে। দলটি সিলেটের ডুবুরি দলের সঙ্গে মিলে আবার তল্লাশি চালাবে।
গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে ছাতক উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের বেতুরা গ্রামের পাশে সুরমা যাত্রীবাহী একটি ট্রলারে আগুন ধরে যায়। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ বালু-পাথর কোয়ারি থেকে শতাধিক শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের লোকজনকে নিয়ে ট্রলারটি কিশোরগঞ্জ ইটনা উপজেলায় যাচ্ছিল। ট্রলারে ইটনা ছাড়াও নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ি উপজেলার শ্রমিকেরাও ছিলেন।
ট্রলারে থাকা শ্রমিক আবু তাহের ও সঞ্জীব সাহা জানান, দুই উপজেলার শ্রমিকেরা ভোলাগঞ্জ থেকে ট্রলারটি ভাড়া করে বাড়ি ফিরছিলেন। শ্রমিকদের সঙ্গে তাঁদের পরিবারের সদস্য নারী-শিশুরাও ছিলেন। ট্রলারটি রাত সাড়ে আটটার দিকে বেতুরা গ্রামের পার্শ্ববর্তী সুরমা নদীতে আসার পর হঠাত্ ভেতরে আগুন ধরে যায়। এতে যাত্রীরা প্রাণ বাঁচাতে নদীতে লাফিয়ে পড়েন। খবর পেয়ে ছাতক ও দোয়ারাবাজার থানার পুলিশ এসে নৌকার ভেতর থেকে অগ্নিদগ্ধ তিনজনের লাশ উদ্ধার করে। এঁদের মধ্যে একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তিনি হলেন নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ি উপজেলার পাঁচহাত গ্রামের রোকেয়া বেগম (৪৫)। আগুনে পুড়ে যাওয়ায় অন্য দুজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় প্রায় ৪০ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে নারী-শিশুই বেশি।
ট্রলারের ভেতরে থাকা নারীশ্রমিক জমিলা খাতুন জানান, ভেতরে একটি কেরোসিনের চুলায় রাতের খাবার রান্নার জন্য আগুন ধরানোর পর হঠাত্ চুলায় বিস্ফোরণ ঘটে। এতে পুরো ট্রলারের ভেতর ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে যায়। তখন যে যেভাবে পারে নদীতে ঝাঁপ দেয়। ভেতর থেকে অনেক নারী-শিশুই বের হতে পারেননি।