গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। আর যেকোনো নির্বাচনে সর্বোচ্চসংখ্যক দলের অংশগ্রহণ বাঞ্ছনীয়।
বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে ভারতের মনোভাব জানতে চাইলে সে দেশের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং এসব কথা বলেন। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব গতকাল সকালে সাড়ে ২১ ঘণ্টার সফরে ঢাকায় আসেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে তিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্র, নির্বাচন, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিয়ে ভারতের অবস্থান তুলে ধরেন।
সুজাতা সিং সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। এ ছাড়া সকালে ঢাকায় পৌঁছার পর তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দুপুরে প্রায় ২০ মিনিট বৈঠক করেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব। এ সময় পররাষ্ট্রসচিবসহ অন্যান্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এরপর শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্তে ৩০ মিনিটের বেশি সময় আলোচনা করেন সুজাতা সিং। ঢাকার সরকারি সূত্রগুলো মনে করে, একান্ত বৈঠকের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের কোনো বার্তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন তিনি।
একান্ত বৈঠকের আগের আলোচনায় শেখ হাসিনা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে দুই পক্ষের উদ্যোগ নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন। এ ক্ষেত্রে তিনি সীমান্ত প্রটোকল বাস্তবায়নের তাগিদ দেন।
সুজাতা সিং জানান, ভারতের পার্লামেন্টের শীতকালীন অধিবেশন চলাকালে ৬ ডিসেম্বর সীমান্ত প্রটোকল বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনী বিল উত্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক: বিএনপির চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে সুজাতা সিং জানান, ভারত চায় বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকুক।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীর বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা ইউএনবি এ তথ্য জানায়। গতকাল বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের সঙ্গে তাঁর গুলশানের বাসায় বৈঠক করেন সুজাতা সিং।
শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেছেন, এই অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়নের স্বার্থে বাংলাদেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত দেখতে চায় ভারত।
বৈঠকে খালেদা জিয়া ভারতের পররাষ্ট্রসচিবকে বলেন, ভারত বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
এরশাদের সঙ্গে বৈঠক: দুপুরে বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ সরনের বাসায় মধ্যাহ্নভোজের পর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের সঙ্গে বৈঠক করেন সুজাতা সিং।
প্রায় এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে এরশাদ সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হোক এবং তাতে জাতীয় পার্টিকে (জাপা) অংশ নিতে উৎসাহ জুগিয়েছেন সুজাতা সিং।
গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময়: সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আগে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে রাজধানীর একটি হোটেলে মতবিনিময় করেন সুজাতা সিং।
বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে ভারত সব দলের অংশগ্রহণ আশা করে কি না—জানতে চাইলে সুজাতা সিং বলেন, ‘গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হলে আপনাকে নির্বাচন করতেই হবে। আর যেকোনো নির্বাচনে সর্বোচ্চসংখ্যক দলের অংশগ্রহণ থাকাটা বাঞ্ছনীয়।’
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব আশা প্রকাশ করেন, আসন্ন নির্বাচনে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে। এ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হবে এবং জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।
সুজাতা সিং বলেন, বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচন দেখতে চায় ভারত। বাংলাদেশের জন্য এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ সময়। পৃথিবীর যেকোনো দেশের নাগরিকের মতো বাংলাদেশের নাগরিকদেরও অবাধে ও স্বচ্ছতার সঙ্গে তাঁদের প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার রয়েছে।
বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতায় ভারতের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে সুজাতা সিং বলেন, ‘ভারতের স্বার্থেই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় আমাদের সমর্থন রয়েছে।’
গতকাল সকালে সুজাতা সিং ঢাকায় আসেন। তাঁকে বহনকারী ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ বিমান সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রসচিব।
আজ সকাল আটটায় সুজাতা সিংয়ের ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে।