ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চণ্ডীপাশা ইউনিয়নে হতদরিদ্রদের কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকের তালিকায় ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী ও অবস্থাপন্ন কৃষকের নাম রয়েছে। ওই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বরুণাকান্দা গ্রামে কর্মরত ৭৫ জন শ্রমিকের তালিকায় তাঁদের নাম পাওয়া গেছে।
বরুণাকান্দা গ্রামে গত শনিবার গিয়ে জানা যায়, ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুল কাদির শ্রমিকের তালিকা তৈরি করেছেন। তালিকায় তদারকি কর্মকর্তা হিসেবে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা এ টি এম আমিনুল ইসলাম ও ইউপি চেয়ারম্যান এমদাদুল হক ভূঁইয়ার স্বাক্ষর রয়েছে।
এলাকার অনেকে জানান, তালিকায় নাম রয়েছে—এমন অনেক শ্রমিককে কাজে না নিয়ে ইউপি সদস্য কিছু নিজস্ব লোককে শ্রমিক সাজিয়েছেন। তালিকায় থাকা শ্রমিক জিয়াউর রহমানের (আইডি নম্বর ৫৩৬৩১) পৌর শহরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর বাড়িতে রয়েছে পাকা ঘর ও বিশাল মৎস্য খামার। এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তাঁকে বাড়িতে ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও পাওয়া যায়নি। তবে এ ব্যাপারে জিয়াউরের ছোট ভাই ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিবুর বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি আপনার সঙ্গে পরে যোগাযোগ করব।’
মো. শফিকুল হাসান চাকরি করেন একটি বেসরকারি সংস্থায়। তাঁর নামও শ্রমিকের তালিকায় রয়েছে। বাড়িতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। এ সময় তালিকায় শফিকুলের নাম থাকা প্রসঙ্গে তাঁর মা রেজিয়া খাতুন বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে কিছু জানি না।’ গিয়াস উদ্দিন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রায়ের বাজারের তেল ব্যবসায়ী। তাঁর নামও রয়েছে শ্রমিকের তালিকায়।
ওই গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, প্রকল্পের শ্রমিকের তালিকায় এমন অনেকের নাম রয়েছে, যাঁরা কোনো দিন কাজেও আসেননি। তাঁদের স্থান পূরণ করছেন ইউপি সদস্যের নিয়োজিত কিছু ঠিকা শ্রমিক। সানাউল্লাহ ও আবুল কাশেমের নামও শ্রমিকের তালিকায় রয়েছে। তবে সানাউল্লাহ নিরাপত্তারক্ষীর (সিকিউরিটি গার্ড) চাকরি করেন। আর কাশেম ঢাকায় থাকেন।
মো. আমির হোসেন নামের এক শ্রমিক জানান, তাঁর নাম তালিকাভুক্ত থাকলেও ইউপি সদস্য তাঁকে কাজে নেননি।
শ্রমিকের তালিকায় নাম থাকা প্রসঙ্গে অবস্থাপন্ন কৃষক আবদুল খালেক (৫৫) বলেন, ‘আমার চেয়ে আরও অবস্থাপন্নদের নাম রয়েছে। তাহলে আমারটা থাকলে দোষ কী?’
তালিকার তদারকি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, শ্রমিকের তালিকা যাঁরা তৈরি করেছেন, বিষয়টি তাঁদের জিজ্ঞেস করে জেনে নিন। তবে আবদুল কাদির জানান, দলের চাপে অনেকের নাম শ্রমিকের কাতারে তালিকাভুক্ত করতে হয়েছে।
এমদাদুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘এমনটা হওয়ার কথা নয়। বিষয়টি আমি দেখব।’