দেবকাঞ্চন

দেবকাঞ্চন। রমনা পার্ক থেকে তোলা ছবি l লেখক
দেবকাঞ্চন। রমনা পার্ক থেকে তোলা ছবি l লেখক

শীতের শুষ্কতায় নগরীর প্রকৃতি অনেকটাই রুক্ষ। ধুলো জমে গেছে গাছের বাকলে ও পাতায়। বৃষ্টি আসা অবধি অপেক্ষা করতে হবে বৃ‌ক্ষের প্রকৃত সবুজ ফিরে পেতে। তবু বৃক্ষ ফুল ফোটায়। পৃথিবীর অনেক শহরই পানি দিয়ে ধোয়া হয়। সম্প্রতি ভারতের চেন্নাই শহরে গিয়ে দেখেছি, মানুষ যেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলে, খুব সকালে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা তা সরিয়ে নেওয়ার পর ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পুরো জায়গাটা ঢেকে দেয়। এক দশক ধরে ঢাকা শহরে বসবাস, কিন্তু কোনো দিন এক চিমটি ব্লিচিং পাউডার ছিটাতে দেখিনি। বর্তমানে দুজন আধুনিক যুগের নগরপিতা বিষয়টি ভেবে দেখবেন আশা করি। গুলশান ১ থেকে ২ নম্বরে যেতে মূল সড়কের উন্নয়নকাজ চলছে। আইল্যান্ডের অনেক তাজা গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে। কয়েকটি দেবকাঞ্চনও দেখলাম। শুকনা পাতা নিয়ে পড়ে আছে সড়কের এক পাশে। পরিকল্পিতভাবে এসব মাঝারি আকৃতির গাছ তুলে স্থানান্তর করা যেত।

বাংলাদেশে বনবাদাড়ে ও পার্কে কিছু প্রজাতির কাঞ্চনের দেখা মেলে। এগুলোর মধ্যে দেবকাঞ্চন একটি। দেবকাঞ্চনে সাধারণত দুই রঙের ফুল ধরে। হেমন্তের শেষ থেকে শীত অবধি ফুল ফোটে। ফুলের রং হালকা গোলাপি আভাসহ সাদা, অন্যটি হালকা গোলাপি-বেগুনি। প্রস্ফুটন উজ্জ্বলতা ততটা প্রবল না হলেও সুগন্ধের তীব্রতা আছে। ঢাকার রমনা পার্কের অরুণোদয় ফটক দিয়ে ঢুকে হাতের ডান দিকে গেলে কিছু দেবকাঞ্চন চোখে পড়বে। তা ছাড়া পার্কের অনত্র কয়েকটি দেবকাঞ্চন আছে। গুলশান ১ নম্বরে যেতে বনানী লেক পার হওয়ার পর একটু সামনে গেলে মাঝখানের আইল্যান্ডে কিছু দেবকাঞ্চন আছে। গত মাসে সেই গাছগুলোতে অঢেল ফুল দেখেছি। গাছগুলো অযত্নেই বেড়ে উঠেছে। এক দশক আগে বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ ক্যাম্পাসে কয়েকটি দেবকাঞ্চন দেখেছিলাম। বর্তমানে নেই। কাটা পড়েছে মেহগনিগাছ রোপণের জন্য!

দেবকাঞ্চন মাঝারি আকারের অর্ধ চিরসবুজ গাছ। গাছ ৮-১০ মিটার উঁচু হয়। পাতাসহ মাথা ছড়ানো থাকে। পাতা মাথার দিকে দুই দিকে বিভক্ত। লতির আগা চোখা বা ভোঁতা। ফুল ৬-৮ সেন্টিমিটার চওড়া, সুগ​িন্ধ। কয়েকটি পুষ্প একত্রে একটি ডাঁটায় থাকে। সারা গাছে ফুল ফোটে। ফুল লম্বাটে, পাঁচটি পাপড়ি থকে। ফল শিমের মতো চ্যাপ্টা, বীজ ১২ থেকে ১৬টি। চৈত্র মাসে পাতা ঝরে গেলে ফলগুলো সশব্দে ফেটে বীজ ছড়ায়। বীজে চাষ। অনেক সময় কম বয়সী গাছেও ফুল ধরে। আদি আবাস হিমালয়ের পাদদেশে এবং আসামের প্রজাতি। আমাদের সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে দেখা যায়। দেবকাঞ্চনের বৈজ্ঞানিক নাম Bauhinia purpurea। ইংরজি নাম Purple Bauhinia। বৈজ্ঞানিক নামের প্রথম অংশ উদ্ভিদবিজ্ঞানী Gaspard Bauhin এবং Johann Bauhin-এর নাম অনুসারে রাখা হয়েছে। তাঁরা দুজনই আপন ভাই ছিলেন। উদ্ভিদ গবেষণায় অবদানের জন্য বিজ্ঞানী ক্যারোল্যাস লিনিয়াস তাঁদের নাম অনুসারে এ উদ্ভিদের গণনাম রাখেন Bauhinia