দুই শিশুকে নিয়ে বাইরে ঘোরাঘুরির অনুমতি চেয়ে জাপানি মায়ের আবেদন
দুই মেয়ের সঙ্গে রাত কাটানো ও তাদের নিয়ে বাসার বাইরে বিনোদনমূলক কাজে অংশ নেওয়ার অনুমতি চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছেন শিশুদের মা জাপানি নারী নাকানো এরিকো। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে আজ সোমবার আবেদনটি দাখিল করা হয়। আবেদনের ওপর মঙ্গলবার শুনানি হতে পারে।
হাইকোর্টের আদেশের পর ১ সেপ্টেম্বর থেকে গুলশানের একটি ফ্ল্যাটে থাকছে জাপান থেকে আসা ১০ ও ১১ বছর বয়সী ওই দুই শিশু। শিশুদের বাবা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ইমরান শরীফ ওই বাসায় শিশুদের রাখার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। শুনানি নিয়ে গত ৩১ আগস্ট হাইকোর্টের একই বেঞ্চ আদেশে দেন।
আদেশে উল্লেখ করা হয়, শিশুদের বাবা ও মা যৌথভাবে আপাতত তাদের দেখাশোনা করতে পারবেন। ওই ফ্ল্যাটের ব্যয় মা–বাবা সমান বহন করবেন। শিশুদের বাবা ও মায়ের ওই বাসায় অবস্থান করার স্বাধীনতা থাকবে। শিশুদের সঙ্গে তাদের বাবা ও মা একান্তে সময় কাটাবেন। সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিষয়টি সার্বক্ষণিক তদারকি করবেন এবং শিশুদের প্রয়োজনীয় সহয়তা দেবেন। শিশু ও তাদের মা–বাবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ অবস্থায় আজ শিশুদের মায়ের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির আদালতে আবেদনটি দাখিল করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শিশুদের সঙ্গে তাদের বাবা ইমরান শরীফের সময় কাটানোর সময় নির্ধারণ করে দেওয়া, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সংরক্ষণের জন্য ইমরান শরীফ কর্তৃক বাসায় বসানো সিসিটিভি ক্যামেরা অপসারণ ও বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যম থেকে এরিকোর বিরুদ্ধে অবমাননাকর ভিডিও অপসারণে বিটিআরসির চেয়ারম্যানের প্রতি নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। একই বাসায় থাকলেও মা শিশুদের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতে পারছেন না বলেই সম্পূরক এই আবেদন করা হয়েছে।
ঘটনার পূর্বাপর
২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ইমরান শরীফের বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে তাঁদের তিন মেয়েসন্তান।
শিশুদের বয়স যথাক্রমে ১১, ১০ ও ৭ বছর। গত ১৮ জানুয়ারি এরিকোর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন ইমরান। পরবর্তী সময়ে গত ২১ ফেব্রুয়ারি দুই মেয়েকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন তিনি। আর ছোট মেয়েকে তার নানির কাছে রেখে গত ১৮ জুলাই শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন এরিকো। ইমরানের কাছ থেকে ১০ ও ১১ বছর বয়সী দুই মেয়েশিশুকে ফিরে পেতে বাংলাদেশে এসে গত ১৯ আগস্ট রিট করেন নাকানো এরিকো। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট দুই শিশুকে ৩১ আগস্ট আদালতে হাজির করতে তাদের বাবা ও ফুফুকে নির্দেশ দেন। শিশুদের আদালতে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে গুলশান ও আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বলা হয়। তবে এর আগে ২২ আগস্ট রাতে বাবার কাছ থেকে ওই দুই শিশুকে নিয়ে আসে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এ অবস্থায় ২৩ আগস্ট শিশুদের ফিরে পেতে আদালতে আবেদন করেন তাদের বাবা। সেদিন হাইকোর্ট দুই শিশুসন্তানকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা মহানগর পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে (উইমেন সাপোর্ট সেন্টার) রাখতে আদেশ দেন। আদালত বলেন, এ সময়ে সকালে মা ও বিকেলে বাবা তাঁদের মেয়েদের সঙ্গে দেখা করা ও সময় কাটাতে পারবেন।
আদেশ অনুসারে ধার্য তারিখ ৩১ আগস্ট উইমেন সাপোর্ট সেন্টার থেকে সিআইডির তত্ত্বাবধানে দুই শিশু আদালতে উপস্থিত হয়। আদালতে উপস্থিত হন তাদের বাবা ইমরান ও মা এরিকো। খাসকামরায় দুই শিশুর বক্তব্য শোনেন আদালত। শিশুদের মা–বাবার বক্তব্যও শোনেন। সব পক্ষের শুনানি নিয়ে ৩১ আগস্ট হাইকোর্ট গুলশানের ওই ফ্ল্যাটে শিশুদের রাখার আদেশ দেন।