দুই মেয়েকে ফিরে পেতে হাইকোর্টে জাপানি নারীর রিট
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শরীফ ইমরানের কাছ থেকে ১০ ও ১১ বছর বয়সী দুই মেয়েসন্তানকে ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট করেছেন জাপানি নারী নাকানো এরিকো। তিনি পেশায় একজন চিকিৎসক।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে রিট আবেদনটির ওপর শুনানি হতে পারে। আজ বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছেন এরিকোর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
শিশির মনিরের তথ্যমতে, জাপানি আইন অনুসারে জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো (৪৬) ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক শরীফ ইমরান (৫৮) ২০০৮ সালের ১১ জুলাই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর তাঁরা টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। এক যুগের দাম্পত্যজীবনে তাঁদের তিন মেয়েসন্তানের জন্ম হয়। বর্তমানে তাঁদের বয়স যথাক্রমে ১১, ১০ ও ৭ বছর। তিন মেয়ে টোকিওর একটি স্কুলে পড়ছিল। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি এরিকোর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন ইমরান। গত ২১ জানুয়ারি ইমরান টোকিওর ওই স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁর এক মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। তবে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ইমরানের আবেদন নাকচ করে।
রিট আবেদনকারীর আইনজীবী জানান, পরবর্তী সময়ে স্কুলবাসে করে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপেজ থেকে ইমরান বড় দুই মেয়েকে (১১ ও ১০) অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। গত ২৫ জানুয়ারি ইমরান তাঁর আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছে সন্তানদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো তা প্রত্যাখ্যান করেন। এরিকো ২৮ জানুয়ারি টোকিওর পারিবারিক আদালতে তাঁর সন্তানদের জিম্মার জন্য আদেশ চেয়ে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক সাক্ষাতের আদেশ দেন। তবে এই আদেশ ভঙ্গ করে ইমরান শুধু একবার মায়ের সঙ্গে বড় দুই মেয়ের সাক্ষাতের সুযোগ দেন।
এরিকোর আইনজীবীর অভিযোগ, গত ৯ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ইমরান মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। গত ২১ ফেব্রুয়ারি দুই মেয়েকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন তিনি।
গত ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত এরিকোর অনুকূলে বড় দুই মেয়ের জিম্মা হস্তান্তরে আদেশ দেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে এরিকো এত দিন বাংলাদেশ আসতে পারেননি বলে জানান আইনজীবী শিশির মনির। তিনি বলেন, ছোট মেয়েকে মায়ের কাছে রেখে ১৮ জুলাই শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন এরিকো। তবে ইমরান শ্রীলঙ্কা থেকে এরিকোকে ফিরে যেতে বলেন। এরিকো বাংলাদেশে এসে করোনা পরীক্ষা করান। ফলাফল নেগেটিভ আসে। তবে ইমরান এ ফলাফল অবিশ্বাস করে এরিকোর সঙ্গে দুই মেয়ের সাক্ষাৎ দিতে অস্বীকৃতি জানান। গত ২৭ জুলাই মোবাইল সংযোগ বন্ধ ও চোখ বাঁধা অবস্থায় এরিকোকে তাঁর মেয়েদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হয়। একই অবস্থায় গাড়িতে তাঁকে পৌঁছে দেওয়া হয়। এ অবস্থায় দুই মেয়েকে নিজ জিম্মায় চেয়ে হাইকোর্টে রিট (হেবিয়াস কর্পাস) করেন এরিকো।