গরমে একটু আরাম পেতে তরমুজ খাওয়ার পরামর্শ দেন অনেকেই। পানিযুক্ত ফল বলে তরমুজ এ সময়টার জন্য আসলেই বেশ উপকারী। তবে অনেক সময় তরমুজে মেশানো হয় ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ, যার ফলে এটি খেয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। সম্প্রতি এমন কিছু ঘটনার কথা খবরেও এসেছে। তাহলে কি তরমুজ খাওয়ার চেয়ে না খাওয়াই ভালো?
এ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামীম আহমেদ। তিনি বলেন, ‘তরমুজ খেলেই অসুস্থ হয়ে পড়ব, এমন ধারণা ভুল। তবে কিছু ব্যাপারে প্রয়োজন সতর্কতা, তাহলে আর তরমুজ খেয়ে অসুস্থ হওয়ার ভয় থাকবে না।’ জেনে নিন তাঁর পরামর্শ—
অনেকেই তরমুজ কেনার সময় খানিকটা অংশ কেটে পরখ করে নেন, তরমুজটি লাল কি না, তাও দেখে নেন। তবে একদম টকটকে লাল তরমুজ খাওয়া ঠিক নয়। কারণ, অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করার মাধ্যমে তরমুজের রং লাল করা হয়। তাই কেনার সময় স্বাভাবিক রঙের তরমুজ কিনুন।
বাইরে যেসব তরমুজ দীর্ঘক্ষণ কেটে রাখা থাকে, সেগুলোতে ধুলাবালু ও ময়লা পড়ে যায়। আবার এগুলোতে মাছিও বসে। ফলে এসব তরমুজ খেলে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
কিছু তরমুজে খুব বেশি বিচি থাকে, এগুলো খাওয়ার সময় সতর্ক থাকা উচিত। কারণ, তরমুজের বিচি খুব বেশি খেয়ে ফেললে পেটে ব্যথা ও অস্বস্তি হতে পারে।
শিশুদের তরমুজের পরিবর্তে এর রস দিতে পারেন।
কোনো তরমুজ খেয়ে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে সেই তরমুজের বাকি অংশ ফেলে দিন, যাতে তা অন্য কেউ না খেয়ে ফেলে।
অসুস্থতার লক্ষণ
তরমুজে ক্ষতিকর কিছু থাকলে তা খেয়ে বমি ভাব বা বমি হওয়া, পেটে ব্যথা ও অস্বস্তি, পেট ফুলে যাওয়া এবং পাতলা পায়খানার মতো সমস্যা হতে পারে।
কী করবেন
অসুস্থ ব্যক্তিকে কিছুটা ঠান্ডা পরিবেশে রাখতে হবে। সেই মুহূর্তে তাঁকে খুব বেশি খাবার দেওয়া যাবে না। তবে একটু পানি দিতে হবে, যেন প্রস্রাবে কোনো সমস্যা না হয়। অসুস্থতা খুব বেশি মনে হলে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
এ প্রসঙ্গে আরও কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ তানভীর ইসলাম। তাঁর পরামর্শ—
পানিবাহিত অসুখ; যেমন, পাতলা পায়খানা বা জন্ডিস এড়াতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। িযনি তরমুজ কাটবেন ও পরিবেশন করবেন, তাঁর হাত পরিষ্কার থাকতে হবে অবশ্যই।
পরিষ্কার ও নিরাপদ পানি দিয়ে তরমুজ ধোয়া প্রয়োজন। ফোটানো পানি দিয়ে তরমুজ ধুতে হবে এমন নয়, তবে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুতে হবে অবশ্যই।
বারডেম জেনারেল হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা শামসুন্নাহার নাহিদ বলেন, ‘তরমুজ খেয়ে কেউ অসুস্থ হলে তা তরমুজের ত্রুটি নয়। কিছু অসৎ ব্যবসায়ীর কারণে এ ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে।’ তাঁর মতে—
তরমুজে ফরমালিন মেশানো থাকতে পারে। ফরমালিন পানিতে দ্রবীভূত হয়। তাই বাজার থেকে তরমুজ কিনে আনার পর চার-পাঁচ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে তরমুজের ভেতরের ফরমালিন বেরিয়ে যেতে পারে। সারা রাতও পানিতে ভিজিয়ে রাখতে পারেন। এভাবে কিছুটা উপকার পাওয়া যেতে পারে।
তরমুজ কাটার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, তা খেয়ে নেওয়া উচিত। কাটার পর দীর্ঘক্ষণ তরমুজ বাইরে ফেলে রাখা ঠিক নয়।
তরমুজ ফ্রিজে রাখলেও তা অনেক দিন পর্যন্ত রেখে দেওয়া ঠিক নয়। এতে ধীরে ধীরে তরমুজের পুষ্টিগুণ কমতে থাকে। তা ছাড়া দীর্ঘদিন রাখলে সেটি পচেও যেতে পারে।
রাসায়নিক পদার্থ মেশানো হলে তা বাইরে থেকে বোঝার কোনো উপায় নেই। তবে নষ্ট হয়ে যাওয়া তরমুজ বাইরে থেকে দেখেই বোঝা যায়; কারণ, সেটি কিছুটা দেবে যায়। যেসব তরমুজ বাইরে থেকে দেখেই কিছুটা পচা বলে মনে হয়, সেগুলো অবশ্যই পরিহার করতে হবে।