তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে এখনো রয়ে গেছে গোপনীয়তার সংস্কৃতি
সরকারি কর্মকর্তারা তথ্য দিতে চান না—এমন অভিযোগ অনেকেরই। খোদ তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও মন্ত্রিপরিষদের সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞাও স্বীকার করলেন, তথ্য অধিকার আইন হওয়ার পরও তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে এক ধরনের গোপনীয়তার সংস্কৃতি এখনো রয়ে গেছে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে তথ্য অধিকার ফোরাম আয়োজিত ‘তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ বাস্তবায়নে চাহিদা বৃদ্ধি: চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ বিষয়ে গোলটেবিল আলোচনায় সরকারের দুই কর্তাব্যক্তির মুখ থেকে শোনা গেল এই স্বীকারোক্তি।
আন্তর্জাতিক তথ্য জানার অধিকার দিবস পালন উপলক্ষে আয়োজিত ওই গোলটেবিলের প্রধান অতিথি তথ্যমন্ত্রী বললেন, গোপনীয়তার সংস্কৃতি এবং সমালোচনা বন্ধ করে দেওয়ার যে ঔপনিবেশিক মানসিকতা, সেটা বাংলাদেশের প্রশাসনের ভেতরে থেকে গেছে। তাই গণতন্ত্রমনা নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যখন ক্ষমতায় বসেন, তখন তাঁদেরও ওই সব মানসিকতা পেয়ে বসে।
আলোচনায় বিশেষ অতিথি মন্ত্রিপরিষদের সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেন, ‘প্রশাসনের ভেতরে তথ্য গোপন করার প্রবণতা আছে, এটি সত্য। এর কারণ সরকারি কর্মকর্তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও গণমাধ্যমের তথ্যবিকৃতিকে ভয় পান।’ তিনি আরও বলেন, তথ্য জানার যে অধিকার, সেটি আজ অনেকেই জানেন না। আবার তথ্য দেওয়াও যে দায়িত্ব, তা অনেকের জানা নেই।
তথ্য অধিকার আইনটি বেশ তাড়াহুড়া করে করা হয়েছে, এ কথা বলে প্রধান তথ্য কমিশনার মো. ফারুক বললেন, এর প্রয়োজনীয় সংশোধনী করতে এখন প্রক্রিয়া চলছে।
তথ্য অধিকার আইন হওয়ার পর তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে এ কথা উল্লেখ করেন গোলটেবিলের মূল প্রবন্ধের উপস্থাপক মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বললেন, তথ্য অধিকার আইনের সুফল পেতে আরও প্রচার দরকার। কেননা, মানুষ এই আইনটির উপকারিতা সম্পর্কে এখনো জ্ঞাত না।
সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৬০ হাজার তথ্য কর্মকর্তা থাকার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত মাত্র ১৪ হাজার প্রতিষ্ঠানে তথ্য কর্মকর্তা রয়েছে বলে জানান তথ্য কমিশনার সাদেকা হালিম।
তিনি বলেন, তথ্য অধিকার আইনে তথ্য না দেওয়ার জন্য যখন কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে শুনানির জন্য কমিশনে তলব করা হয়, তখন কর্মকর্তাদের পেটে ব্যথা শুরু হয়। কিন্তু শুনানির সঙ্গে জড়িত প্রান্তিক মানুষ কষ্ট করেও যোগ দেন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানের সভাপতিত্বে আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন বেসরকারি সংগঠন ‘আর্টিকেল নাইনটিনে’র নির্বাহী পরিচালক তাহমিনা রহমান।