জয়িতারাই বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবে
শিশু বয়স থেকেই নির্যাতনের শিকার সীমা বেগম। বাপের বাড়ি, স্বামীর বাড়ি, এমনকি কর্মক্ষেত্রেও চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি। দৃঢ় মনোবল আর প্রবল ইচ্ছাশক্তি দিয়ে সব বাধা অতিক্রম করেছেন সীমা বেগম। নিজে স্বাবলম্বী হয়ে নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে দিয়েছেন।
বরিশাল বিভাগের ‘জয়িতা অন্বেষণ বাংলাদেশ’ তাঁকে নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছেন এমন নারী হিসেবে জয়িতা নির্বাচন করেছে। তাঁর বাড়ি বরগুনা জেলার নলুয়া ইউনিয়নের মানিকজোড় ডালভাঙা গ্রামে। বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার ৩০ জন সংগ্রামী নারীর মধ্য থেকে পাঁচজনকে জয়িতা নির্বাচন করা হয়।
দেশের সাতটি বিভাগে পর্যায়ক্রমে এ কর্মসূচির মাধ্যমে পাঁচ ক্যাটাগরিতে পাঁচজন সফল ও সংগ্রামী নারীকে পুরস্কৃত করার উদ্যোগ নিয়েছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক অধিদপ্তর।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় নগরের বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে মহিলা ও শিশুবিষয়ক অধিদপ্তর বিভাগীয় পর্যায়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সীমা বেগম ছাড়া নির্বাচিত অপর চার নারী হচ্ছেন: জীবনসংগ্রামে অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী বরিশাল সদর উপজেলার রাশিদা ইয়াসমিন, সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি পেয়েছেন ভোলা সদর উপজেলার গোলাপজান, সফল জননী ক্যাটাগরিতে পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়ার ফকেজান বিবি এবং শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়ার ফাতেমা বেগম।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, জয়িতারাই বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবেন। নারীরা তাঁদের অগ্রযাত্রায় নানা বাধা অতিক্রম করে চলেছেন। সচেতন মানুষের কর্তব্য তাঁদের অগ্রযাত্রার পক্ষে থাকা। প্রয়োজন নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য কমানো।
অনুষ্ঠানে নির্বাচিত প্রত্যেক জয়িতাকে ১০ হাজার টাকা, ক্রেস্ট ও সনদ দেওয়া হয়। এ ছাড়া অংশ নেওয়া অন্য ২৫ জনকে সনদ প্রদান করা হয়। বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. নূরুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘জয়িতা অন্বেষণ’ অনুষ্ঠানে বিচারক হিসেবে ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. আনিসুর রহমান, প্রাথমিক শিক্ষা বরিশাল বিভাগের উপপরিচালক মাহবুব এলাহী প্রমুখ। এ ছাড়া প্যানেলিস্ট হিসেবে ছিলেন নানা বিশিষ্টজন। অনুষ্ঠানের শুরুতে জয়িতাদের নিয়ে নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। এরপর নিজেদের জীবনসংগ্রামের অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন জয়িতারা। সফল জননী ফকেজান বিবি গ্রামের এক সাধারণ গৃহিণী। স্বামী মারা যাওয়ায় সন্তানদের নিয়ে বিপাকে পড়েন। সমাজের নানা বাধা উপেক্ষা করে অনেক কষ্টে পাঁচ সন্তানকেই তিনি উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলেন। তাঁদের মধ্যে একজন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগের সচিব, একজন কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক, একজন প্রকৌশলী, অন্যজন কলেজশিক্ষক। মেয়েও উচ্চশিক্ষিত।
শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী ফাতেমা বেগম। বাবা-মায়ের পঞ্চম কন্যাসন্তান জন্ম হওয়ায় পরিবার থেকেই অবহেলা শুরু হয়। তার পরও থেমে থাকেননি তিনি। অনেক বাধা পেরিয়ে স্কুলে যেতেন। তিনি এখন স্বাবলম্বী। স্বোপার্জিত অর্থে এলাকায় গড়ে তুলেছেন একটি মহিলা কলেজ। নাম দিয়েছেন মনস্বিতা মহাবিদ্যালয়। এখান থেকে কয়েক হাজার নারী উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন। ২০০৮ সালে উপজেলা মহিলা ভাইস
চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের পরিচালক কামালউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘আমাদের দেশে এ রকম হাজারো জয়িতা রয়েছেন। যাঁদের সংগ্রাম আর ত্যাগে বাংলাদেশ সামনে এগোচ্ছে।’