ছেলের আবদার মেটানো হলো না উজ্জ্বলের
বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় বাবার কাছে ছোট ছেলে প্রান্তর আবদার ছিল, ফেরার সময় চকলেট আর চিপস আনতে হবে। বাবা উজ্জ্বল সরকার ছেলের এ মধুর আবদার রক্ষা করতে পারেননি। ছেলেকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে চলে গেছেন না-ফেরার দেশে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বাড়ি থেকে বের হওয়া গাড়ির ব্যবসায়ী উজ্জ্বল সরকারের (৪০) সুস্থ-সবল দেহটি অবরোধকারীদের কারণে রাতে নিষ্প্রাণ এক লাশে পরিণত হয়। অবরোধকারীদের ধাওয়ার মুখে তাঁর পিকআপটি দুর্ঘটনাকবলিত হলে মারা যান উজ্জ্বল।
গতকাল রাত ১১টার দিকে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার কিশোরগঞ্জ-ভৈরব সড়কের চৌদ্দশত বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত হন সাতজন।
পুলিশ ও আহত ব্যক্তিদের বক্তব্য থেকে জানা যায়, পিকআপ ভ্যানের মালিক উজ্জ্বল সরকার অবরোধের কারণে বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করতে গিয়ে চালক রুবেল মিয়ার সঙ্গে বের হন। ময়মনসিংহের তারাকান্দা থেকে ইটভাটার ১৮ জন শ্রমিক নিয়ে পিকআপটি কুমিল্লায় যাচ্ছিলেন। ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ভৈরব মহাসড়কের চৌদ্দশত বাজার এলাকা পার হওয়ার সময় অবরোধকারীরা বেপরোয়াভাবে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। একপর্যায়ে চালকের বুকে ও মাথায় ইটের আঘাত লাগে। এতে চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে ভ্যানটি সড়কের পাশে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে উল্টে যায়। এ ঘটনায় উজ্জ্বল সরকারসহ আটজন গুরুতর আহত হন। গভীর রাতে তাঁদের কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে উজ্জ্বল মারা যান।
কর্তব্যরত চিকিত্সা কর্মকর্তা সাদাত শারেক রহমান বলেন, বুকে ও মাথায় আঘাতের কারণেই উজ্জ্বল সরকারের মৃত্যু হয়েছে। মাথায় আঘাতের কারণে আহত দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
আহত ব্যক্তিরা হলেন রুবেল মিয়া (২৬), আল আমিন (১৭), সোহেল মিয়া (১৬), সোহেল (৩০), শহীদ মিয়া (৩০), মানিক মিয়া (১৪), নজরুল মিয়া (৩০)। নিহত ও আহত ব্যক্তিদের সবার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।
উজ্জ্বল সরকারের বাড়ি ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলা সদরে। তাঁর বাবার নাম নিখিল সরকার। উজ্জ্বলের স্ত্রী দীপা রানী সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। স্বামীর মৃত্যুর সংবাদে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র ছেলে প্রান্ত সরকার ‘বাবা বাবা’ বলে বিলাপ করছে। ছোট মেয়ে প্রাপ্তি কিছু বুঝতে পারছে না।
কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল মালেক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, পিকআপের যাত্রীদের বক্তব্য অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
উজ্জ্বলের ভাই কাজল সরকার জানান, আজ বুধবার তাঁর ভাইয়ের বাড়ি ফেরার কথা ছিল। অবরোধ থাকায় ব্যবসা ভালো ছিল না। তাই ছেলে প্রান্তকে পছন্দের খাবার এনে দেবেন বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন। এবার লাশ হয়ে ফিরলেন। এ ঘটনায় তিনি নিজে বাদী হয়ে মামলা করবেন বলে প্রথম আলো ডটকমকে জানান।