চুলে 'বখাটে কাটিং' না দিতে সেলুনে পুলিশের নির্দেশনা
একশ্রেণির যুবক চুল এমনভাবে কাটেন যে তাদের দুই কানের ওপরের অংশে চুল থাকেই না। কিন্তু মাথার ওপরের অংশে ঘন চুল থাকে। এই চুল বেশ দীর্ঘ হয়। হাঁটার সময় কিংবা মোটরসাইকেল চালানোর সময় এই চুল বাতাসে দুলতে থাকে। এভাবে চুল কাটানোকে ‘বখাটে কাটিং’ বলছে মাগুরা জেলার পুলিশ। এই স্টাইলে চুল না কাটতে সেলুনমালিক ও নরসুন্দরদের লিখিত নির্দেশনা দিয়েছে মাগুরা সদর থানা-পুলিশ।
চলতি আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে এ বিষয়ে ব্যাপক মাইকিং, সেলুনকর্মীদের নিয়ে বৈঠকসহ নানা রকম প্রচারণা চালানো হচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে সেলুনমালিকদের জানানো হচ্ছে, কোনো সেলুনকর্মী কারও চুল কিংবা দাড়ি যেন মডেলিং ও বখাটে স্টাইলে না কাটেন। তবে বিষয়টি নিয়ে নাগরিকেরা নানা রকম প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন।
মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, মাগুরা জেলা পুলিশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্থানীয় সেলুনমালিক ও কর্মীদের নিয়ে এ বিষয়ে বৈঠকের পাশাপাশি মাইকিংয়ের মাধ্যমে সর্বসাধারণকে সচেতন করা হচ্ছে। এটির উদ্দেশ্য হচ্ছে, উঠতি বয়সের যুবকদের সংযত আচরণ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করা। সম্প্রতি মাগুরায় কিশোর ও উঠতি বয়সের যুবকদের হাতে খুনসহ নানা অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, যেটির পেছনে তাদের অস্বাভাবিক জীবনযাপন ও আচরণের যোগসূত্র পেয়েছে পুলিশ। এ কারণে নতুন প্রজন্মকে সচেতন করতে এ প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
ওসি বলেন, ‘মানুষের লাইফস্টাইলের সঙ্গে তার আচরণের নানা যোগসূত্র রয়েছে। অনেকে উদ্ভট পোশাক পরে ও উদ্ভট স্টাইলে চুল কাটে, যা দৃষ্টিকটু ও অস্বাভাবিক। সেটি তার জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব অবশ্যই ফেলবে। এ কারণে এটি প্রতিরোধ করা প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে সবার আগে জরুরি সচেতনতা। সে কাজটিই আমরা করছি। ইতিমধ্যে এর ইতিবাচক ফলও পাচ্ছে শহরবাসী।’
এ বিষয়ে মাগুরা সদর উপজেলার বাটিকাডাঙ্গা বাজারের একটি সেলুনের মালিক রমেশ বিশ্বাস বলেন, ‘এক শ্রেণির উঠতি বয়সী যুবক আছেন যাঁরা নিজস্ব স্টাইলে চুল কাটান। এ ধরনের স্টাইলে গোটা চুলে কোনো সামঞ্জস্য থাকে না। দুই কানের ওপরের অংশে চুল থাকে না বললেই চলে। অন্যদিকে মাথার যত উপরিভাগে যাওয়া যাবে, চুল তত বেশি বড় রাখা হয়। এই যুবকেরা এমনভাবে চুল কাটান, যেন মোটরসাইকেল চালানোর সময় মাথার ওপরের চুলগুলো বাতাসে দোল খায়। যুবকেরা বিভিন্ন সিনেমা, নাটক ও খেলোয়াড়দের দেখে এসব করেন।’
পুলিশের এমন সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন সেলুনমালিক ও শ্রমিকেরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন নরসুন্দর বলেন, পুলিশ একটা সিদ্ধান্ত নিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করে। কিন্তু বিপাকে পড়তে হয় তাঁদের। অনেক যুবক তাঁদের নিজের দেখানো স্টাইলে চুল কাটাতে চায়। আপত্তি জানালে তাঁরা হুমকি-ধমকি দেন বা অন্য জায়গায় চলে যান। বিষয়টি পুলিশ কীভাবে নজরদারি করবে? পুলিশের কাছে অভিযোগ দিলে পরে বিপদে পড়তে হবে।
বিষয়টি নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। শহরের কেশব মোড় এলাকার বাসিন্দা রাফাত হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এভাবে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। চুলের ছাঁট দেখে একজন অপরাধী কি না, তা কীভাবে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব, তা মাথায় আসে না।’
একই কথা জানালেন কলেজপাড়ার ব্যবসায়ী সুসান রহমান। তিনি বলেন, ‘এটা নাগরিকের একদম ব্যক্তিগত ব্যাপার। আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু আছে, যেগুলোতে পুলিশের নজর নেই। এতে অনেক নিরপরাধ ব্যক্তি হয়রানির শিকার হতে পারে। তা ছাড়া পুলিশের এই পদক্ষেপ শিশুদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।’
অবশ্য পুলিশের এই পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবেও দেখেছেন অনেকে। ব্যবসায়ী সবুজ সাহা বলেন, উঠতি বয়সী অনেক ছেলেকে পরিবার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তাদের কাছে মা–বাবা অসহায়। পুলিশের এই পদক্ষেপ তাদের কাছে একটি বার্তা দিচ্ছে যে প্রশাসনের নজর তাদের ওপর আছে। এতে তাদের অপরাধপ্রবণতা কিছুটা হলেও কমবে। তবে এ বিষয়ে পুলিশকে অনেক সচেতন ও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে যেন নিরপরাধ মানুষ হয়রানির শিকার না হয়।