চলনবিলে বেড়া দিয়ে মাছ শিকার
চলনবিল থেকে বন্যার পানি নামার পথে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার সগুনা ও মাগুরাবিনোদ ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ সোঁতিজাল ও বাঁশ পুঁতে বেড়া দিয়ে ছোট-বড় সব ধরনের মাছ নির্বিচারে শিকার করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে বিল থেকে পানি নামতে দেরি হচ্ছে।
ফলে চলনবিলের বিস্তীর্ণ এলাকায় রবিশস্য আবাদ হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। পাশাপাশি নির্বিচারে মাছ শিকারের কারণে বিলের অনেক প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ জেলাজুড়ে বিস্তৃত চলনবিল এলাকার বন্যার পানি তাড়াশের সগুনা ইউনিয়নের কুন্দইল এবং মাগুরাবিনোদ ইউনিয়নের ৯ ও ১০ নম্বর সেতু এলাকা দিয়ে নিষ্কাশন হয়। সগুনা ইউনিয়নের ভেটুয়া থেকে কুন্দইল গ্রাম পর্যন্ত প্রায় ১০টি স্থানে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বাঁশ পুঁতে পলিথিন লাগিয়ে দুই সপ্তাহ ধরে মাছ শিকার করছেন। এর সঙ্গে নিষিদ্ধ বিভিন্ন ধরনের ছোট ছিদ্রের জালও পাতা হয়েছে। অপরদিকে শুধু একটি স্থান দিয়ে পানি চলাচলের রাস্তা রেখে সেখানে স্থাপন করা হয়েছে নিষিদ্ধ সোঁতিজাল। ওই জালে ধরা পড়ছে ছোট-বড় সব ধরনের মাছ। এ ছাড়া ভেটুয়া খালে দুটি এবং হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের ৯ নম্বর সেতুর তলায় দুটি অবৈধ সোঁতিজাল পাতা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কুন্দইল খাল, তাড়াশ-কুন্দইল খালের প্রথম অংশে, হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের ৯ ও ১০ নম্বর সেতুর উজান ও ভাটি এলাকার বিভিন্ন স্থানে ১০টি বেড়া স্থাপন করে জাল দিয়ে বাধার সৃষ্টি করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কুন্দইল গ্রামের আবদুল্লাহেল বাকী, জহুরুল ইসলাম, মোয়াজ্জেম হোসেন, বঙ্গবন্ধু উচ্চবিদ্যালয়সংলগ্ন খালে রাস্তার মুখে আরিফ, মান্না, গোলবার, ইয়াসিনসহ আরও কয়েকজন লোক খাল দখল করে বাঁশ পুঁতে অবৈধ সোঁতিজাল দিয়ে মাছ শিকার করছেন।
ওয়াহিদ মিয়া, আবদুল গফুরসহ স্থানীয় বেশ কয়েকজন কৃষক বলেন, চলনবিল এলাকায় পানি প্রবাহে বাধা দিয়ে নিষিদ্ধ সোঁতিজাল দিয়ে সব ধরনের মাছ শিকার করায় বিলের পানি নামতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি সময় প্রয়োজন হবে। ফলে রবিশস্য আবাদ বাধাগ্রস্ত হবে। যাঁরা এ কাজ করছেন তাঁরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ কিছু বলতে পারেন না। এভাবে মাছ শিকারের কারণে নৌকা চলাচলেও বিঘ্ন ঘটছে।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে কুন্দইল গ্রামের জহুরুল ইসলাম ও আবদুল্লাহেল বাকী বলেন, ‘গ্রামের কতিপয় লোক এই মাছ শিকারের সঙ্গে জড়িত। আমরা তাদের বাধা দিতে পারি না। তা ছাড়া পানি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই নেমে যাবে। এতে রবি ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না।’
তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বরুন কুমার মণ্ডল বলেন, চলনবিল একটি বৃহৎ এলাকা। কুন্দইল এলাকায় পানি প্রবাহের মুখে সোঁতিজাল স্থাপন করলে একদিকে পানি নামতে যেমন দেরি হবে, অন্যদিকে পোনা ও মা-মাছ নিধন হবে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরীফ রায়হান কবীর বলেন, অবৈধ সোঁতিজাল পাতায় এরই মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত তিনজনকে কারাদণ্ড দিয়েছেন। আদালতের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অবৈধভাবে স্থাপন করা সব সোঁতিজাল অচিরেই উচ্ছেদ করা হবে।