চট্টগ্রাম ও আশপাশের জেলায় উচ্চ রক্তচাপের রোগী বেশি: গবেষণা
দেশে উচ্চ রক্তচাপে ভোগা রোগীদের হার চট্টগ্রাম ও আশপাশের জেলাগুলোতে বেশি। তাঁদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক নানা জটিলতায় ভোগেন ৫৫ শতাংশ রোগী। সম্প্রতি দেশের ২২টি হাসপাতালের প্রায় ২ হাজার রোগীর মধ্যে চালানো এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে আসে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের যৌথ গবেষণায় উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জীবনমান ও শারীরিক জটিলতার বিভিন্ন তথ্য সংবলিত গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ব্রিটিশ জার্নাল ‘বিএমসি পাবলিক হেলথ’–এ।
গবেষণা বলছে, দেশে দিন দিন বেড়ে চলেছে উচ্চ রক্তচাপের রোগীর সংখ্যা। নিয়মিত অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, কায়িক পরিশ্রম না করাসহ নানা কারণই এসব রোগের মূল কারণ। সবচেয়ে বেশি রোগী মিলছে চট্টগ্রাম ও তার আশপাশের জেলাগুলোতে। তবে জীবনযাত্রার মান পরিবর্তনসহ সুষম খাদ্যাভ্যাস, কায়িক পরিশ্রম এবং দুশ্চিন্তা দূর করাসহ নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ ও জীবনধারা মেনে চললে অসংক্রামক এ রোগ থেকে বাঁচা সম্ভব হবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
গবেষণায় দেখা যায়, ৬৮ ভাগ রোগীর মধ্যেই বংশগত উচ্চ রক্তচাপের ইতিহাস রয়েছে। উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক সমস্যা বাড়ছে। এর মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের হার নারীদের মধ্যে বেশি।
গবেষণায় জানা যায়, উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা অন্যান্য রোগের ঝুঁকিতে থাকেন। এর মধ্যে ৪৭ শতাংশ ডায়াবেটিস, ৩২ শতাংশ স্থূলতা ও অতিরিক্ত ওজন এবং ১৮ শতাংশ হৃদ্রোগে আক্রান্ত রোগী বেশি পাওয়া যায়। তাঁদের মধ্যে ১৬ ভাগই বিভিন্ন জটিলতার কারণে বিষণ্নতা ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে মানসিকভাবে নিয়মিত অসুস্থ থাকেন।
৫৫ ভাগই কোনো না কোনো শারীরিক দীর্ঘমেয়াদি জটিলতায় ভোগেন বলে গবেষণায় প্রকাশ পায়। এর মধ্যে ডায়বেটিস, স্থূলতা, হৃদ্রোগ, দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, কিডনির সমস্যা, থাইরয়েড সমস্যা ও ক্যানসারের রোগী রয়েছেন।
গবেষণা দলের প্রধান ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক আদনান মান্নান ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) হাসপাতালের ডায়াবেটিস ও হরমোন রোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ফারহানা আক্তার।
আদনান মান্নান বলেন, গ্রামের রোগীদের চেয়ে শহরের রোগীদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের হার দেড় গুণ বেশি। উচ্চ রক্তচাপের রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে চট্টগ্রাম ও আশপাশের জেলাগুলোতে বেশি পাওয়া গেছে। ভবিষ্যতে উচ্চ রক্তচাপের বংশগত সম্পর্ক নির্ণয় প্রয়োজন রয়েছে। কোন জিন তা নিয়ন্ত্রণ করে সেটি খতিয়ে দেখাও প্রয়োজন আছে।
গবেষকেরা জানান, নিয়মিত অস্বাস্থ্যকর ও চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ, অনিদ্রা, কায়িক পরিশ্রমের অভাবসহ নানা কারণে উচ্চ রক্তচাপের রোগী বাড়ছে। এটি নীরবে শরীরে বাসা বাঁধে। মানুষের জীবনযাপনে শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে এই রোগ প্রতিরোধ সম্ভব।
গবেষণায় আরও যুক্ত ছিলেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের কাজী মাহমুদা আকতার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাইমউদ্দিন হাসান চৌধুরী, এশিয়ান উইমেন ইউনিভার্সিটির পাবলিক হেলথ বিভাগের নাজমুল আলম, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ফার্মাকোলজি বিভাগের চিকিৎসক মাসুদ রানা, মেডিসিন বিভাগের আবুল ফয়সাল মোহাম্মদ নুরুদ্দিন, পারিজাত বিশ্বাস, সুস্মিতা দে, জেনারেল হাসপাতালের মোহাম্মদ আকরাম হোসেন এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আফরিন সুলতানা চৌধুরী।