গ্যাস বেলুন বিক্রেতাদের নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেই
>গত এক বছরে বেলুনে গ্যাস ভরার সময় দেশে চারটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
গ্যাস বেলুনের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা দেশে নতুন নয়। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণভাবে গ্যাস বেলুন বিক্রি ঠেকাতে কোনো কার্যকর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। গ্যাস বেলুন বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায় পুলিশের না বিস্ফোরক পরিদপ্তরের—এ নিয়ে একে অপরকে ঠেলছে সংস্থা দুটি। তাদের ঠেলাঠেলিতে বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা।
বিস্ফোরক পরিদপ্তর বলছে, বেলুনে গ্যাস ভরাতে ব্যবহৃত অনুমোদনহীন সিলিন্ডার বহনকারীদের গ্রেপ্তার করতে বিভিন্ন সময় থানা-পুলিশকে তারা চিঠি দিয়েছে। কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আর পুলিশ বলছে, বিস্ফোরক অধিদপ্তর চিঠি দিয়ে দায় এড়াতে চাইছে। তারা পুলিশ কিংবা ভ্রাম্যমাণ আদালতের সহায়তা নিয়ে অভিযান চালাতে পারত।
গত বুধবার বিকেলে রূপনগর আবাসিক এলাকার ১১ নম্বর সড়কে বেলুনে গ্যাস ভরে বিক্রি করার সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আহত আরেক শিশু মারা গেছে। তার নাম নেহাল (১১)। এ নিয়ে ওই দুর্ঘটনায় শিশু মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল সাতে। পুলিশ গতকাল বৃহস্পতিবার গ্যাস বেলুন বিক্রেতা আবু সাঈদের বিরুদ্ধে রূপনগর থানায় মামলা করেছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেপ্তার আহত আবু সাঈদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এর আগে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি মিরপুর ১ নম্বরে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে সিলিন্ডার দিয়ে গ্যাস বেলুন বিক্রি করার সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে বৃদ্ধ সিদ্দিক মারা যান।
বিস্ফোরণে নিহত সাত শিশুর জন্য পরিবারের কান্না থামছে না। শোকের আবহ বইছে গোটা রূপনগর এলাকায়। গতকাল সকাল থেকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে একে একে ছয় শিশুর ছিন্নভিন্ন লাশ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে। আরেক শিশুর লাশ হস্তান্তর করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে। মর্গের সামনে মা-বাবার বিলাপ ও কান্নায় উপস্থিত সবার চোখ ভিজে যায়। তাঁরা খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষ। থাকেন রূপনগর আবাসিক এলাকার ১১ নম্বর সড়কের আশপাশের বস্তিতে।
গতকাল সোহরাওয়ার্দী মর্গ থেকে যে ছয় শিশুকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়, তারা হলো রূপনগর ১১ নম্বর সড়কের কামরুলের বস্তির নূপুর আক্তার (১১), ফজর মাতবরের বস্তির ফারজানা (৬), শিয়ালবাড়ি বস্তির রিফাত হোসেন (৮) ফজর মাতবরের বস্তির ফরহাদ হোসেন (১২), ঝিলপাড় বস্তির রমজান আলী (১১), রিয়া মণি (৭)। ঢাকা মেডিকেলের মর্গ থেকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয় শিশুর নিহারউদ্দিনের লাশ।
বিস্ফোরক পরিদপ্তর সূত্র জানায়, গত এক বছরে বেলুনে গ্যাস ভরার সময় দেশে চারটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরক পরিদপ্তর রূপনগরের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনার জব্দ করা আলামত বিশ্লেষণ করে জানতে পেরেছে, সিলিন্ডারটিতে কস্টিক সোডা ও অ্যালুমিনিয়ামের টুকরো ভরা হয়। এতে পানি দিয়ে হাইড্রোজেন গ্যাস তৈরি করা হয়েছিল। পাইপ দিয়ে এই গ্যাস বেলুনে ভরে বিক্রি করা হচ্ছিল। কস্টিক সোডা ব্যবহারে ওই সিলিন্ডর প্রচণ্ড তাপের সৃষ্টি হয় এবং ক্ষয় ধরে পাতলা হয়ে যায়। এতে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে।
বিস্ফোরক পরিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক মো. সামসুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সিলিন্ডার ব্যবহার করে বেলুনে গ্যাস ভরে বিক্রি করা অবৈধ। এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে সব থানায় বিভিন্ন সময় চিঠি পাঠানো হয়েছে। পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ ক্ষেত্রে পুলিশ কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির পক্ষ থেকে থানায় মামলা করতে পারে। এ ব্যাপারে পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মোস্তাক আহমেদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তিনি কয়েক মাস আগে যোগ দিয়েছেন। তিনি আসার পর মিরপুর বিভাগের কোনো থানায় বিস্ফোরক পরিদপ্তরের চিঠি পাননি। এতে তাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। তা ছাড়া সিলিন্ডার ব্যবহার করে গ্যাস বেলুন বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে চাইলে বিস্ফোরক পরিদপ্তর পুলিশকে ব্যবহার করতে পারে।
আহতরা আশঙ্কামুক্ত নয়: বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালে আট শিশুসহ নয়জন চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেলে গ্যাস বেলুন বিক্রেতাসহ ছয়জনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, আহতদের কারও অবস্থা আশঙ্কামুক্ত নয়।