২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

গৃহস্থালির গ্যাসের সরবরাহ ৩ বছরের মধ্যে ২৫ শতাংশ কমবে

গ্যাসের চুলা
প্রতীকী ছবি

এশিয়ার অষ্টম বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনকারী দেশ বাংলাদেশ। বর্তমান হারে উৎপাদন অব্যাহত থাকলে এ গ্যাসের মজুত পাঁচ বছরেরও কম সময়ে শেষ হয়ে যেতে পারে। আর ২০২৫ সাল নাগাদ গৃহস্থালির গ্যাসের সরবরাহ ২৫ শতাংশ হ্রাস পাবে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রকি মাউন্টেন ইনস্টিটিউটের (আরএমআই) ‘বাংলাদেশ অ্যাট এন এনার্জি ক্রসরোডস’ শীর্ষক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান উৎস গ্যাস। আর গ্যাসের ওপর অব্যাহত নির্ভরশীলতার কারণে জলবায়ু, পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পড়তে পারে দেশটি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের শতাধিক দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস ৩০ শতাংশ কমাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে।

বাংলাদেশ যে পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন করে, তার চেয়ে বেশি খরচ করে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ফলে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা ক্রমাগত বাড়ছে।

২০২০ সালে বাংলাদেশ ৪৩ লাখ মেট্রিক টনের বেশি এলএনজি আমদানি করেছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। গ্যাসের চাহিদা বাড়ায় ২০১৯ সালের তুলনায় ২০৪০ সাল নাগাদ এলএনজি আমদানি ৫০ গুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে। ২০৪০ সাল নাগাদ আমদানিকৃত এলএনজি থেকে বছরে ৩৯০-৯০০ মেট্রিক টন কার্বন ডাই–অক্সাইড নির্গমন হতে পারে; যা ১০০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট নির্গমনের চেয়েও বেশি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘ন্যাশনাল প্ল্যান ফর রিডিউসিং শর্ট-লিভড ক্লাইমেট পপুলেশনস ইন ২০১৮’ অনুযায়ী, বাংলাদেশ মিথেন হ্রাস করতে নিজের ইচ্ছার কথা জানিয়েছিল। আবার, ২০২১ সালে ‘মেজর ইকোনমিস ফোরাম অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লাইমেট’-এ যুগান্তকারী মিথেন প্রতিশ্রুতিতে সমর্থন দিলেও এখনো তাতে অংশগ্রহণ করেনি বাংলাদেশ। সম্প্রতি সরকার এলএনজি–নির্ভরতা বৃদ্ধির যে পরিকল্পনা গ্রহণ করছে, তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির সঙ্গে বেমানান। মিথেনের একটি প্রধান উৎস এলএনজি। আগামী ২০ বছরের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে মিথেন গ্যাসটি কার্বন ডাই–অক্সাইডের তুলনায় ৮৪ গুণ বেশি ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রতিবেদনটি মূল্যায়ন করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্লেষণ থেকে এটা স্পষ্ট যে গ্যাস—প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি, যে আকারেই হোক, এটি অর্থনীতির পাশাপাশি পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের ওপর বহুমাত্রিক বিরূপ প্রভাব ফেলবেই। গ্যাস ও এলএনজিকে জ্বালানির ‘বিশুদ্ধতর’ বা ‘আপৎকালীন’ ধরন হিসেবে চিত্রিত করা হলেও এ বিষয়ে আসল সত্যটা বলা হয় না।

আরএমআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহযোগী ও প্রতিবেদনটির অন্যতম লেখক ফ্রান্সেস রিউল্যান্ড বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিগত যেকোনো সময়ের চেয়ে মিথেন অনেক বেশি মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ হলো, মিথেন নির্গমন জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া জীবাশ্ম জ্বালানি–নির্ভরতার ঝুঁকি অনেক বেশি ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে।

ফ্রান্সেস রিউল্যান্ড আরও বলেন, গ্যাসের ওপর নির্ভরতার সত্যিকার ক্ষতিকর দিকগুলো অনুধাবন করা জরুরি। অনেক দেশ আজকাল ক্লিন এনার্জির (নবায়নযোগ্য জ্বালানি) দিকে আগ্রহী হয়ে উঠছে। এটি জলবায়ু ও অর্থনীতির জন্য বেশি নিরাপদ। এ ছাড়া জনগণের স্বাস্থ্যের জন্যও অনুকূল।

প্রতিবেদনটির বিশ্লেষণ থেকে জানা গেছে, ২০৪০ সাল নাগাদ এলএনজি উৎপাদন ও পরিবহনের কারণে সৃষ্ট কার্বন ডাই–অক্সাইডের নির্গমন বাংলাদেশে এ গ্যাসের মোট নির্গমনের ৯৫ শতাংশের জন্য দায়ী থাকবে। দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন কমে যাওয়া ও এলএনজি আমদানির ওপর বেশি নির্ভরতার কারণে ঘটবে এটি।

প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে জলবায়ুর পরিবর্তন রোধে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছে। এ চুক্তি অনুমোদনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

আরএমআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, মিথেন গ্যাস নিয়ন্ত্রণ ও হ্রাস করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সক্ষমতার ওপর নির্ভর করবে দেশটির সরকার নির্ধারিত জ্বালানি, জলবায়ু এবং পরিবেশগত লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে কি না।

২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ‘জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান’ (আইএনডিসি) প্রকাশ করে; যেখানে বিদ্যুৎ, পরিবহন ও শিল্প খাতে কার্বন হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা উল্লেখ করা হয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানি বিতরণের ব্যবস্থাসহ মিথেনের পাঁচটি প্রধান উৎস লক্ষ্য করে পরিকল্পনাটি করা হয়েছে। পরিকল্পনায় ২০৩০ সালের মধ্যে মিথেনের নির্গমন ১৭ শতাংশ ও ব্ল্যাক কার্বনের নির্গমন ৪০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রাকৃতিক গ্যাস ও জীবাশ্ম জ্বালানি–নির্ভরতা থেকে সরে আসা একটি দেশের স্বাস্থ্য ও জনকল্যাণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই সবচেয়ে খারাপ বায়ুদূষণের শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে অবস্থান করছে। বায়ুদূষণের কারণে স্বাস্থ্যের ক্ষতি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।