গণজাগরণের বর্ষপূর্তি আজ
স্বাধীনতার ৪২ বছর পর গত ডিসেম্বরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে একজন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর হয়, কলঙ্কমুক্তির পথে হাঁটা শুরু করে জাতি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে এই বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। শাহবাগে তরুণ প্রজন্মের গণজাগরণ এই বিচারকে এগিয়ে নিয়েছিল। আজ ৫ ফেব্রুয়ারি সেই আন্দোলনের প্রথম বর্ষপূর্তি।
গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। সেই রায় প্রত্যাখ্যান করে শাহবাগে আন্দোলন গড়ে তোলে তরুণ প্রজন্ম। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও আন্দোলিত হয়েছিলেন শাহবাগের সঙ্গে।
শাহবাগের আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন দেশের বিভিন্ন শ্রেণী, পেশা ও বয়সের লোক। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে ১২ ফেব্রুয়ারি বিকেল চারটায় তিন মিনিটের জন্য স্তব্ধ কর্মসূচি পালিত হয় শাহবাগে। ১৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় কোটি শিখায় প্রজ্বলিত হয়ে ওঠে শাহবাগসহ সারা দেশ। ১৫ ফেব্রুয়ারির সমাবেশ থেকে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবি জানানো হয়। ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ব্লগার ও স্থপতি রাজীবের জানাজায় উপস্থিত হাজার হাজার লোক কফিন ছুঁয়ে রাজপথে থাকার শপথ নেন।
ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত শাহবাগে ধারাবাহিকভাবে নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। তবে কর্মসূচির দীর্ঘসূত্রতায় এবং নানা দাবি যুক্ত হওয়ায় একসময়ে শাহবাগে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি কমতে থাকে। তবে এই আন্দোলনের কারণেই দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ রেখে গত বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) সংশোধন বিল, ২০১৩ জাতীয় সংসদে পাস হয়। এর আগে আইনে দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল করার সুযোগ ছিল না। সংসদে আইন পাস হওয়ার পর গত ৩ মার্চ কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানির পর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগ কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় দেন। গত বছরের ডিসেম্বরে সেই রায় কার্যকর হয়।
গণজাগরণের এই আন্দোলনের মূল্যায়ন সম্পর্কে জানতে চাইলে শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১৩ সালের গণজাগরণ হয়েছিল সময়ের প্রয়োজনে। ষাটের দশকে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও আশির দশকে এরশাদবিরোধীে আন্দোলনের মতো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতেই ওই আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। এর পেছনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণের একটি হচ্ছে, আমরা একাত্তরকে ভুলিনি।’
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘সাত বা দশ দিন পর এই আন্দোলন শেষ হতে পারত। গণজাগরণ বারবার ফিরে আসার ঘোষণা দিতে পারত। সেটি হয়নি বলেই নানা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এসে গেছে। তবে এই আন্দোলন আমাদের শিখিয়েছে, আমরা একাত্তরের মতোই বারবার জাগতে পারি।’
৫ ফেব্রুয়ারির গণজাগরণের বার্ষিকী উপলক্ষে গণজাগরণ মঞ্চ তিন দিনের কর্মসূচি নিয়েছে। মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সাতটায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে এবং নয়টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানো হবে। এরপর বেলা তিনটায় শাহবাগে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে তিন দিনের অনুষ্ঠান উদ্বোধন হবে। গণজাগরণের এই আন্দোলনের মূল্যায়ন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন ছিল গণজাগরণ। এই আন্দোলনের কারণেই আইন সংশোধন হয়েছে। কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে।’