কোটি টাকা নিয়ে সমবায় সমিতির কর্মকর্তারা উধাও
বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় গ্রাহকদের কাছ থেকে অবৈধভাবে আমানত হিসেবে করে প্রায় কোটি টাকা সংগ্রহ করে উধাও হয়ে গেছেন ‘অ্যাচিভমেন্ট সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমানত হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন শতাধিক গ্রাহক।
ভুক্তভোগী গ্রাহক ও উপজেলা সমবায় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে উপজেলা সমবায় কার্যালয় থেকে প্রতিষ্ঠানটি নিবন্ধন নেয়। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয় উপজেলার কলাবাড়িয়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্য মোস্তফা সরদার ও তাঁর ছেলে মো. আকতারুজ্জামানকে। মোস্তফা সরদারের ছোট ভাই ফজলুল হক সরদারকে ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়। এ ছাড়া তাঁর পুত্রবধূ (আকতারুজ্জামানের স্ত্রী) মাহফুজা খানমসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। গৌরনদী বন্দরের মণ্ডল প্লাজা নামের একটি ভবন ভাড়া নিয়ে দামী আসবাব দিয়ে সাজানো হয় প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়টি। এরপর প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন মেয়াদি স্কিমের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ শুরু করে। শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা সংগ্রহের পর গত মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে তালা দিয়ে কর্মকর্তারা উধাও হয়ে যান।
প্রতারণার শিকার গৌরনদীর চর রমজানপুর গ্রামের জামির হোসেন, নাসির হাওলাদার, কাঞ্চন কাজীসহ বেশ কয়েকজন গ্রাহক বলেন, লাখে প্রতি মাসে আড়াই হাজার টাকা মুনাফা দেওয়ার কথা বলে প্রতিষ্ঠানটি আমানত সংগ্রহ করে এবং তিন বছরে দ্বিগুণ লাভ দেওয়ার কথা বলে প্রতিষ্ঠানটি ডিপিএস স্কিম চালু করে। অধিক মুনাফার লোভ দেখানোয় তাঁরা আকৃষ্ট হন এবং আমানত জমা দেন। এখন তাঁরা সবই হারিয়েছেন।
প্রতারণার শিকার এক নারী গ্রাহক বলেন, তিনি ওই প্রতিষ্ঠানে দুই লাখ টাকা জমা দেন। ওই টাকা খোয়া যাওয়ায় এখন তাঁর সংসার ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। প্রতারণার শিকার আরও বেশ কয়েকজন নারী তাঁদের সাংসারিক অশান্তির কথা জানান। টাকা হারানোর কারণে একজনকে তাঁর স্বামী বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন।
অভিযোগের ব্যাপারে মুঠোফোনে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোস্তফা সরদার ও মো. আকতারুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা কোনো কথা বলতে রাজি হননি। গৌরনদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে তাঁরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। পুলিশ প্রতিষ্ঠানটিকে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা এস এম ফরিদ উদ্দিন বলেন, প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণ অবৈধভাবে আমানাত সংগ্রহ করেছে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ আলম খান বলেন, প্রতারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে বলা হয়েছে।