কাতারে কোরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশিদের জয়জয়কার
আধুনিক কাতারের স্থপতি শেখ জাসেম বিন মুহাম্মদ আলথানির নামে কাতারে প্রতিবছর সরকারিভাবে জাতীয় পবিত্র কোরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এ বছর অনুষ্ঠিত কোরআন প্রতিযোগিতায় তিন শাখার মধ্যে বিদেশিদের জন্য নির্ধারিত দুই শাখায় প্রথম স্থান অর্জন করেছে বাংলাদেশি দুজন হাফেজ। তাদের মধ্যে একটি শাখায় প্রথম হয়েছে ১৪ বছর বয়সী বাংলাদেশি কিশোর উসামা। অন্য শাখায় প্রথম হয়েছেন বাংলাদেশি তরুণী আয়েশা।
কাতারে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এ প্রতিযোগিতায় বয়স কিংবা নারী-পুরুষের জন্য আলাদা শাখা থাকে না। এ কারণে এ দুই শাখায় অংশ নিয়েছেন কাতারে বসবাসরত আরব ও অনারব বিভিন্ন দেশের নানা বয়সের হাফেজ নারী ও পুরুষেরা। আর তাঁদের সবাইকে পেছনে ফেলে দুটি শাখায়ই প্রথম স্থান জয় করল বাংলাদেশি হাফেজরা। প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত কাতারের ধর্মমন্ত্রী ও সুধীজনেরা বাংলাদেশিদের এমন জয়জয়কার দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। কাতারের ধর্মমন্ত্রী বলেন, পবিত্র কোরআন মুখস্থবিদ্যায় বাংলাদেশিদের অগ্রযাত্রা প্রশংসনীয়।
কাতারে মর্যাদাপূর্ণ এ প্রতিযোগিতায় দুটি শাখায় বাংলাদেশিদের প্রথম হওয়ার খবরে আনন্দিত কাতার প্রবাসী বাংলাদেশিরাও। কাতারের ধর্ম মন্ত্রণালয় চলতি রমজানের প্রথম সপ্তাহে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল।
কাতারের জাতীয় মসজিদে সপ্তাহব্যাপী তিনটি ধাপে প্রতিযোগিতা শেষে ৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় রাজধানী দোহার শেরাটন হোটেলে আয়োজিত এক জমকালো অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানে কাতারের ধর্মমন্ত্রী গানেম বিন শাহিন আলগানেম বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার সনদ ও অর্থ তুলে দেন।
কাতারে শেখ জাসেম বিন মুহাম্মদ আলথানি কোরআন প্রতিযোগিতার এবার ছিল ২৭তম আসর। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রতিযোগিতার আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান নাসের ইউসুফ আলসুলাইতি বলেন, ‘করোনার কারণে দুই বছর বন্ধ থাকার পর আবারও এ প্রতিযোগিতা শুরু করতে পেরেছি।’ এবারের প্রতিযোগিতায় অংশ নেন প্রায় দেড় হাজার প্রতিযোগী। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মোট ১২ লাখ কাতারি রিয়াল পুরস্কার হিসেবে তুলে দেওয়া হয়।
এ বছরের বিশেষ শাখায় প্রথম স্থান অর্জনকারী বাংলাদেশি তরুণী আয়েশার বাবার নাম উমর ফারুক। তাঁর বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নে। ১৯৯৫ সাল থেকে তিনি কাতারে বাস করছেন। বর্তমানে আজিজিয়া এলাকায় একটি মসজিদে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
বিশেষ বিভাগে আয়েশা প্রথম হওয়ায় পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন এক লাখ কাতারি রিয়াল। এর আগে আরও পাঁচবার পুরস্কার পেয়েছেন আয়েশা। ২০১৫ সালেও প্রথম হয়েছিলেন তিনি। আয়েশার বোন আজিজা এবার অন্য আরেকটি শাখায় পঞ্চম স্থান অধিকার করেছেন। তিনি পেয়েছেন ৫০ হাজার কাতারি রিয়াল। অনুষ্ঠানে দুই মেয়ের পক্ষে বাবা ওমর ফারুক কাতারের ধর্মমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন।
আয়েশা ও আজিজার বাবা ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওরা বাসায় কোরআন মুখস্থ করেছে। আমি ও আমার স্ত্রী ওদের শিক্ষাদান করেছি। আমরা ওদের এমন অর্জনে আনন্দিত।’
আরেক শাখায় প্রথম স্থান অর্জনকারী উসামা চৌধুরীর বয়স ১৪ বছর। সিলেটের শাহপরান থানায় খাদিমপাড়ায় তার বাড়ি। উসামার বাবা মাওলানা শিহাবুদ্দীন তিন বছর আগে কাতারে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। তিনিও কাতারে ইমাম হিসেবে কর্মরত ছিলেন। উসামার জন্ম কাতারে। সে কাতারের একটি স্কুলে নবম শ্রেণির ছাত্র । উসামার ফুফাতো ভাই ও ভগ্নিপতি সৈয়দ নাবিল প্রথম আলোকে জানান, বাবার কাছেই উসামা পবিত্র কোরআন মুখস্থ করেছিল।
উসামা প্রথম আলোকে বলে, ‘পুরস্কার নিতে মঞ্চে উঠে বাবার কথা মনে পড়ছিল। আজ তিনি বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতেন।’