২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে জনগণের সহায়তা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

জাতীয় সংসদ ভবন
ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে জনগণের সহায়তা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বিয়েশাদির অনুষ্ঠান না করা, জনসমাগম যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা, পর্যটনে না যাওয়া, অযথা বাইরে ঘোরাঘুরি না করা এবং সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে শোকপ্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এ আহ্বান জানান। চলমান সংসদের সরকারদলীয় সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুতে ওই শোকপ্রস্তাব আনা হয়। পাশাপাশি দেশের বিশিষ্টজনদের মৃত্যুতেও সংসদে শোক প্রকাশ করা হয়। রেওয়াজ অনুযায়ী, চলমান সংসদের কোনো সদস্যের মৃত্যুর পরের অধিবেশনের প্রথম বৈঠক শোক প্রকাশের পর মুলতবি করা হয়। মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজকের বৈঠকের অন্যান্য কার্যক্রম মুলতবি করা হয়।

মহামারির মধ্যেও সংবিধানের নিয়ম রক্ষায় আজ বেলা ১১টায় শুরু হয় চলতি সংসদের দ্বাদশ অধিবেশন। সাংসদেরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে অধিবেশনে যোগ দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু আবার বিশ্বব্যাপী প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশেও কিছুদিন ধরে হঠাৎ দ্রুত সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেকে হয়তো মনে করছে, যেহেতু টিকা নিয়েছেন, আর কিছু হবে না। স্বাস্থ্যবিধি মানা বন্ধ হয়েছে। যত বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছে, সেখানে অনেকে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে, যারা পর্যটনে গেছে, সেখানেও আক্রান্ত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, প্রথমে যেভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল সেভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ইতিমধ্যে কিছু নির্দেশনা দিয়েছি।

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের ১৮ দফার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আবার ধীরে ধীরে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার চেষ্টা করছে। সে জন্য জনগণের সহায়তা দরকার। সেই সঙ্গে সব সময় মাস্ক পরা, গরম পানির ভাপ নেওয়া ও নাকে শর্ষের তেল দেওয়ার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।

মাহমুদ উস সামাদের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, এই সংসদের অনেক সদস্যকে হারাতে হয়েছে, এটা দুর্ভাগ্যজনক। মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী একজন ভালো সংগঠক ছিলেন। তাঁর মধ্যে মানুষের জন্য কাজ করার আগ্রহ ছিল। কয়েক দিন আগেও তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে, তিনি সব সময় সক্রিয় ছিলেন। চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা নিতে না নিতেই চলে গেলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ফাইল ছবি

বিএনপির প্রয়াত নেতা মওদুদ আহমদ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মওদুদ আহমদ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আইনজীবী ছিলেন বলে লিখেছেন। আসলে তিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার কোনো অ্যাপয়েন্টেড আইনজীবী ছিলেন না। তিনি ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে ঘুরতেন। বঙ্গবন্ধুর পিএসের সঙ্গে ঘুরতেন। বিশেষ করে ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মওদুদ আহমদ অনেক লেখা মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখেছেন। রাজনীতিতে তাঁর বারবার দলবদল করার অভ্যাস ছিল। তিনি ট্যালেন্টেড মানুষ ছিলেন। কিন্তু দেশপ্রেম কাজে লাগালে অনেক কিছু দিতে পারতেন।

অন্যদের মধ্যে সরকারি দলের সাংসদ শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ফারুক খান, নুরুল ইসলাম নাহিদ, পীর ফজলুর রহমান, আবদুস শহীদ, নুরুল ইসলাম, বিএনপির হারুনুর রশীদ প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।

অধিবেশনের শুরুতে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী চলতি অধিবেশনের সভাপতিমণ্ডলী মনোনয়ন করেন। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা হলেন আবদুল কুদ্দুস, মৃণাল কান্তি দাশ, নজরুল ইসলাম, মুজিবুল হক ও শাহাদারা মান্নান। স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে তাঁদের মধ্যে অগ্রবর্তীজন অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবেন।
সভাপতিমণ্ডলীর মনোনয়নের পর কুয়েতের আদালতে নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হওয়ায় লক্ষ্মীপুর-২ থেকে নির্বাচিত সাংসদ শহিদ ইসলাম পাপুলের সংসদ সদস্য পদ বাতিল হওয়ার বিষয়টি জাতীয় সংসদকে অবহিত করেন স্পিকার।

পরে স্পিকার শোকপ্রস্তাব উত্থাপন করেন। চলতি সংসদের সদস্য সিলেট-৩ আসনের মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আমানউল্লাহ, সাবেক সাংসদ তোয়াবুর রহিম, আবদুল মজিদ মণ্ডল, মুনসুর আহমেদ ও মওদুদ আহমদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়।

এ ছাড়া দৈনিক জনকণ্ঠের সম্পাদক আতিকউল্লাহ খান মাসুদ, সিকদার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদার, ভাষাসৈনিক আলী তাহের মজুমদার, বিশিষ্ট লেখক ও প্রাবন্ধিক সৈয়দ আবুল মকসুদ, শাহীন রেজা নূর, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবুল হাসনাত, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, সাবেক বিচারপতি আবদুল হাই, সংসদ সদস্য মহিবুর রহমান মানিকের মা জাহান আরা চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ বি এম আবদুল্লাহর স্ত্রী মাহমুদা বেগম, অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান, অভিনেতা মুজিবুর রহমান দিলু ও নটর ডেম কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ফাদার জে এস পিশোতোর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়।

এ ছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশ-বিদেশে যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের মৃত্যুতেও শোক প্রকাশ করা হয়।