দেশের প্রতিটি জেলার সরকারি হাসপাতালে ৩০ শয্যার ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) স্থাপনের বিষয়ে তিন বছর আগে একটি রিট হয়েছিল। সেই রিটের শুনানিতে আজ রোববার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশে হাইকোর্ট বলেছেন, আইসিইউ ইস্যুটি ২০১৮ সালে নিয়ে এসেছিলেন রিট আবেদনকারীর আইনজীবী (বশির আহমেদ)। তখন কোভিড বলে কিছু ছিল না। তখন থেকে আইসিইউ স্থাপনের বিষয়টি দ্রুত বাস্তবায়ন করা গেলে করোনাকালে যে সংকট মোকাবিলা করতে হলো, সেটি হয়তো করতে হতো না। সেসময় ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবণা)দেখিয়ে দেখিয়ে ৩৫টি জেলা না কয়টি জেলায় করছি, করেছেন-এই করতে করতে কোভিড চলে এসেছে।
তিন বছর আগের ওই রিটের ধারাবাহিকতায় নির্দেশনা বাস্তবায়ন অগ্রগতিবিষয়ক শুনানিতে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব কথা বলেছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘আপনারা বলেন যে আইসিইউতে লোকবল নেই। লোকবল সৃষ্টি করেন। আইসিইউর প্রশিক্ষণ দেন।
আইসিইউর লোককে প্রশিক্ষণ দিয়ে অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দেন কেন? এটি করেন কেন? আইসিইউকে আলাদা বিভাগ হিসেবে রাখেন। যাঁরা আইসিইউতে কাজ করবেন, তাঁরা শুধু আইসিইউতেই বদলি হবেন। অন্য কোথাও যাতে যেতে না পারেন। এটি এক দিনের বিষয় নয়। এটি ২০১৮ সাল থেকে বলে আসছি।’
‘দ্য মেডিকেল প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ (রেগুলেশন) অধ্যাদেশ-১৯৮২’ যথাযথভাবে অনুসরণের নির্দেশনা চেয়ে হিউম্যান রাইটস ল ইয়ার্স অ্যান্ড সিকিউরিং এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশের পক্ষে সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ মো. শাহ আলম ২০১৮ সালের জুনে ওই রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ২৪ জুলাই হাইকোর্ট রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন। এরপর হাইকোর্ট বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফি (ইউজার ফি) নির্ধারণ এবং ওই অধ্যাদেশের বিধান যুগোপযোগী করে নতুন আইন প্রণয়নের অগ্রগতি জানাতে বলেন। দেশের বেসরকারি ক্লিনিক বা হাসপাতাল ল্যাবরেটরি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরীক্ষাসহ চিকিৎসাসেবাবিষয়ক মূল্যতালিকা ও ফি সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল ও ক্লিনিকের পাবলিক প্লেসে (প্রকাশ্য জায়গায়) টানাতেও বলা হয়।
ওই রিটের ধারাবাহিকতায় স্বাস্থ্যসেবায় অব্যবস্থাপনা নিয়ে রোগীদের অভিযোগ ও হাসপাতাল তদারকির জন্য হেলথ রেগুলেটরি কমিশন গঠনের নির্দেশনা চেয়ে গত বছর সম্পূরক আবেদন করেন রিট আবেদনকারী। গত বছরের ১৩ অক্টোবর হাইকোর্ট এ বিষয়ে রুল দেন। চলতি বছরের শুরুতে এক প্রতিবেদনে রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, দেশের প্রতিটি জেলা সদর হাসপাতালে পর্যায়ক্রমে ১০ শয্যার ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) স্থাপনের পরিকল্পনা সরকারের আছে। কিন্তু এতসংখ্যক আইসিইউ পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত দক্ষ আইসিইউ জনবলের সংকট থাকায় তা বাস্তবায়নে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন। এ বিষয়ে কার্যক্রম চলমান আছে। এরপর শুনানি নিয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিষয়ে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি শুনানির জন্য ওঠে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল কালীপদ মৃধা শুনানি করেন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী বশির আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষের সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আদালত চার সপ্তাহ সময় দিয়ে নির্দেশনা বাস্তবায়ন বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন।