কনকচাঁপা

কনকচাঁপা। ইউএনডিপি অফিস প্রাঙ্গণ, রাজবাড়ি রোড, রাঙামাটি থেকে ছবিটি তুলেছেন লেখক
কনকচাঁপা। ইউএনডিপি অফিস প্রাঙ্গণ, রাজবাড়ি রোড, রাঙামাটি থেকে ছবিটি তুলেছেন লেখক

কনকচাঁপাকে নিয়ে দেবী বউদি (নিসর্গবিদ দ্বিজেন শর্মার স্ত্রী) এক চমৎকার স্মৃতিচারণা করলেন। দ্বিজেনদা একদিন বললেন, ‘আজ আমাদের কন্যাদান করতে হবে। কনকচাঁপাকে আজ দিয়ে দিতে হবে।’ কনকচাঁপা দ্বিজেনদা বা দেবী বউদির কন্যা নয়, কিন্তু কন্যার মতোই আপন। কনকচাঁপাকে যত্ন করে বড় করে তুলেছেন। সেই কনকচাঁপাকে লাগানো হলো ঢাকার রমনা পার্কে। রমনা পার্কে একটি দুর্লভ ফুলগাছের সংযুক্তি হলো। দিনে দিনে সেই কনকচাঁপা বড় হলো। যৌবনে পা দিল এবং একদিন গাছ ভরে সোনারং ফুল ফুটল।
প্রকৃতিরসিকেরা সে সংবাদ দিলেন। তবে আমার সৌভাগ্য হলো না সালংকার সেই কনকচাঁপাকে দেখার। অবশেষে পয়লা ডিসেম্বরের শেষে সেই শত ফুলভারনত কনকচাঁপাকে দেখলাম রাঙামাটি রাজবাড়ি প্রাঙ্গণে, ইউএনডিপি অফিসের আঙিনায়। শীতের শিশির মেখে চমৎকার ফুলে ভরে আছে গাছটা। ফুলের সুমিষ্ট সৌরভে গাছের চারপাশ সুরভিত।
কনকচাঁপার হিন্দি নাম রামধনচাঁপা, তেলেগু ভাষায় সোনারি, ইংরেজি নাম Golden Champak, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Ochnasquamosa, পরিবার ওচনাসিওয়ি। এটি এ দেশে এক দুর্লভ গাছ। রাঙামাটি রাজবাড়ি রোডে ইউএনডিপি অফিসের মধ্যে একটি পুরোনো ও বড় কনকচাঁপার গাছ আছে। গুল্ম প্রকৃতির গাছ উচ্চতায় ২ দশমিক ৫ মিটার পর্যন্ত হয়। ফুল ফুটলে অনেক সুন্দর দেখায়। শীতে পাতা ঝরে যায় ও ফেব্রুয়ারি-মার্চে নতুন পাতা আসে। নতুন পাতা সবুজ থাকে না, বাদামি বা লেবুর রঙের পর ধীরে ধীরে চকচকে সবুজ হয়ে যায়। বসন্তকালে, বিশেষ করে ফেব্রুয়ারি মাসে থোকা ধরে গাছের ডাল ভরে ফুল ফোটে। ফুলের রং সোনার মতো উজ্জ্বল হলুদ, সুঘ্রাণযুক্ত। ফুল ফোটার সময় নতুন পাতা ছাড়ে। ফুলের বৃতি সবুজাভ, কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা লালচে হতে শুরু করে। ফুলের পুংকেশর হলুদ, পরাগধানী গাঢ় হলুদ। কখনো কখনো জুন মাসে দ্বিতীয় দফায় ফুল ফোটে। ফল প্রায় পাঁচ সেন্টিমিটার লম্বা। ফলের রং সবুজ থাকে, কিন্তু পাকার সঙ্গে সঙ্গে তা মেরুন ও শেষে কালো হয়ে যায়।
কনকচাঁপা কুমারীদের ফুল। অনেক হিন্দু কুমারী মেয়ে কনকচাঁপা ফুল দিয়ে জ্যৈষ্ঠ মাসে চাঁপা চন্দনব্রত পালন করে। তারা চৌষট্টিটি কনকচাঁপা ফুল তুলে শ্বেতচন্দন মাখিয়ে শুকিয়ে রেখে দেয়। পরে দুধ দিয়ে তাকে স্নান করায়। এরপর কনকচাঁপা ফুলে ঘি মধু মাখিয়ে তা দিয়ে শিবের পূজা করে। সাঁওতালেরা কনকচাঁপার শিকড় সাপে কামড়ের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করে। শাখাকলম বা কাটিং ও বীজ দ্বারা কনকচাঁপার চারা তৈরি করা যায়।